অনলাইন ডেস্ক: হাজিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অসুস্থদের সেবা দিতে এবার হজে দায়িত্ব পালন করবে দুইশ জনের মেডিকেল টিম। এই দলে রয়েছেন ১০২ জন চিকিৎসক, ৬৩ জন নার্স, ২১ জন ফার্মাসিস্ট ও ১৪ জন ওটি এবং ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট। এছাড়া এবার রাষ্ট্রীয় খরচে হজে যাচ্ছেন ২৩ জন। অন্যদিকে ৪১৯ হজযাত্রী নিয়ে প্রথম হজ ফ্লাইটের উদ্বোধন করা হচ্ছে। রোববার ভোরে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দও ছেড়ে যাওয়ার কথা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হজ ফ্লাইটের উদ্বোধন করবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। বিশেষ অতিথি থাকবেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।

এর আগে শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে হজ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, এবারের প্রথম হজ ফ্লাইট রোববার ভোর ৩টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

এ বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট এক লাখ ২২ হাজার ২২১ জন হজ পালনে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বহন করবে অর্ধেক এবং বাকি হজযাত্রীদের বহন করবে সৌদিভিত্তিক উড়োজাহাজ সংস্থা ফ্লাইনাস ও সৌদি এয়ারলাইন্স।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এবার রাষ্ট্রীয় খরচে ২৩ জন হজে যাচ্ছেন। তবে বিমান ভাড়া তাদের নিজেদের পরিশোধ করতে হবে। শনিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সরকারি খরচে হজ পালনকারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, বিমান ভাড়া ছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে পাঠানোর সম্মতি দেওয়া হলো। তবে মনোনীতদের বিমান টিকিট বাবদ এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা দিতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রীয় খরচে হজ পালনকারী ব্যক্তিরা বিমানের ফ্লাইট পাওয়া সাপেক্ষে সম্ভাব্য আগামী ১০ জুন (আগে বা পরে) সৌদি আরব যাবেন। একইভাবে বিমানের ফ্লাইট পাওয়া সাপেক্ষে আগামী ১৫ জুলাই বাংলাদেশে ফিরবেন তারা। সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী হিসেবে সরকারের সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্যে উল্লেখিত সেবা পাবেন। তারা দৈনিক ভাতা বা অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি পাবেন না, তবে খাওয়া খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা হজে যাওয়ার আগে হজ অফিস থেকে দেওয়া হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে কোরবানি খরচ বাবদ আনুমানিক এক হাজার সৌদি রিয়াল আলাদাভাবে সঙ্গে নিতে হবে।

রাষ্ট্রীয় খরচে যারা হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা হলেন, ঢাকার বড় মগবাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মোল্লা ও তার স্ত্রী আফিয়া হোসেন, রংপুরের মো. বাদশা আলমগীর, জামালপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল গফুর ও তার স্ত্রী জোবাইদা বেগম, ঢাকার শেরেবাংলা নগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুস খান, রংপুরের মো. আব্দুল কায়েম মিয়া, মাগুরা সদরের এস এম ফরিদ উজ-জামান ও তার স্ত্রী দিলশান আরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অবসরপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের গোপনীয় সহকারী মো. রাশেদুন নবী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসি মেকানিক মো. ইউসুফ আলী ও তার স্ত্রী জান্নাত আরা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আরবরিকালচারের মালী সাহেব আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংলগ্ন স্টাফ কোয়ার্টারের সখিনা আক্তার, গোপালগঞ্জের মো. এনামুল হক শেখ, গুলশানের গাজী শাহাদাৎ হোসেন, কুমিল্লার মো. নুরুল ইসলাম, রাজধানীর উত্তর আদাবরের অধ্যক্ষ (অব.) পিএম মনসুর রহমান, গাইবান্ধার মো. নুরুল হোসেন খন্দকার, ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রীর জামাল উদ্দিন মো. আকবর ভূঁইয়া, জয়পুরহাটের দেওয়ান মাহবুবার রহমান এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শাহাদাৎ শেখ।

প্রতি বছরই সরকার ২০০ থেকে ৩০০ ধর্মপ্রাণ অসচ্ছল ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় টাকায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে হজ করার সুযোগ দিয়ে থাকে। যদিও দেশের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গত বছর শুধু বিমান ভাড়া পরিশোধ সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে হজে পাঠানো হয়েছিল। তবে এবার হজের খরচ অত্যধিক বেড়ে যাওয়া ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় খরচে কাউকে হজে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের।

