1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন

দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি

  • সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩
  • ১৩৯ বার পড়েছেন

অনলাইন ডেস্ক: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে দেশের চার জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যেতে শুরু করেছে চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলি জমি।

সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি সবকটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর ছাতক পয়েন্টের পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পাবনায় বন্যায় গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১০০ বসতবাড়ি, কয়েকশ বিঘা আবাদি জমি, অসংখ্য গাছ-পালা এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কুড়িগ্রামে অব্যাহত বর্ষণ আর উজানের ঢলে দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে নদী তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিরাজগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে দ্রুত বাড়ছে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি। সেই সঙ্গে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়াল নদীর পানিও। এদিকে যমুনায় পানি বাড়ার ফলে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে যেতে শুরু করেছে চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলি জমি। শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩৩ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (বিপদসীমা ১২ দশমিক ৯০)। অন্যদিকে কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৭ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২২ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (বিপদসীমা ১৪ দশমিক ৮০)।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুর ইসলাম বলেন, কয়েক দিন যমুনা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে যমুনার চরাঞ্চলের নিচু এলাকার কিছু অংশের ফসলের জমিতে পানি উঠেছে। তবে এতে কৃষকের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। বন্যা আসার আগেই যেন তারা ফসলগুলো ঘরে তুলতে পারে সে বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, উজানে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন ধরেই যমুনার পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চলের নিম্নভূমিগুলো প্লাবিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। আরও কয়েক দিন যমুনার পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ : ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর ছাতক পয়েন্ট পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে ঢলের পানি। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্তত ৬টি গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্ট বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচে ও ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটারের ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে দোয়ারাবাজার সীমান্ত নদী খাসিয়ামারা দিয়ে তীব্র গতিতে ঢল নামছে। ফলে উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। ঢলের পানিতে ভাঙনে সৃষ্টি হচ্ছে কাঁচা ঘরবাড়ি। উপজেলার পশ্চিম বাংলা বাজার ও লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু সড়ক পানিতে তলিয়ে আছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে আছেন হাজারো মানুষ। স্রোতের পরে গাছ ঘরবাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে পানি কমলেও সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর, সদরগড় ও জগন্নাথপুর গ্রামের বসতভিটার সামনে এখনও পানি আছে। ফলে ঘর থেকে বের হতে পারছে না শ্রমজীবীরা।

পাবনা : যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙন তা-বে গত দুই সপ্তাহে পাবনার বেড়া উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ১০০ বসতবাড়ি এবং কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে অনেকেই নিঃস্ব-রিক্ত গৃহহারা হয়ে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টাঙিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই ক্ষত না শুকাতেই আবার গত চার দিনের ব্যবধানে চর নাগদাহ বাজার ও হাটাইল আঁড়ালিয়া নুরানি মাদরাসা সর্বনাশা যমুনা নদীর করালগ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। এতে মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ বাজারের ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছে। সেই সঙ্গে ভাঙনের হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে সরকারি বেসরকারি পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক বিস্তীর্ণ আবাদি জমিজমা ও জনবসতি। এলাকাবাসীরা জানান, গত চার দিনের ব্যবধানে চর নাগদাহ বাজারের প্রায় ২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জায়গা এবং হাটাইল-আঁড়ালিয়া নুরানি মাদরাসা আবাদি জমি, গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে।

কুড়িগ্রাম : দুধকুমার নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে অন্তত পাঁচটি গ্রামে পানি প্রবেশ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদ বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার এবং সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পাউবো কার্যালয় থেকে জানা যায়, জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলার পানি সদরের সেতু পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাড়ছে তিস্তার পানিও। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে সদরের পাঁচগাছী, যাত্রাপুর, হলোখানা ও ভোগডাঙা ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ও সাহেবের আলগা ইউনিয়ন; দুধকুমার অববাহিকার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীরঝাড় ইউনিয়ন, নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ, বল্লভের খাস, নারায়ণপুর, নুনখাওয়া ও বামনডাঙা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে প্লাবিত এলাকার পরিধি বাড়ছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছেন নদ-নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙা ইউনিয়নের মুরিয়া ও আনসার হাট এলাকায় একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

তবে পাউবো বলছে, সেটি তাদের কোনো বাঁধ নয়। একটি গ্রামীণ সড়ক। এর আগে সড়কটির ঢালু অংশে জিও ব্যাগ ফেলে সেটি রক্ষার চেষ্টা করলেও নদের পানি বাড়ায় তা উপচে গেছে জানিয়েছেন পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন। স্থানীয়রা বলছেন, বাঁধটি উপচে যাওয়ায় সেনপাড়া, ধনিটারি, নামাহাইল্লা ও তেলিপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। পানির চাপে যেকোনো সময় বাঁধটি ভেঙে যেতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে ধরলা ও দুধকুমার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বাড়বে। পূর্বাভাস অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আগামী ১৮-১৯ জুলাই বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছতে পারে। ফলে নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সুত্র: সময়ের আলো

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :