1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫১ অপরাহ্ন

নবীজির (সা.) বরকতময় যেসব মোজেজা

  • সর্বশেষ আপডেট : শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৮৮ বার পড়েছেন

অনলাইন ডেস্ক: প্রত্যেক নবী-রাসুলের ব্যক্তিসত্তা ও গুণাবলির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ‘মোজেজা’ তথা অলৌকিক বিষয়াদি। কিন্তু নবীজি (সা.) যেভাবে সব নবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন, তেমনিভাবে তার মুজেজার মধ্যেও পূর্ণতা ও বরকতের প্রাচুর্য ছিল। যা অন্যান্য নবী-রাসুলের মুজেজার মধ্যে এত ব্যাপকভাবে ছিল না। যেমন সামান্য খাদ্য, অল্প দুধ ও অপর্যাপ্ত পানি দ্বারা তিনি বিরাটসংখ্যক মানুষের ক্ষুধা নিবারণ, পিপাসা দূরীকরণ ও প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করেছেন আল্লাহ প্রদত্ত বরকতময় মুজেজা দ্বারা। এ ধরনের মুজেজার বহিঃপ্রকাশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হয়েছে।

হজরত জাবের (রা.) বলেন, আমরা খন্দকের দিন খাল খনন করছিলাম। কাজের মাঝে হঠাৎ একটি কঠিন শক্ত শিলাখণ্ড বের হলো, যা আমরা ভাঙতে পারছিলাম না। তখন সাহাবিরা নবীজি (সা.)-এর কাছে গিয়ে বললেন, একটি কঠিন শক্ত শিলাখণ্ড খন্দকের মধ্যে বের হয়েছে। নবীজি (সা.) বললেন, আমি আসছি। অতঃপর তিনি উঠে এলেন। তখন তাঁর পেটে পাথর বাঁধা ছিল। জাবের (রা.) বলেন, আমরা তিন দিন ধরে না খেয়ে ছিলাম। এরপর এই অবস্থায় নবীজি (সা.) শাবল হাতে নিলেন এবং আঘাত করলেন। ফলে শিলাখণ্ডটি বালুর ঢিবির মতো হয়ে গেল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দিন। আমি বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে বললাম, নবীজি (সা.)-এর এমন অবস্থা দেখেছি, যা সহ্য করা যায় না। তোমার কাছে কিছু খাবার আছে? তিনি বললেন, কিছু আটা ও একটি বকরির বাচ্চা আছে। তিনি বকরির বাচ্চা জবাই করলেন এবং আটা পিষতে লাগলেন। একপর্যায়ে গোশত পাতিলে রাখলাম এবং আল্লাহর নবীর কাছে গেলাম। এদিকে আটা গরম হচ্ছিল এবং ডেগ চুলার পাথরের ওপর ছিল। প্রায় সিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।

রাসুল (সা.)-কে বললাম, আমার কাছে অল্পকিছু খাবার আছে। আপনি এবং সঙ্গে এক-দুজন চলুন। নবীজি (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, খাবার কী পরিমাণ? আমি নবীজিকে জানালাম। তিনি বললেন, অনেক খাবার, পবিত্র খাবার। তুমি গিয়ে তোমার স্ত্রীকে বল, আমি আসার আগ পর্যন্ত গোশতের ডেগ ও রুটি যেন চুলা থেকে না নামায়। আর সাহাবিদের বললেন, সবাই জাবেরের বাড়িতে চল। অতঃপর মুহাজির ও আনসার সাহাবিরা চললেন। জাবের (রা.) তার স্ত্রীর কাছে বললেন, সর্বনাশ! নবীজি তো মুহাজির, আনসার ও অন্য সাহাবিদের নিয়ে এসেছেন! স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, নবীজি (সা.) কী আপনাকে পরিমাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন? বললাম হ্যাঁ। তা হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। অতঃপর রাসুল (সা.) বললেন, তোমরা প্রবেশ করো। ভিড় করো না। এরপর নবীজি (সা.) নিজে রুটি ও গোশত সাহাবাদের মাঝে পরিবেশন করতে শুরু করেন। খাবার বিতরণের সময় নবীজি গোশতের ডেগ ও রুটির চুলা ঢেকে রাখছিলেন। একে একে সব সাহাবিকে নবীজি রুটি ও গোশত পরিবেশন করেন। সবাই তৃপ্তি সহকারে খাবার খেলেন। তারা সংখ্যায় ছিলেন ৮০০, মতান্তরে ১ হাজার। সবাই তৃপ্তি সহকারে খাবার খাওয়ার পরও কিছু অবশিষ্ট থাকল। নবীজি বললেন, এগুলো তুমি খাও এবং মানুষকে হাদিয়া দাও। কারণ মানুষ ক্ষুধার্ত হয়েছে। (বুখারি : ৪১০১)

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, জাবের (রা.) বলেন, আমার মা কিছু খাবার রান্না করে আমাকে বললেন, রাসুল (সা.)-এর কাছে গিয়ে তাঁকে দাওয়াত দাও। অতঃপর আমি নবীজি (সা.) এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে বললাম, আমার মা কিছু খাবার রান্না করেছেন। তখন নবীজি (সা.) তাঁর সাহাবিদের বললেন, চলো! এরপর তাঁর সঙ্গে ৫০ জন আমাদের বাড়িতে গেলেন। নবীজি (সা.) বললেন, তোমরা ১০ জন করে ঘরে প্রবেশ করো। তারা খেলেন এবং তৃপ্ত হলেন। আর খাবার পূর্বের মতোই অবশিষ্ট থাকল। (আল খাসায়িসুল কুবরা : ২/৪৯)

