1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫১ অপরাহ্ন

গ্রেফতারের পর অমানবিক আচরণ করা হয়েছে

  • সর্বশেষ আপডেট : শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০২৩
  • ১০১ বার পড়েছেন

অনলাইন বিনোদন ডেস্ক: নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কারাগারে যাওয়ার সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর মুক্ত পেয়েছেন চলচ্চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি সরকার। গত শুক্রবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং অপর একটি হুকুমের আসামি করে মামলা করার পর শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাহিকে গ্রেফতার করা হয়।

এরপর দুপুরে সাত দিনের রিমান্ড চাইলে গাজীপুর জেলা দায়রা জজ আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গাজীপুর কারাগারে মহিলা ওয়ার্ডে থাকা অবস্থায় বিকালে মাহিয়া মাহিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালত-৫ এ জামিনের আবেদন করা হলে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জামিন দেন। মাহির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আনোয়ার সাদাত সময়ের আলোকে বলেন, মাহি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

শুক্রবার মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার পর মাহি অসুস্থ হয়ে পরেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সৌদি আরব থেকে তিনি শনিবার দেশে ফেরেন। আদালত শারীরিক, মানসিক ও সেলিব্রেটি বিবেচনায় মাহিকে জামিন দিয়েছেন আদালত। এখন তিনি কারামুক্ত।

রাত ৮ টায় তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে ভাওয়াল কলেজের পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ শোরুমের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় শতশত সাংবাদিকের উপস্থিতিতে মাহি বলেন, গ্রেফতারের পর পুলিশ আমার সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। মানসিক নির্যাতন করেছেন। গ্রেফতার হওয়ার পর পানি খেতে চাইলে পানিও দেওয়া হইনি। প্রায় ১১ মিনিট সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। বলেন, আমি ফেসবুক লাইভে আমার এভাবে কথা বলা উচিৎ হয়নি। আমি এজন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে আমি এবং আমার স্বামী যে অভিযোগ দিয়েছি, সেটি প্রত্যাহার করবো না। আমি অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে ন্যায় বিচার হয় সেটি আমি পেয়েছি।

এদিকে শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে মাহিয়া মাহিকে গ্রেফতারের ও মাহির অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে করা মাহির অভিযোগ সঠিক কি-না সেটাও তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

শনিবার রাত ৯ টায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রোকন মিয়া বাদি হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন হুকুমের আসামী করে ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার রাতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মাহিসহ ১০জনকে গ্রেফতার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মাহিয়া মাহি বলেন, আমার স্বামীর পরিবারকে এখনো হয়রানি করছে পুলিশ। ঘটনার দিন যে ভাঙচুর চালিয়েছে তাকে গ্রেফতার না করে উল্টো কেয়ারটেকারকে গ্রেফতার করেছে। আরও যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই নির্দোষ। আমাদের শোরুম দখলের জন্য ভাঙচুর চালানোর পর উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে।

এর আগে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি তার স্বামী রকিব সরকারের সাথে সম্প্রতি সৌদি আরব গিয়েছিলেন ওমরা হজ্ব পালন করতে। সেখান থেকে শুক্রবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে স্বামী রকিব সরকারের গাড়ির শোরুমে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ তোলেন। শনিবার এই দম্পতি দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দিলে শুক্রবার রাতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা হয়।

শনিবার সকালে সৌদি থেকে মাহিয়া মাহি ফিরলে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তবে দেশে ফেরেননি মাহির স্বামী রকিব সরকার। মাহি বলেন, আমার স্বামীও শিগগিরই দেশে ফিরবেন। আমরা আইনের মধ্যে থেকেই লড়বো।ফেসবুক লাইভে মাহিয়া মাহি বলেছিলেন, আমি সৌদি আরবে আছি এই মুহূর্তে আমি মক্কাতে আছি এবং আমার হাজবেন্ডসহ।

তিনি বলেন, আমি অনেকদিন আগেই বলেছিলাম ক্রাইম বিটের যারা আছেন সাংবাদিক ভাইরা অনেকে আমাকে নক করেছেন। আমি সবার কন্টাক্ট নাম্বার দেখেছি। গাজীপুরের পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে আমি কমেন্ট করতে চাই। সেটা হচ্ছে আমাদের একটা গাড়ির শোরুম আছে। সেটা হচ্ছে ভাওয়াল কলেজের পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’। ওই শোরুম নিয়ে অনেকদিন ধরে অনেকে প্রবলেম করছে। এখানে একটা লোক আছে ইসমাইল হোসেন ওরফে লাদেন। গাজীপুরে কমিশনার অনেকদিন ধরেই আমার হাজবেন্ড এবং আমার হাজবেন্ডের ফ্যামিলি মানে সুলতান ভাই, ফয়সাল ভাই পিছনে লেগেছে। সুলতান ভাইয়ের ভাই হিসেবে রকিব সরকারের পিছনে লেগেছেন। গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম ওই ইসমাইল হোসেন ওরফে লাদেনের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে আমাদের শোরুম দখল করে দেয়ার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার উনার মাধ্যমে টাকাটি নেয়া হয়েছে। সে আমাদের শোরুম টা দখল করে দিবে এই মর্মে। আমরা এজন্য কমিশনারের কাছে গিয়েছি তাকে জিজ্ঞেস করেছি। সে বলছে না এরকম কিছু নয়। তিনি শুধু বারবার আমাদের শোরুমের কাগজ চাচ্ছিলেন। পুলিশতো কখনো জায়গা জমির কাগজ নিয়ে ডিল করবে না। জায়গা জমি বিষয়ে হবে আদালতের মাধ্যমে। আদালত রায় দিবে। এখানে পুলিশ কেন ডিল করবে। তারপরে আমি এবং আমার হাজব্যান্ড বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি’র কাছে অভিযোগ করেছি। আমরা সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম, তিনি গাজীপুরের কমিশনার সাহেবকে ফোন দিয়েছেন।

ফোন দিয়ে বলেছেন, ‘আপনি জায়গা জমিনের বিষয়ে কেন কথা বলবেন’। ‘কোর্টের মাধ্যমে হবে। কোর্ট ফয়সালা করবে।’ ‘আপনি কেন করবেন’। ওই মুহূর্তেও আমি কমিশনার মহোদয়কে অনেকবার ফোন করেছি তিনি ফোন ধরছেন না বারবার কেটে দিচ্ছেন। আমাদের শোরুমে হামলা করা হয়েছে এখন। গাজীপুরের কোন পুলিশ কিন্তু এখন হস্তক্ষেপ করছে না। আমরা কন্টিনিউ পুলিশকে ফোন করছি ওখানে চাপাতি নিয়ে লোকজন দাঁড়ায় আছে। ওই সমস্ত ভিডিও আমি ফেসবুকে আপলোড করব। পুলিশ কমিশনার একটা দেশের যত বড়ই হোক না কেন সে কখনো বেআইনি কাজ করতে পারে না। হামলার ঘটনা আমরা আগেই জানতে পেরে থানায় জিডি করতে গিয়েছিলাম কিন্তু ওসি সাহেব তখন জিডি নিচ্ছিলেন না। পরবর্তীতে আমাদেরকে একটি ফেক জিডির কাগজ দিয়েছেন। পরে আমি ওসি সাহেবকে বলেছি যদি আজকে আমরা জিডি না করতে পারি তাহলে এ বিষয়টি নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো। তবুও তিনি জিডি নেন নাই। পরের দিন সকালবেলা কমিশনার ওই ওসি সাহেবকে কিছুদিনের জন্য ক্লোজ করেন। কিন্তু এখন আবার ক্লোজ উঠায়ে দিছে।

এ বিষয়ে রকিব এবং মাহির প্রতিপক্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, ওই জমি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে রকিব সরকার আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। যেখানে এক কোটি টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হয়, সেখানে পুলিশকে দেড় কোটি টাকা দেব?

গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ওসি সানোয়ার জাহান জানান, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের কাউকে পাওয়া যায়নি তবে রকিব সরকারের ২০-২৫ জন লোককে দেখা গেছে। শোরুমের জায়গা নিয়ে মালিকানার দ্বন্দ্বে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে জানিয়েছে।

শনিবার দুপুরে মাহিয়া মাহির গ্রেফতারের বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি সৌদি আরব থেকে দেশের ফিরলে বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। একই ফ্লাইটে তাঁর স্বামীর দেশে আসার কথা থাকলেও তিনি পালিয়ে থাকার জন্য সৌদি আরবে রয়েছেন। মাহিকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতারের পর বাসন থানা হয়ে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং মামলার প্রেক্ষিতে মাহিয়া মাহিকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং একটি মারামারির ঘটনায় হুকুমের আসামি মামলা দায়ের করা হয়। মাহিয়া মাহি পুলিশের বিরুদ্ধে বিষদগার করেছেন, কোন প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে সম্মানহানি ঘটিয়েছেন। দুই পক্ষের জমি নিয়ে যেখানে বিবাদ সেখানেই পুলিশকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে জড়িয়ে নানা প্রকার আপত্তি মূলক বক্তব্য ফেসবুকে প্রচার করেছেন। মাহিয়া মাহি অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাকে রিমান্ড চাওয়া হয়নি। ভাংচুর, চাঁদাবাজিসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মারধর, ভাংচুর, চাঁদা দাবি ও জমি দখলের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে হুকুমের আসামি করে যে মামলাটি স্থানীয় ইসমাইল হোসেন করেছেন তাতে আরো ২৮জনকে আসামী করা হয়। ওই মামলায় মাহিসহ ১০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সাড়ে ৫ ঘণ্টা কারাগারে কেমন ছিলেন মাহি : গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার আনোয়ারুল করিম জানান, দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে গাজীপুর জেলা কারাগারে মাহিয়া মাহিকে আনা হলে তাকে মহিলা ওয়ার্ডে রাখা হয়। নরমালি যেভাবে থাকার নিয়ম তিনি সেভাবেই এখানে থাকেন। অন্যান্য বন্দিদের যেভাবে যে খাবার দেয়া হয় অর্থাৎ সরকারি বরাদ্দের খাবারই তাকে দেয়া হয়। তবে তিনি কারা ক্যান্টিন থেকে কিনে খেয়েছেন। তিনি যেহেতু অন্তঃসত্ত্বা তাই উনাকে সার্বক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়েছে।

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :