অনলাইন ডেস্ক: দ্বারপ্রান্তে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আজ সকাল ৮টায় শেষ হবে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার কার্যক্রম। এরপরই শুরু হবে ভোটগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এরই মধ্যে ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৮টায় প্রচার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রার্থী জনসভা, পথসভা, মিছিল বা শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারবেন না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)-এর ৭৮ ধারায় নির্বাচনে প্রচারের সময়সীমা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা এবং ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচনি এলাকায় কোনো জনসভা আহ্বান এবং অন্য কেউ জনসভার আয়োজন করলে সেখানে অংশ নেওয়া যাবে না। এমনকি মিছিল, শোভাযাত্রা বা এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন বা অংশগ্রহণ কোনোটিই করা যাবে না।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই ও আপিল শুনানি শেষে গত ১৮ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয় ইসি। ওই দিন থেকে প্রচার শুরু করেন প্রার্থীরা। ইসির বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত টানা ১৮ দিন প্রচারের সুযোগ পেয়েছেন প্রার্থীরা।
২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ : সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে নওগাঁ-২ আসনের একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে আসনটির ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। ফলে ৭ জানুয়ারি ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন।
মোট ভোটার প্রায় ১২ কোটি : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা চূড়ান্ত করে তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ৭৪১ জন। নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৪৯ জন। এবারের তালিকায় নতুন ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৫৪ লাখ। এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশে ভোটারের সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ১১ লাখ এবং নবম জাতীয় নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য এবার চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১৪৮টি। ওইসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪টি।
৬ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে যান চলাচল বন্ধ : নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ৬ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে। মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে ভোটারদের চলাচলের সুবিধার্থে প্রাইভেটকার ও গণপরিবহনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে। ইসির অনুমোদনপ্রাপ্ত মোটরসাইকেল ও যান চলাচল এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
৯৩ শতাংশ কেন্দ্রে ব্যালট যাবে সকালে : সংসদ নির্বাচনে ৯৩ শতাংশ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে ভোটের দিন সকালে। আর সাত শতাংশ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে ভোটের আগের দিন।
বৃহস্পতিবার এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি), যা সংসদ নির্বাচনের সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথম। ইতিমধ্যে সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশনাও পাঠিয়েছেন ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪২ হাজার ২৫টি। এর মধ্যে ভোটের দিন সকালে ৩৯ হাজার ৬১টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। অর্থাৎ ৯২ দশমিক ৯৫ শতাংশ বা ৯৩ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে ভোটের দিন সকালে। আর ২ হাজার ৯৬৪ বা সাত শতাংশ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে ভোটের আগের দিন। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের রাতে কারচুপি রোধ করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য জেলা, উপকূলীয় এলাকা, দ্বীপ, চর অঞ্চল, নদী পরিবেষ্টিত দুর্গম এলাকা বিবেচনায় ২ হাজার ৯৬৪টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের পূর্বের দিন নির্বাচনি মালামালসহ ব্যালট পেপার প্রেরণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
৫৮৯টি শোকজ : এবারের নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক শোকজ, তলব, সতর্ক ও জরিমানার পরও প্রার্থীদের বাগে আনতে পারছে না ইসি। গতকালও কয়েকজন প্রার্থী ও তাদের সমর্থককে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সমর্থকদের এ পর্যন্ত ৫৮৯টি শোকজ ও তলব নোটিস দিয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছাবে। অবশ্য চার হাজারেরও বেশি দুর্গম ভোটকেন্দ্রে যাতায়াত পথ বিবেচনায় আগের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে গত বুধবার নির্বাচনি মাঠের নিরাপত্তায় মাঠে নেমেছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর মাঠে নামেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। তারা নির্বাচনি মাঠে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছেন। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আনসার সদস্যরা আজ শুক্রবার মাঠে নামছেন। আজ থেকে মাঠে নামছেন ৬৫৩ বিচারিক হাকিমও। এর আগে ভোটের মাঠের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে ইসি। বৈঠকে বাহিনীগুলোর প্রধানরা মাঠের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুরোটাই ইসিকে অবহিত করেছেন। ইসির পক্ষ থেকেও তাদের সর্বশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বৃহস্পতিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তারা পোলিং কালেকশনের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকবেন। ওরা ভোটগ্রহণ করবেন। আরও এক লাখ স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। ৯ লাখ আমাদের প্রস্তুত আছে।আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সংস্থা-আনসার, ভিডিপি, র্যাব এবং বিজিবি সব মিলিয়ে ৮ লাখ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে আছেন। তারা মাঠে থাকবেন ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত। এটি একটি বেশ বড় কর্মযজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রায় ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট এবং জাজেস-ওনারাও কিন্তু মাঠে আছেন এবং থাকছেন।
আগামী ৭ জানুয়ারি ২৯৯ আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
Leave a Reply