এদিকে হাজিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অসুস্থদের সেবা দিতে এবার হজে দায়িত্ব পালন করবে দুইশ জনের চিকিৎসক দল। এই দলে রয়েছেন ১০২ জন চিকিৎসক, ৬৩ জন নার্স, ২১ জন ফার্মাসিস্ট ও ১৪ জন ওটি এবং ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট। সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের হজ মৌসুমে সৌদি আরবে অসুস্থ বাংলাদেশি হাজিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য দুই দলে বিভক্ত করে চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেক, ওটি অ্যাসিস্টেন্টের সমন্বয়ে দুইশ সদস্যবিশিষ্ট ‘সমন্বিত হজ চিকিৎসক দল’ গঠন করে সৌদি আরবে প্রেরণ করা হবে। হজ চিকিৎসক দলের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বিমানের ফ্লাইট প্রাপ্তি সাপেক্ষে সৌদি আরব গমন করবেন এবং দায়িত্ব পালন শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দুইশ জনের চিকিৎসক দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হজে সেবা দিতে যাবেন। এদের মধ্যে ১০৯ জনের একটি দল গত ১৮ মে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে জেদ্দার উদ্দেশে দেশ ছেড়েছে। তাদের মধ্যে চিকিৎসক রয়েছেন ৫২ জন, নার্স ৩৭ জন, ফার্মাসিস্ট ১৩ জন এবং ওটি ও ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট আজন। দলটির সদস্যরা মক্কা ও মদিনায় যাত্রীদের সেবা দেবেন। দলটি ২ জুলাই পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করবে। চিকিৎসক দলের দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া। উপ-দলনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন। এছাড়া বাকি ৯৮ জনের দল আরও দুটি ব্যাচে বিভক্ত হয়ে মে এবং জুন মাসে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের সেবা দিতে যাবেন।

এই চিকিৎসক দল যেকোনো সময় হজযাত্রীদের সেবাদানে বাধ্য থাকবে। এক্ষেত্রে কোনো শিফট প্রযোজ্য নয়। এছাড়া তারা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন মর্মে বিবেচিত হবেন। চিকিৎসক দলের চিকিৎসক সদস্যরা নিজ নিজ পোশাক, বিপি মেশিন, স্টেথোস্কোপ সৌদি আরব গমনকালে অবশ্যই সঙ্গে নেবেন।

এবছর চূড়ান্ত নিবন্ধন করেও হজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন প্রায় ৪,২০০ হজযাত্রী। এর মধ্যে নিবন্ধন রিপ্লেস করেছেন (একজনের পরিবর্তে অন্যজন যাওয়া) ৩,২১০ জন। এছাড়া ৯৭০ জন নিবন্ধন বাতিল করেছেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। যারা নিবন্ধন বাতিল করেছেন তারা নিবন্ধনের অল্পকিছু টাকা কাটার পর বাকি টাকা ফেরত পাবেন।

চলতি বছর হজের খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় নয় দফা সময় বাড়িয়েও নির্ধারিত কোটা পূরণ করতে পারেনি সরকার। বারবার সময় বাড়ানোর পরও ফাঁকা থাকা প্রায় পাঁচ হাজার কোটা সৌদি সরকারকে ইতিমধ্যে ফেরত দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজ অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চূড়ান্ত নিবন্ধন করেও শেষ মুহূর্তে এসে নিবন্ধন বাতিল করেছেন ৯৭০ জন। এর মধ্যে সরকারি কোটার ১৫১ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৮১৯ জন। এসব হজযাত্রীর টাকা এখন ফেরত দেওয়া হবে। তাদের নাম বাতিল করে চূড়ান্ত তালিকা ইতোমধ্যে সৌদি সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজ কোটা পূরণ না হওয়ায় শেষের দিকে ‘রিপ্লেস কোটা’ চালু করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। যার শেষ দিন ছিল গত ৭ মে। শেষ দিনে এসে ৪৬৫টি হজ এজেন্সি তিন হাজার ২১০ হজযাত্রীকে রিপ্লেস করেছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের উপ-সচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন জানান, প্রতি বছর এ ধরনের রিপ্লেসমেন্ট হয় এবং নিবন্ধন বাতিল হয়ে থাকে। এবার সংখ্যায় একটু বেশি হওয়ায় সবার নজরে এসেছে।

তিনি বলেন, যারা নিবন্ধন বাতিল করেছেন তারা নিবন্ধনের অল্প কিছু টাকা কাটার পর বাকি টাকা ফেরত পাবেন। আর যারা রিপ্লেস করবেন তারা তো একজনের পরিবর্তে অন্যজনকে হজে পাঠাবেন। তাই তাদের জন্য টাকা ফেরতের কোনো সুযোগ নেই।

চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের নিয়ম রাখা হয়েছে। এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এরসঙ্গে যুক্ত হবে কোরবানির খরচ।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।