1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, সংঘাতে নয়: প্রধানমন্ত্রী

  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩
  • ৭৫ বার পড়েছেন

অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, সংঘাতে নয়। বাংলাদেশ সর্বদা শান্তিতে বিশ্বাস করে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার সবই করবে।’

সোমবার (২৯ মে) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৩ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনও সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। আমরা অস্ত্র প্রতিযোগিতা চাই না। কারণ, নারী, শিশু ও প্রতিটি পরিবার এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে। তাই তাদের এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য।’

সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে এখন বেশি কঠিন। কারণ, অশুভ শক্তি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। প্রযুক্তির সাম্প্রতিক বিকাশ ও অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অশুভ শক্তির নতুন হুমকি বাড়ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি মানুষকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রে সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু এর পাশাপাশি আমরা এটাও দেখছি যে অপশক্তিগুলোও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং মানুষের জীবনের শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। কাজেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীদের জটিল বহুমাত্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। আর এজন্য উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে শান্তিরক্ষা মিশনকে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকার বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ও বিপজ্জনক অঞ্চলে জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মিশন এলাকার পরিবেশ, আবহাওয়া ও ভূখণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক, অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করছি। সরকার শান্তিরক্ষীদের যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টে আধুনিক মাইন-প্রতিরোধী, অতর্কিত হামলা-সুরক্ষিত যানবাহন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করেছে। আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা আমরা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবো।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস। অনুষ্ঠানের শুরুতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মদানকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ ইন গ্লোবাল পিস’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

নিহত পাঁচ শান্তিরক্ষীর পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। তিনি আহত পাঁচ শান্তিরক্ষীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ইন্টারন্যাশনাল পিসকিপার জার্নাল উন্মোচন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের থিম- ‘পিস বিগিনস উইথ মি’ খুবই সময়োপযোগী। এই নীতিবাক্য নিয়ে আমরা আমাদের জাতির পিতার দেখানো পথে বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করবো এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পৃথিবী দেওয়ার চেষ্টা করবো এটাই আজ আমাদের অঙ্গীকার।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যাতে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারে সেজন্য তার সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আমি আশা করি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা তাদের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে দেশের সম্মান ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখবে।

সরকার প্রধান বলেন, আপনারা (শান্তিরক্ষীরা) সংঘাত প্রতিরোধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিত করতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। আপনাদের আন্তরিক কাজের কারণে ওই সব দেশের জনগণ আপনাদের নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়েছে। বাংলাদেশি কন্টিজেন্টের সঙ্গে যুক্ত অনেক দেশের স্থানীয় নাগরিকরা আপনাদের কাছ থেকে বাংলা সংস্কৃতি ও ভাষা শিখেছেন। আপনারা অন্যান্য দেশের সহকর্মী শান্তিরক্ষীদের সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আপনাদের পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার প্রশংসা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের ৭ হাজার ৪৩৬ শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে আর এই সংখ্যা বিশ্বব্যাপী মোতায়েন শান্তিরক্ষীদের মোট সংখ্যার প্রায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৫৭২ জন বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীও রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা জাতিসংঘের ১৪টি মিশন ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২০টি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চারটি ও বাংলাদেশ পুলিশের তিনটি দল এসব মিশনে কাজ করছে।

বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪০টি দেশে জাতিসংঘের ৬৩টি মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আরও নারী শান্তিরক্ষী পাঠানোর অনুরোধ করায় আমরা নারী শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ সুদানের আবেইতে একটি ফোর্স প্রোটেকশন ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করেছে- যেখানে মালিতে একটি কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স হিসেবে একটি মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি কোম্পানি, কঙ্গোতে একটি বিস্ফোরক অস্ত্র নিষ্পত্তি প্লাটুন এবং মধ্যাঞ্চলে একটি লেভেল-২ হাসপাতাল কন্টিনজেন্ট যুক্ত করেছে। মালিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি নতুন আর্মড ইউটিলিটি হেলিকপ্টার ইউনিট, বেস ডিফেন্স কন্টিনজেন্ট হিসেবে একটি নতুন মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি কোম্পানি এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এয়ারফিল্ড সাপোর্ট ইউনিট মোতায়েন রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ফোর্স কমান্ডার, ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার এবং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন।

জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে তারা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়া অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামেও আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি ও অবদান রাখি। বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রস্তাব পেশ করে ১৯৯৯ সালে যা সর্বসম্মতিভাবে গৃহীত হয়। তখন থেকে প্রতিবছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের ফ্ল্যাগশিপ রেজুলেশন ‘শান্তির সংস্কৃতি’ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতিসংঘ ২০০০ সালকে ‘আন্তর্জাতিক শান্তির সংস্কৃতির বছর’ ও ২০০১-২০১০ কে ‘শান্তির সংস্কৃতি ও অ-সংঘাতের দশক’ ঘোষণা করে।

তিনি বলেন, এগুলো বাংলাদেশের জাতির পিতার বৈদেশিক নীতিকেই অনুসরণ করে। তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ছিলেন  দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। যার ফলে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ‘ব্লু হেলমেট’ পরিবারের সদস্য হয়ে উঠে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে, ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ পুলিশ এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী ১৯৯৩ সালে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিগত ৩৫ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বোচ্চ সৈন্য ও পুলিশ সদস্য এই বাহিনীতে দেশের জন্য অবদান রেখে যাচ্ছে এবং এর পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আজ শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে আন্তজাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ একটি নির্ভরযোগ্য নাম।

অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ সুদান, মালি, লেবানন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও ডিআর কঙ্গোসহ বিভিন্ন দেশে মোতায়েন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন। সুত্র: বাসস।

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :