অনলাইন ডেস্ক: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কবে শিখবে বাংলাদেশ, এতদিন এই প্রশ্নের কোনো জবাব ছিল না। গতির ঝড় তুলতে পারে এমন ফাস্ট বোলার নাই, লেগ স্পিনার নাই, সর্বোপরি উইকেটে এসেই চার-ছক্কা মারার পাওয়ার হিটার নাই। এত ‘নাই’ নিয়ে বিশাল কিছু করবে টাইগাররা, এমন বিশ্বাসটাই তো অনেক কঠিন। তবে দলীয় চেষ্টায় যে অনেক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা যায় সেই দৃষ্টান্তই গড়ল সাকিব আল হাসান ব্রিগেড। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে সিরিজ হারানোর মধ্য দিয়ে স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রাখল টিম টাইগার্স।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত শক্তি। শ্লথ হলেও টেস্ট ক্রিকেটে সম্ভাবনা ধরে রেখেছে টাইগাররা। কিন্তু এতদিন ধরে মারাকাটারি টি-টোয়েন্টিতে এক পা এগোয় তো দুই পা পেছনে হাঁটছিল বাংলাদেশ। এই ফরম্যাটে আত্মবিশ^াসও ছিল তলানিতে। টি-টোয়েন্টিতে ঘুমন্ত বাঘের গর্জন কি আদৌ শুনবে বিশ্ব, এ নিয়ে কাগজ মগজের ব্যবহারও কম হয়নি।
রোববার টাইগারদের কাছে সিরিজ হারের পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক জস বাটলার বললেন, সমস্ত কৃতিত্ব বাংলাদেশের। স্বাগতিকরা আমাদের আউট প্লেইড করে ছেড়েছে। এ সময়ে ইংল্যান্ড কেমন ক্রিকেট খেলছে সেটা আর নতুন করে কিছু বলার নাই। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ১৯৭০-৮০ দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়া যেভাবে বিশ^শাসন করেছিল সেই সময়টা মনে করিয়ে দিচ্ছে হালের ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। সব কথার এক কথা, যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু টি-টোয়েন্টিই নয়, ওয়ানডে ক্রিকেটেও বিশ^চ্যাম্পিয়ন ইংলিশরা। গতকাল মিরপুরে মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ছোবলে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি ইংলিশ ব্যাটাররা। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান খরচায় নেন ৪ উইকেট। পান ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি। খেলা শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সাহস নিয়ে খেলেছি, আর এটাই দলকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে।’
এই সিরিজের শুরু থেকেই টাইগাররা ভয়হীন ক্রিকেট খেলছে সামনে এসেছে এটাই। প্রথম ম্যাচের জয়ের নায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘ওয়ানডে দলটা এখন যেমন অনেক ভালো করছে, আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টি দলটাও ওই জায়গায় যাবে।’ চট্টগ্রামে জেতার পর অধিনায়ক সাকিব বলেন, ‘২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে আমাদের শুরুটা খুব ভালো হয়েছে। এখান থেকে আমরা দল হয়ে উঠতে পারি।’ গতকাল সিরিজ জয়ের পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে টাইগার অধিনায়ক বললেন, এটা একটা টিম এফোর্ট।
দল হয়ে ওঠার প্রথম শর্তই কোনো একক ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে পড়া। এ সময়ে বাংলাদেশ দলের সেরা পারফরমার সাকিব, লিটন দাস ও মোস্তাফিজুর রহমান। বিশ^চ্যাম্পিয়নদের মাটিতে নামানোর মিশনে এই তিনজন মুখ্য ভূমিকা রাখেননি। তাতেও জয় পেতে কোনো সমস্যা হয়নি। শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, হাসান মাহমুদ, মিরাজরা যার যার জায়গা থেকে দিয়েছেন নিজেদের সর্বোচ্চটা।
মিরপুরে জিতিয়েছেন বোলাররা। কিন্তু চট্টগ্রামে বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছে ব্যাটারদের। জয়ের জন্য ১৫৬ রান টপকানোর চ্যালেঞ্জে টাইগারদের শরীরী ভাষা ছিল বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। মাত্র ৪৩ রানে ২ উইকেট হারানোর পরও রানের গতি না থামিয়ে টি-টোয়েন্টি মোজাজে ব্যাট করেছেন টাইগাররা। ১০ ওভারে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা পড়ে ৯৮ রান। আর এতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বিশ^চ্যাম্পিয়নরা। গতকাল চাপ ধরে রেখে ইংলিশদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়নি টাইগার বোলাররা।
সবমিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুনের আগমনি বার্তা দিচ্ছে টিম টাইগার্স। লিখছে নতুন দিনের পদাবলি।
Leave a Reply