অনলাইন ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহিদ শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪৯ সালের এই দিনে তিনি তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে শাহাদতবরণ করেন শেখ কামাল। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রধান লক্ষ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেও এ দিনের ঘটনায় প্রথম শহিদ হন শেখ কামাল। বঙ্গবন্ধুর ছেলে পরিচয় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয় শেখ কামালকে। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ ক্রীড়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত বছর থেকে ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়েছে।
আদালতে দেওয়া বঙ্গবন্ধু বাড়ির অন্যতম পাহারাদার হাবিলদার কুদ্দুস সিকদারের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, বাড়িতে প্রথম ঢুকে মেজর বজলুল হুদা এবং ক্যাপ্টেন নূর চৌধুরী। সঙ্গে আরো কয়েকজন।
বাড়িতে ঢুকেই তারা শেখ কামালকে দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গেই বজলুল হুদা স্টেনগান দিয়ে তাকে গুলি করে। শেখ কামাল বারান্দা থেকে ছিটকে গিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষের মধ্যে পড়ে যান। সেখানে তাকে আবার গুলি করে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ভবনের আবাসিক ব্যক্তিগত সহকারী এবং হত্যা মামলার বাদী মহিতুল ইসলামের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যের মধ্যেও একই বর্ণনা রয়েছে।
তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউল্লাহকে বাড়ি আক্রমণের পর বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে যা বলেছিলেন তাতেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। ১৯৮৭ এবং ১৯৯৩ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে দুটি সাক্ষাৎকারে শফিউল্লাহ বলেছেন, বাড়ি আক্রমণের পর বঙ্গবন্ধু জলদি ফোর্স পাঠানোর জন্য তাগিদ দিয়ে তাকে ফোন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে। কামালকে বোধ হয় মাইরা ফেলছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।’
শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স পাশ করেন। বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উত্সমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতারবাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়া চক্রের প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উত্সাহ ছিল তার। শেখ কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন্ড লাভ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন এবং বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদতবরণের সময় তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
শহিদ শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে গৃহীত সব অনুষ্ঠানের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। শহিদ শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বাস্হ্য সুরক্ষা বিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
Leave a Reply