অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করার পর বাংলাদেশের গর্বিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বললেন, এই টি- টোয়েন্টি সিরিজে আমরা খুবই ভালো করেছি। ভালো ফিল্ডিং করেছি, বোলিং করেছি দারুণ, ব্যাটসম্যানরাও ছিল দুর্দান্ত। এই জায়গা থেকে আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য আমরা একটা ভালো দল গড়তে চাই।’ বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিধ্বস্ত করার পর বিশ্ব ক্রিকেটে এক নতুন বার্তাই দিল ‘টিম টাইগার্স’। দূরের স্বপ্ন এখন যেন নাগালের মধ্যে।
এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে হোয়াইটওয়াশ তো দূরের ব্যাপার এ সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে বিপজ্জনক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি জয় পাওয়া যাবে কি না এটাই ছিল বড় প্রশ্ন। বিশেষ করে নিজেদের সেরা সংস্করণ ওয়ানডে সিরিজে হারার পর টি-টোয়েন্টিকে ঘিরে আশাবাদী হওয়াটা কঠিন ছিল বৈকি?
ওয়ানডে ফরম্যাটে ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট শক্তি। সহজ করে বললে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে টাইগারদের উপেক্ষা করার সাধ্য কারও নেই। কিন্তু এই সিরিজের আগ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুঃস্বপ্নের প্রতিশব্দ হয়েই ছিল ‘টিম টাইগার্স’। এই সংস্করণে বাংলাদেশের দুর্দশা অনুধাবন করার জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট। টি-টোয়েন্টির আট বিশ্বকাপে ক্রিকেটের প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জয় মোটে একটি। ২০০৭ সালে প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল টাইগাররা। গত দেড় দশকে এই বিশ্বকাপের আসরে শুধু অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই আটকে থেকেছে বাংলাদেশ।
সবাই ধরেই নিয়েছিল পাওয়ার ক্রিকেটে এই সংস্করণের সঙ্গে বৈশ্বিক রেসে সমানতালে চলতে পারাটা টাইগারদের জন্য সম্ভব নয়। এ অবস্থায় টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব ক্রিকেটকে একটা বড় ঝাঁকি দেওয়াটা টাইগারদের জন্য হয়ে ওঠে সময়ের দাবি। যেমনটা ওয়ানডে ক্রিকেটে করে দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। মজাটা হচ্ছে, ৫০ ওভারের আজকে যে প্রতিষ্ঠা তার সঙ্গেও জড়িয়ে আছে ইংল্যান্ডের নাম। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শেষ আটে ওঠে আসে বাংলাদেশ। এরপর থেকে মাশরাফির নেতৃত্বে দিনকে দিন পরিণত হয়ে ওঠে ওয়ানডের বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সেই সময়টাকেই যেন ফিরিয়ে আনল সাকিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
এই সিরিজে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশ। দলে ব্যক্তি নির্ভরতা নাই। অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের এক বিনি সুতোর মালা এই টিম টাইগার্স। ক্রিকেটে টাইগারদের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হিসেবে বিবেচিত হয় ফিল্ডিং। অথচ এই সিরিজে বাংলাদেশের ফিল্ডিং ছিল এক কথায় অসাধারণ। ম্যাচ শেষে সাকিব জানান, সম্ভবত ফিল্ডিংয়ে আমরা এশিয়ার সেরা।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ঘনিষ্ঠ অনুষঙ্গ হিসেবে ধরা হয় পাওয়ার প্লে, শ্লগ ওভার ও ডেথ ওভারের বোলিং। এই জায়গাগুলোতে টাইগারদের মুন্সিয়ানা দেখার মতো। মঙ্গলবার মিরপুরে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ব্যাট করার জন্য যথেষ্ট দুরূহ উইকেটে প্রথম ১০ ওভারে ৭৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে প্রথম ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে টাইগারদের সংগ্রহ ছিল ৯৮ রান। ডেথ ওভারে হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদরা উজাড় করে দিয়েছেন নিজেদের। সঙ্গে যোগ হয়েছে সাকিবের ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্ক। লিটন দাস ছাড়াও শুরুতে ঝড় তোলার সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন রনি তালুকদার। নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সর্বোপরি ভয়ডরহীন ক্রিকেটের পুরস্কার পেয়েছেন টাইগাররা।
২০২৪ সালের বিশ্বকাপকে ঘিরে বড় স্বপ্ন দেখছেন সাকিব। আর এই স্বপ্নটা সতীর্থদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। আর টিম টাইগার্সের এই আত্মবিশ্বাসই হয়ে উঠেছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আগামীর পথচলার বড় প্রেরণা।
Leave a Reply