শেখ রবিউল ইসলাম: উজান দেশের পানি আগ্রাসন ও ভাটির দেশ হিসাবে আমাদের পানি ব্যবস্থাপনার ভূল নীতির কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলে আজকের এই ভয়াবহ বিরাট বিপর্যয়।প্রতিবেশী দেশ ভারত যেমন তার উজানের দেশ পাকিস্তান এবং চীনের পানি আগ্রাসন নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ আমাদের এই সোনার বাংলা ভারতের পানি আগ্রাসন নীতি কার্যকরের ফলে নদ-নদী গুলো রুগ্ন,শীর্ণকায় এবং অপুষ্টিতে ভুগছে।বিষয়টা কি শুধুই তাই?
আমি কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষ,কপোতাক্ষ নদের উদাহরণ দিয়েই শুরু করি।ব্রিটিশ আমলের শেষ দশকেও কপোতাক্ষ- মাথাভাঙ্গা-চূর্ণী-ভৈরব-
জলঙ্গী- হুগলি হয়ে স্টিমার গুলো চলাচল করতো।আজও সময় পেলে কপোতাক্ষ এর স্বচ্ছ জলের পাশে নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে কল্পোলোকে ভেসে দেখি আমার সামনে দিয়ে ভেঁপু বাজিয়ে মহাকবির সাগরদাঁড়ি হয়ে স্টিমার চলে যাচ্ছে সেই সময় সর্বভারতীয়দের প্রাণের শহর কলকাতা বন্দরে স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পি সি রায়) ও কেশবপুরের বিখ্যাত গুড় বোঝাই করে নিয়ে।
৪৭ এর দেশভাগের পর উজানের আগ্রাসনের সাথে সাথে ভাটির ভুল নীতি আমাদেরকে আজ এই কঠিন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।গত ৫০ বছরে ৫০০ ফুট প্রশস্ততার কপোতাক্ষ নদ ১০০ ফুট নদে পরিণত করেছি আমরা ।গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে যেখানে কপোতাক্ষ নদের পানির গভীরতা ছিল ৭০ থেকে ৮০ ফুট সেখানে আজ শুকনো প্রায়।গত পাঁচ দশকে কপোতাক্ষ শুধুই সংকুচিত হয়েছে। এটা শুধু কপোতাক্ষ নয়, সারাদেশের অধিকাংশ নদ-নদীকে সংকুচিত করা হয়েছে।কি কারনে, কেন,কার স্বার্থে এটা করা হয়েছে আজও সে প্রশ্নের যথাযথ উত্তর আমি কারো কাছ থেকে পাইনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সেতু/কালভার্ট কর্মসূচি ২০১৬-২০১৭.
নদীতে উনাদের কাজ কি?
নদীর প্রশস্ততা ৩০০ ফুটের কম নয়। সেখানে কিভাবে তারা নদীর দুপাশ ভরাট করে ৬০ ফুটের একটি সেতু/কালভার্ট তৈরি করলো? দুর্যোগ বাড়ল না কমলো?এভাবে সারাদেশের নদ-নদী হত্যার মিছিলে তারাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে চলছে।ত্রান ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবের বাসায়ই শুধু সাড়ে তিন কোটি টাকা!! তাহলে অন্যত্র কত আছে? আমি প্রায়ই বলি,এরা শুধু রাষ্ট্রের টাকা চুরি করিনি তার সাথে পরিবেশ,প্রাণ, প্রকৃতিও ধ্বংস করে দিয়েছে।এদেশের শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের কষ্টার্জিত অর্থে এক দশকে হয়তো দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে কিন্তু উন্নয়নের নাম যে প্রাণ-প্রকৃতি এরা ধ্বংস করে দিয়েছে সেটা ১০০ বছরেও মেরামতের যোগ্য নহে।
গত তিন দশকে নদী ভরাট করে যত ব্রিজ /কালভার্ট তৈরি হয়েছে কাজ শেষে বেশিরভাগ নদী ভরাটকৃত মাটি ও কংক্রিটের আবর্জনা নদী তলদেশ হতে অপসারণ হয়নি।দেশভাগের পর হতে অদ্যবধি ৪০০/৫০০ ফুট প্রশস্ততার অনেক নদীর উপরে ১০০/১৫০ ফুটের লো-হাইট সেতু করা হয়েছে।অধিকাংশ জায়গায় সেতুর পিলার বসানো হয়েছে নদীর মাঝে পানির প্রধান প্রবাহে।
২০/৩০ বছর আগে দেশে পানি ধারণ ক্ষমতা কত ছিল আর এখন কত?কোন তথ্য কি আমাদের কাছে?প্রতিবছর উজান হতে আসা ১৫ কোটি টন পলি দেশের অভ্যন্তরে নদ নদীতে জমা হয়। কত টন বলি আমরা অপসারণ করি বা অপসারণের সুযোগ করে দিয়েছি নদ নদীকে?পূর্বাঞ্চলের বিপর্যয়ের জন্য ভারতকে দায়ী করে আমরা নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার /লুকাবার চেষ্টায় আছি ।শুধুই কি তারা দায়ী ?আমরা কি এর জন্য মোটেই দায়ী নই?আমি বলি, আজকে এই বিপর্যয়ের জন্য বহুলাংশে আমরা দায়ী।
Leave a Reply