1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে চরাঞ্চলে

  • সর্বশেষ আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩
  • ১১৪ বার পড়েছেন

অনলাইন ডেস্ক: সদর উপজেলার কুন্দেরপাড়া চরে মনোহারি দোকানদার বাবুল তালুকদার। বাড়ি ছিল কুচখালি চরে। ব্রহ্মপুত্র নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে দুই বছর ধরে বাস করছেন পূর্ব বাটিমারি গ্রামে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র গুচ্ছগ্রামে। এখানে মূলত নদীভাঙনের শিকার ভূমিহীনদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

বাবুল তালুকদার জানান, ৫৭ বছর বয়সে তিনি ২৯ বার নদীভাঙনের শিকার হয়ে ঘর সরিয়েছেন। কিন্তু তারপরও শেষরক্ষা হয়নি। পরিবারের ৫০ বিঘা জমি ছিল যা বারবার নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন ঠাঁই হয়েছে গুচ্ছগ্রামে। তিনি জানান, গাইবান্ধার বিভিন্ন চরের অধিকাংশ মানুষ তার মতো বারবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।

নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে কুন্দেরপাড়ায় আশ্রয় নেওয়া খোকা মিয়া (৪৫) জানান, ১৯৮৮ সাল থেকে অন্তত ২৫ বার নদীভাঙনের কবলে পড়েছে তাদের পরিবার। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কালো সোনার চরে তাদের ২৫ বিঘা জমির পুরোটাই নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা এখন ভূমিহীন হয়েছেন। গ্রামের হাটে একটি লন্ড্রির দোকান চালিয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে কষ্টে জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। স্থানীয়রা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার ১৬৫ চর-দ্বীপচরের বাসিন্দারা ব্যাপকহারে ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত তিন দশকে বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি ও নদীভাঙনে বিপর্যস্ত এসব জনপদের মানুষ। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরের কুন্দেরপাড়ার চর এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে নদীভাঙনের শিকার ভূমিহীনদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য গুচ্ছগ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। ছোট ছোট কুঁড়েঘর তৈরি করে মানুষজন বসবাস করছেন।

তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, কুন্দেরপাড়া গ্রামটির ৯০ শতাংশ এলাকা দুই বছর আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও শহিদ মিনারটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি হারানো মানুষেরা গ্রামের অবশিষ্ট অংশে একসঙ্গে ছোট ছোট ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা লাকি বেগম বলেন, নদীভাঙনে গ্রাম ভেসে যাওয়ায় কুঁড়েঘর বানিয়ে থাকার জায়গাটুকু তাদের নেই। কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তার স্বামী শহরে রিকশা চালায়। ছেলেরা স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে দিনমজুরের কাজ করে। চরের মানুষের জন্য কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই। তিনি বলেন, বন্যার সময় তাদের কোনো কাজ না থাকায় ঘরে খাবার থাকে না।

গাইবান্ধা সদরের চরাঞ্চলের কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান জানান, চর এলাকায় সবসময়ই কোনো না কোনো দুর্যোগ লেগে থাকে। কখনো অতিগরম, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে গেছে। তিনি জানান, নদীভাঙনে তার ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ অংশ বিলীন হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ২০-২৫ বছর আগেও বন্যা হতো তবে এখনকার মতো হঠাৎ করে নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে বেড়ে গেছে শিলাবৃষ্টি।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা বলছেন, শিল্পায়নের নামে উন্নত দেশগুলো যে হারে কার্বন নিঃসরণ করছে তার বিরূপ প্রভাব পরিবেশের ওপর পড়ায় একদিকে যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নদ-নদী নাব্য হারিয়ে গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রের পানি উপকূলীয় এলাকায় উপচে পড়ছে। এতে বন্যা ও নদীভাঙনসহ ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।

পানি ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হঠাৎ বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, নদীভাঙন, শিলাবৃষ্টি বেড়ে গেছে। জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতিতে দেশের চরাঞ্চলের দেড় কোটিরও বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। চরাঞ্চলের মানুষের সুরক্ষা নীতি বা মহাপরিকল্পনা এখনই চূড়ান্ত করা জরুরি। একইভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষও জলবায়ু ক্ষয়ক্ষতির হুমকির মধ্যে আছে। তিনি বলেন, জলবায়ু দূষণের দায় আমাদের নেই অথচ আমরা সবথেকে গুরুতর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমবর্ধমান হারে আমাদের সভ্যতার ক্ষতিসাধন করছে। এটি বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অস্তিত্বের হুমকি।

স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম আবদুস সালাম বলেন, নদীভাঙনের শিকার লোকজন নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই চরাঞ্চলের মানুষের জন্য দুর্যোগে শুধু সহায়তা নয়, তাদের জন্য কর্মসংস্থানসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারকে টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগকে যেভাবে আমলে নেওয়া হয় নদীভাঙনকে সেভাবে দেখা হয় না। এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বিশেষ করে নদীভাঙনের মতো সমস্যায় দুর্যোগপরবর্তী উদ্যোগের চেয়ে দুর্যোগ পূর্ববর্তী উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ কোথায় নদীভাঙনের আশঙ্কা আছে আগে থেকেই জানা যায়। সে হিসেবে আক্রান্ত এলাকার মানুষদের জন্য সম্ভাব্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। সুত্র: সময়ের আলো

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :