
শাহজাহান বিশ্বাস: ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে দীর্ঘ ২২ দিন অভিযান শেষে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে জেলেরা নদীতে নেমে ইলিশ মাছ ধরা শুরু করেছে। কিন্তু গতবারের চেয়ে এবার ইলিশ মাছ তুলনামুলকভাবে অনেক কম এবং দাম বেশী হওয়ায় অনেক ক্রেতারা মাছ কিনতে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে।তবে মাছের আমদানি কম হলেও ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে আরিচা মাছের আড়ত। অন্যান্য বছর সাধারণত অভিযানের পরের দিন অনেক মাছ উঠে এবং কম দামে পদ্মার ইলিশ পাওয়া যায় এ আশায় এবারও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ এসেছে মাছ কিনতে আরিচা ঘাটের মাছের আড়তে। কিন্তুু দাম বেশী হওয়ায় শুণ্যহাতে ফিরতে হচ্ছে ক্রেতাদেরকে। এবছর এক কেজি বা তার একটু বেশী ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৪/২৫ টাকা দরে। ছোট সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি সাড়ে ৫শ টাকা থেকে শুরু করে ১৩/১৪শ টাকা দরে।

মানিকগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিসার সাইফুর রহমান বলেন, গত ৪ অক্টোবর হতে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় পদ্মা-যমুনায় মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের যৌথ অভিযান ছিল অনেক কড়াকড়ি। এ অভিযানে এ পর্যন্ত ২২ দিনে শিবালয়,হরিরামপুর,দৌলতপুর নৌ পথের পদ্মা-যমুনায় ২৮৭ টি অভিযান পরিচালনা করে ৭৭ টি মোবাইল কোর্ট করেছেন। এতে মা ইলিশ নিধনে মামলা হয়েছে ১২৩ টি এবং বিভিন্ন মেয়াদে জেলে দেওয়া হয়েছে ৭২ জনকে। একই সময়ে নিষিদ্ধ জাল পোড়ানো হয়েছে ১২৪.৩৩০ লক্ষ মিটার। যার মূল্য ৩২ লক্ষ ১ হাজার ৮২০ টাকা। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ লক্ষ ২৯৭ টাকা। এসব অভিযানে উদ্ধারকৃত ৩ দশমিক ৪৬১ মেট্রিকটন ইলিশ এলাকার বিভিন্ন এতিম খানায় ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বিগত বছর ২০ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় ৭০ টি অভিযান পরিচালনা করে ১৪ টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪.৩৫ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল ধ্বংশ করা হয়েছে। যার মূল্য ৭৯.৭৪ লক্ষ টাকা। একই সাথে .৩২ মেট্রিকটন ইলিশ মাছ জব্দ করে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করে এবং ২০ টি মামলা করে ৬ জনকে জেলে প্রেরণ করে অন্যান্যদের জরিমানা করা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষে অধিকাংশ অভিযানে পরিত্যাক্ত জাল, নৌকা ও ইলিশ জব্দের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন বলে অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করেছেন। অভিযোগ ছিল, শিবালয়, দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলার প্রায় ৬০ কিলোমিটার বিস্তৃত পদ্মা-যমুনা বক্ষে প্রত্যহ বিপুল সংখ্যক ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে দিনে ও রাতে অবৈধ কারেন্ট জালের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে ইলিশ শিকারের উৎসব চলেছে। এই কাজে প্রকৃত জেলেরা নিরব থাকলেও মৌসুমী জেলেরা বেশী তৎপর রয়েছে। ধৃত ইলিশ ক্রয়ে আগ্রহী একশ্রেণির অতিলোভী লোকজনকে নদী পাড়ে নিয়মিত ভিড় জমাতেও দেখা গেছে। অভিযানের মধ্যে শিবালয়ের আলোকদিয়া চরে প্রতি কেজি ইলিশ ১৬/১৭শ’ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছিল। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে ইলিশ শিকারী ও সুবিধাভোগীদের যেন মহোৎসব চললিছ। যমুনা নদী সিকস্তি শিবালয়ের তেওতার আলোকদিয়া গ্রামের সন্তোষ অভিযোগের সুরে বলেছেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে নদীতে একদিকে চলছে ইলিশ নিধনজজ্ঞ অপরদিকে চলছে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান।“মা ইলিশ নিধন বন্ধ ঘোষনার আগেই যদি নদী তীরবর্তী এলাকায় ও চরাঞ্চলে বিশেষভাবে তৈরী ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলো জব্দ করা যেত” তাহলে মা ইলিশ নিধন কিছুটা হলেও বন্ধ হতো বলে মনে করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রফিকুল ইসলামসহ সচেতনমহল।
এদিকে অভিয়ান শেষ হওয়ায় আরিচা মাছ বাজার ও পাটুরিয়া এবং দাশকান্দি এলাকায় প্রচুর পরিমানে ইলিশ মাছ উঠেছে। একই সাথে এলাকার সাধারণ ক্রেতারা এসব এলাকায় হুমড়ি ক্ষেয়ে পড়েছেন। বড় আকারের মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৪/২৫ শত টাকা কেজি দরে। মাছ বাজারে যেন ঈদের আনন্দ লেগেছে এরকম দেখা গেছে। কোথাও পা ফেলার সামান্য জায়গা ছিলনা। চারিদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। দামি ইলিশগুলো হাতের নাগালে আসায় সব শ্রেনীর মানুষই মাছ বাজারে এসেছেন ইলিশ কিনতে।
স্কুল শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, আড়তে এসেছিলাম ইলিম মাছ কিনতে। প্রতিকেজি সাইজের ইলিশের দাম চাইল ২৪শ টাকা যে কারণে এবার আর ইলিশ মাছ কিনা হয়নি। খালি হাতেই বাড়ি যাচ্ছি।
ক্রেতা মানিক মিয়া বলেন, প্রতিবছর এ দিনে সাধারণত ইলিশের দাম একটু কম থাকে বিধায় মাছ কিনে রাখি। কিন্তুু এ বছর অনেক দাম হওয়াওত একটা মাছও ক্রয় করেনি। এবার খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হলো।
Leave a Reply