একবার নবীজি (সা.) হজরত আবু তালহার ঘরে উম্মে সুলাইম (রা.)-এর রান্না করা কয়েকজনের খাবার দ্বারা প্রায় ১০০ মানুষকে তৃপ্তিসহকারে খাইয়েছেন। আনাস (রা.) বলেন, আবু তালহা উম্মে সুলাইমকে বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলের কথার স্বর খুব দুর্বল পেলাম। তাঁর মধ্যে ক্ষুধা অনুভব করলাম। তোমার কাছে কি কোনো কিছু আছে? জবাবে উম্মে সুলাইম বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি কয়েকটি আটার রুটি তৈরি করলেন এবং তার একটি কাপড়ে রুটিগুলো প্যাঁচিয়ে আমার কাপড়ে ঢুকিয়ে দিলেন। এরপর আমাকে আল্লাহর রাসুলের কাছে পাঠালেন। আমি তা নিয়ে রাসুলের কাছে গমন করলাম। আমি রাসুল (সা.)-কে মসজিদে বসা পেলাম এবং তাঁর সঙ্গে আরও অনেক মানুষ। আমি তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাসুল (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে কি আবু তালহা পাঠিয়েছে? আমি জি বললাম। তিনি বললেন, খাবারের জন্য? আমি জবাব দিলাম, জি। অতঃপর রাসুল (সা.) তাঁর সঙ্গে থাকা সবাইকে বললেন, চলো! আনাস (রা.) বলেন, অতঃপর তিনি চলতে লাগলেন। আমি তাঁদের সামনে চলছিলাম। চলতে চলতে এক পর্যায়ে আবু তালহার কাছে চলে এলাম। তাকে বিষয়টির সংবাদ দিলাম। তখন আবু তালহা বললেন, হে উম্মে সুলাইম! রাসুল (সা.) সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। অথচ আমাদের কাছে তাদের খাওয়ানোর মতো খাদ্য নেই। উম্মে সুলাইম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। আনাস বলেন, অতঃপর আবু তালহা গিয়ে রাসুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রাসুল (সা.) তাঁর সঙ্গে অগ্রসর হলেন। এমনকি উভয়ে প্রবেশ করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে উম্মে সুলাইম! তোমার যা আছে তা আনো। উম্মে সুলাইম ওই রুটিগুলো আনলেন। রাসুল (সা.)-এর আদেশমতো রুটিগুলো ছিঁড়ে ছোট ছোট করা হলো এবং তাতে মধু ও তরকারি দিলেন। অতঃপর রাসুল (সা.) আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী যা পড়ার পড়লেন। এরপর বললেন, ১০ জনকে আসার অনুমতি দাও। তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হলো। তারা খেলেন, তৃপ্ত হলেন এবং বের হয়ে গেলেন। এরপর বললেন, আরও ১০ জনকে অনুমতি দাও। এভাবে সবাই খেলেন এবং তৃপ্ত হলেন। আর সেখানে মানুষ ছিলেন ৭০ জন অথবা ৮০ জন। (বুখারি : ৬৬৮৮)

নবীজি (সা.)-এর আরও একটি মুজেজা হলো, হুদায়বিয়াতে কূপের পানি। সেই কূপে পানি ছিল না। তিনি তাঁর অজুর অবশিষ্ট পানি শুকনো কূপে ঢেলে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ঝরনার মতো পানি এসে ভরে গেল। যার পানি ১ হাজার ৫০০ মানুষ নিজেরা খেয়েছেন, ব্যবহার করেছেন এবং পশুকে খাইয়েছেন (সিরাতে মুস্তফা : ৩/৪৭২)। একবার মহানবী (সা.)-এর সেনাবাহিনীতে সাহাবিদের পানি সংকট দেখা দিল। তিনি তাঁর অজুর ছোট পাত্রে যেখানে ভালোভাবে পুরো হাত ঢোকানো যায় না, তিনি তাতে হাত মুবারক রাখলেন। তাঁর হাতের আঙুলের ফাঁক দিয়ে এমনভাবে পানি বের হতে লাগল যে, সব সাহাবি পান করলেন ও অজু করলেন। তাবুকে একবার কূপ শুকিয়ে গিয়েছিল। তিনি তাঁর অজুর অবশিষ্ট পানি তাতে ঢেলে দিলেন। তখন এত ব্যাপক হারে পানি এসে কূপ ভর্তি হয়ে গেল যে, সবাই পানি ব্যবহার করে তৃপ্তি লাভ করলেন। একবার নবীজি (সা.)-এর দরবারে এক পেয়ালা দুধ আনা হলো। তখন আবু হুরায়রাকে হুকুম দিলেন- সুফফার অধিবাসী সবাইকে ডেকে আনো। তাদের সংখ্যা তখন ৭০ থেকে ৮০ জনের মধ্যে ছিল। এত ব্যাপক সংখ্যক ক্ষুধার্ত সাহাবি তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করলেন। তারপরও পেয়ালায় পূর্বের পরিমাণ দুধ অবশিষ্ট ছিল। (সিরাতে মুস্তফা : ৩/৪৭২)

সুত্র:সময়ের আলো

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :