1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১২ পূর্বাহ্ন

অস্ট্রিয়ায় ছবির মতো এক গ্রাম

  • সর্বশেষ আপডেট : সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১১০ বার পড়েছেন

সোনার বাংলা ট্যুরিজম ডেস্ক: অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা থেকে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে বাদ গুইজার্নের পাহাড়ঘেরা ছিমছাম রেলস্টেশনে এসে যখন আমরা নামলাম, তখন রাত প্রায় সাড়ে ১০টা। স্টেশনের পাশেই ছোট্ট একটা পানশালার টিমটিমে আলোয় বসে গল্পে মত্ত বেশ কয়েকজন বয়স্ক মানুষ। যেন ওয়েস্টার্ন মুভির কোনো সেটে এসে হুট করে ঢুকে পড়েছি। একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছিল।

রেলস্টেশন থেকে হোস্টেল মিনিট পাঁচেকের হাঁটা। ট্রাভেলারদের জন্য এই হোস্টেলগুলো এক মজার জায়গা। নানা দেশের মানুষের সঙ্গে রুম শেয়ারিংয়ে বেশ আড্ডা-গল্প জমানো যায়। আমাদেরও পরিচয় হলো নানান দেশের ট্রাভেলারের সঙ্গে।  পরদিন বেশ ভোরে ঘুম ভাঙল। দোতলা করে মোট ছয়টি বিছানা রুমে। রুমের বাকি সদস্যদের ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে আমরা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম হোস্টেলের আশপাশটা ঘুরে দেখব বলে। হোস্টেল থেকে বেরিয়ে ঢাল বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলাম আমরা। ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়ায় চারপাশে যেন এক প্রশান্তির ভাব।

অস্ট্রিয়ার ৬০ ভাগ জুড়েই আছে আল্পস পর্বতমালা। দক্ষিণ থেকে পূর্বে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার পথে বয়ে চলছে ঐতিহাসিক দানিউব নদী। ভ্রমণার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ অস্ট্রিয়ার এসব পাহাড়ি জনপদ। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে প্রতিটি বাড়ির নির্মাণশৈলী আর সাজশয্যা এত দারুণ যে চোখ লেগে থাকে। বাদ গুইজার্নের এই বাড়িগুলোর বারান্দা যেন একেকটা ফুলের বাগান। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। পাহাড়ি ঢাল ধরে আরও কিছুটা ওপরে ঘুরে হোস্টেলে ফিরে আসলাম।

যেহেতু সারা দিনের লম্বা প্ল্যান, তাই স্বল্পতম সময়ে নাশতা সেরে বেরিয়ে পড়লাম বাসস্টপেজের দিকে। আমাদের আজকের দিনের প্রথম গন্তব্য গসাসি লেক। সেখান থেকেই বাস ধরে যাব হলস্টাট। ঘণ্টাখানেকের জার্নিতে চমৎকার যেসব রাস্তা পেরিয়ে আসতে হয়, তা মনোমুগ্ধকর। দুপাশে দূরের ধবধবে সাদা পাহাড় মুগ্ধ করে। এই লেকটা মূলত একটা পাহাড়ি জলাধার। এটি ইউনেস্কো হেরিটেজেরও অংশ। চারপাশে পাহাড় থাকায় এখানে অনেকেই আসেন ট্রেকিংয়ের উদ্দেশ্যে। ছবিতে যেন পোস্টকার্ডের মতো লাগে পুরো লেক। আমরা লেকের পার ধরে কিছুদূর এগোলাম। মাথার ওপরে সূর্যের তেজ বাড়ছিল। কিছু সময় কাটিয়ে ফিরে এলাম বাসস্ট্যান্ডে।

গসাসি থেকে মাঝপথে বাস পাল্টে হলস্টাটের বাসে উঠলাম। ১৫ মিনিটের মতো লাগল হলস্টাট এসে পৌঁছাতে। অস্ট্রিয়া-জার্মানি বর্ডারে অবস্থিত হলস্টাটকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটা। ১৯৯৭ সালে হলস্টাট এবং ডাশ্চটেইন সালসকামার্গাট অঞ্চলকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষণা করে ইউনেস্কো। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও প্রাগৈতিহাসিক লবণের খনি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে লবণের খনির পাশেই আবিষ্কৃত হয়েছিল হাজার বছরের পুরোনো প্রায় ২০০০ মানুষের সমাধি।

বাস থেকে নেমে মানুষের স্রোতের সঙ্গে আমরাও এগিয়ে গেলাম। চারপাশে নানান দেশি মানুষের আনাগোনা। লেকের পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের ধাপে ধাপে গড়ে তোলা ছবির মতো সব বাড়িঘর আর রাস্তার পাশের স্যুভেনির শপগুলো দেখছিলাম। এখানকার প্রতিটি বাড়ি, দোকান, ক্যাফে, রেস্তোরাঁগুলো নানান রকম ফুলে সাজিয়ে রাখা হয়। এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের উন্নত রুচিই হলস্টাটের সৌন্দর্যের অন্যতম গোপন রহস্য। কিছুদূর সামনে এগোলেই একটা জমজমাট চত্বর। বেশকিছু খাবারের দোকানও আছে এখানে। বাম পাশ ধরে কিছুদূর গেলে সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে পাহাড়ের দিকে।

যেহেতু পাহাড়ে হাইকিং যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ, তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা কেবল কারের খোঁজ করছিলাম। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তা মূলত পেছনে ফেলে এসেছি বাসস্টপেজের দিকে। ফিরতি পথ ধরে আবার বাসস্টপেজ পেরিয়ে কিছুদূর হেঁটে খুঁজে পেলাম কেবল কার স্টেশন। এই কেবল কারগুলো মূলত কেবল রেলের মতো। ১২ ইউরোতে শুধু ওপরে ওঠার টিকিট কাটলাম আমরা যেহেতু নামার সময় হেঁটে আসার পরিকল্পনা। মোটামুটি ভিড় থাকলেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই ওঠার সুযোগ পাওয়া গেল। ৫-৭ মিনিটের মধ্যেই পাহাড়ের ওপরে পৌঁছে দিল কেবল কার। কেবল কার যেখানে নামিয়ে দেয় পাশেই হলস্টাট স্কাই ভিউ পয়েন্ট। সবাই সিরিয়াল ধরে নিজেদের ছবি তুলছে। আমরাইবা বাদ যাই কেন!

ভিউ পয়েন্ট থেকে নেমে সোজা রাস্তা চলে গেছে লবণ খনির দিকে। দর্শণার্থীদের ভিড় থাকায় বেশ লম্বা সময় প্রয়োজন খনি দেখার জন্য। হাতে সময় কম থাকায় ট্রেইল ধরে আরও কিছুটা ওপরে ঘুরে ফিরতি পথ ধরলাম। কেবল কারে যেখানে ৫-৭ মিনিটে উঠে গিয়েছিলাম সেখান থেকে নামতে গিয়ে টের পেলাম ঠিক কতটা রাস্তা উঠেছি। পাহাড়ি পথ ধরে ঘুরে ঘুরে নামতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগল। এর মধ্যে অবশ্য একটু পরপরই হলস্টাট লেকের মনোমুগ্ধকর ভিউ দেখে দাঁড়াতে হয়েছে। এ ছাড়া একটা চমৎকার জলপ্রপাতও দেখা হলো। নিচে নেমে দ্রুত ফেরি খুঁজে বের করে লেক পার হয়ে রেলস্টেশন পৌঁছলাম। আমরা ছাড়াও আরও অসংখ্য ভ্রমণার্থী একই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে প্ল্যাটফর্মে। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে ট্রেন চলে এলো।

হলস্টাট লেক ধরেই ট্রেন আগাল অনেকটা পথ। যত দেখি তত কেবল মুগ্ধ হচ্ছিলাম। কাল রাতে এই পথে আসার সময় অন্ধকারে কিছু টের না পেলেও আজ দেখতে পাচ্ছি কী অসাধারণ সুন্দর এক রেললাইন ধরে এসেছি কাল। দুই পাশে পাহাড় আর বয়ে চলা নদীর পাশাপাশি চলে গেছে রেললাইন। এমন সুন্দর রেলপথ জীবনে খুব একটা দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। মুগ্ধচোখে পুরোটা সময় উপভোগ করছিলাম। গন্তব্য আরেক পাহাড়ি শহর ইন্সব্রুক। সুত্র:প্রতিদিনের বাংলাদেশ।

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :