1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
কাঙ্খিত জুলাই সনদে সই করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনীতিবিদরা: যা আছে জুলাই সনদে নানা আয়োজনে মানিকগঞ্জে শিশু দিবস উদযাপিত  মানিকগঞ্জে জুলাই স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এফসি হান্টার ক্লাব কালবেলা দেশের মানুষের কথা বলে : অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শিবালয়ে বিএনপি নেতার মিথ্যা প্রচারে জামায়াত প্রার্থীর সংবাদ সন্মেলন  শিবালয়ে ২১কেজি ইলিশ জব্দ তিন জেলের কা-রা-দন্ড শিবালয়ে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বিএনপি নেতার সংবাদ সন্মেলেন  শিবালয়ে জেলেদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরণ মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ঘিওরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

ভরা মৌসুমেও পদ্মা-যমুনায় মিলছে না ইলিশ

  • সর্বশেষ আপডেট : বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৫২ বার পড়েছেন

শাহজাহান বিশ্বাস: ইলিশের এ ভরা মৌসুমেও পদ্মা-যমুনা নদীতে মিলছে না কাঙ্খিত ইলিশ। ফলে বাজারে চলছে ইলিশের চরম সংকট এবং দামও অনেক চড়া।যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। কাঙ্খিত ইলিশ মাছ না পাওয়ায় জেলেরা দিন-রাত নদী চষে বেড়ালেও জ্বালানি খরচ উঠছে না তাদের। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছে তাদের। ইলিশ সংকটের কারণে পদ্মা-যমুনার তীরবর্তী মাছের আড়তগুলোতেও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন আরিচা ঘাটের আড়তদার ও পদ্মা-যমুনা মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেরা।

ইলিশের এমন সংকটের কারণ হিসেবে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, ভরাট হয়ে নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, নিষিদ্ধ কারেণ্ট জাল নির্বিচারে মাছ ধরা, নদীর তলদেশে খাদ্য সংকট এবং নদীর পানি দূষণসহ অন্যান্য কারণে ইলিশের সংকট দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এখন বর্ষাকাল চলছে। পদ্মা-যমুনা পর্যাপ্ত পানি  রয়েছে। নদীতে রয়েছে মাছ শিকারি জেলে নৌকার আনাগোনা। কিন্তু এ দৃশ্যের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে দীর্ঘশ্বাস এবং হতাশার কলো মেঘ। কারণ ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে উঠছে না কাঙ্খিত চক চকে রুপালি ইলিশ। সারাদিন নদীতে জাল ফেলে উঠছেনা কাঙ্খিত ইলিশ। এতে জেলেদের জ্বালানি খরচসহ খোরাকিই উঠছে না। হতাশার সাগরে পড়ে হাবু-ডুবু খাচ্ছে পদ্মা-যমুনার জেলেরা।

এদিকে মৌসুমের শুরুতেই  মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়েছিলেন যেসব জেলেরা, তাদের ঋণের বোঝা ক্রমশ বেড়েই চলছে। এ প্রতিনিধিকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন শিবালয় উপজেলার পদ্মা-যমুনায় মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেরা।

মঙ্গলবার সকালে আরিচা ঘাটের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে দেশীয় কিছু মাছ উঠেছে। দু’/একটি আড়তগুলোতে ইলিশ মাছ দেখা গেলেও সেগুলো পদ্মা-যমুনার নয়। এগুলো চাঁদপুর, চট্রগ্রাম থেকে আমদানী করা ইলিশ। কাক ডাকা ভোরে জেলেদের নৌকা তীরে এসে ভীড়া দেখে আশায় বুক বাঁধে আড়তদাররা। কিন্তু নদীতে টানা ১০-১২ ঘণ্টা জাল ফেলে দু’/একজন ১/২টি ইলিশ মাছ নিয়ে আসে। বাকীরা কেউ আসে শূণ্য হাতে, না হয় অন্যমাছ নিয়ে। ৩ থেকে ৫ জনের একটি জেলে নৌকায় অনেক খরচ হয়। এরমধ্যে  জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ তুলতে জেলেরা আড়তে এনে ইলিশ মাছের চড়া দাম হাঁকেন। চড়া দামে মাছ ক্রয়ের পরে পাইকাররাও চড়া দামে তা কিনে নিয়ে চড়াদামে বিক্রি করে সাধারণ মানুষের নিকট।

আড়ৎদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে এক কেজি ইলিশের দাম ছিল ১ হাজার টাকা। এখন সেই একই ইলিশের দাম ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শিবালয় উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, শিবালয়ের জাফরগঞ্জ পাল পাড়া থেকে বাল্লা মালুচি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের বিশেষ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষার এসময়ে শিবালয় উপজেলার পদ্মা-যমুনার উক্ত এলাকাজুড়ে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। উপজেলায় কার্ডধারী মৎস্যজীবী রয়েছে ৪ হাজার ২শ’ জন এবং এর বাইরেও আরো অনেক জেলে রয়েছে। শিবালয়ে পর্যাপ্ত মাছের চাহিদা থাকলেও উৎপাদন অনেক কম। গত ২০২৪ -২০২৫ অর্থ বছরে শিবালয় উপজেলায় ৪শ’ ৯৯ মেট্রিন টন ইলিশ মাছ উৎপাদন হয়। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে বছরে দুইবার জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। গত অর্থবছরে মা ইলিশ সংরক্ষণের সময় ২ হাজার ১শ ১৪ জন জেলে

পরিবারকে মাসে ২৫ কেজি করে দুই মাসের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া ঝাটকা সংরক্ষণের সময় ৬শ’ ৫০জন জেলে পরিবারকে  প্রতি পরিবারকে ৮০কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এছাড়া, এসব জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে গরু, বাছরসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দেওয়া হয়েছে। এ বছর ইলিশ উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে প্রয়োজনের তুলনায় নদীর নাব্যতা কম, পানি দূষণ, অবৈধ জাল ব্যবহার, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং জলবায়ু পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য কারণ। নদীর নাব্যতা সংকট এবং ইলিশের খাদ্যের অভাবও মাছের সংখ্যায় প্রভাব ফেলছে।

শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাট এলাকার আড়তদার হাজী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইলিশের আমদানি না থাকায় অনেক আড়তদারের বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে অনেক আড়ত বন্ধ হয়ে গেছে আবার অনেক আড়ত এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। এই আড়তে আগে অনেক বেচাকেনা হতো সেই তুলনায় এখন বেচাকেনা নেই বললেই চলে। হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তা সবার কল্পনার বাইরে ছিল। জেলেদের জালে যেই ইলিশ ধরা পড়ছে তা বিক্রি করে আড়তের ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য তাদের নেই। নদীতে এমন ইলিশ শুন্য থাকলে অনেক পরিবারের  পথে বসা ছাড়া আড় কোন উপায় থাকবে না।

চৌহালির জেলে ইউসুফ আলী বলেন, আমরা নৌকায় ৬ জন জেলে মিলে নদীতে দিনরাত মাছ ধরি। ১০-১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করে ইলিশ পাই ২-৩ হাজার টাকার কিন্তু আমাদের খরচ হয় তার থেকে অনেক বেশি। গত বছরের তুলনায় এই বছর নদীতে ইলিশ নেই বললেই চলে। গতবার নদীতে এক খেও দিলেই ১০-১২ হাজার টাকার ইলিশ পেতাম। এ বছর তিন খেও দিলেও ১০ হাজার টাকার ইলিশ পাই না। গতবছর দুই মাসে ৩-৪ লাখ টাকা ইলিশ বিক্রি করতে পেরেছি কিন্তু এবার বিভিন্ন খরচ দিয়ে ১০ টাকাও ইনকাম করতে পারিনি। আড়তদার থেকে হাজার হাজার  টাকার দাদন নিয়ে নদীতে নেমেছি এখন এই দাদনের টাকা কিভাবে পরিশোধ করব এই চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

আরিচা ঘাটের জেলে অজিত হলদার বলেন, ভোর থেকে আমরা পাঁচজন জেলে এই দুপুর পর্যন্ত পরিশ্রম করে ছোট সাইজের তিনটি ইলিশ পেয়েছি। বিক্রি করেছি ৩ হাজার টাকা। এতে আমাদের জ্বালানি খরচও ওঠেনি। বাড়িতে চাল-ডাল এখন কষ্ট করে কিনতে হয়। কীভাবে সামনে দিনে চলবে, তা ভাবলে ঘুম আসে না।

শিবালয় উপজেলার ছোটবোয়ালী গ্রামের  জেলে প্রেমো হলদার  বলেন, গতবছর দুই মাসে প্রতি নৌকায় ৩-৪ লাখ টাকা করে কামাই হইছে। সেই তুলনায় এবছর নদীতে ইলিশ মাছ একবারেই নেই। এজন্যই আমাদের জেলেদের না খেয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। কিন্তু আমরা রাত দিন ২৪ ঘণ্টা নদীতে মাছ ধরে সকালে আড়তে এসে মাছ বিক্রি করি ৩-৪ হাজার টাকা। এইজন্য অনেক জেলে মাছ ধরতে আসে না অন্য কাজে চলে যায়। এবছর দাদনের টাকাও পরিশোধ করতে পারবো না। ইঞ্জিন এবং নৌকা খরচ ও হয় না।

মানিকগঞ্জ জেলা মাৎস্য বিভাগের  মৎস্য কর্মকর্তা মো.সাইফুর রহমান বলেন, জাফরগঞ্জ, তেওতা, নিহালপুর, বাল্লা, মালুচিসহ উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে পদ্মা-যমুনা নদী।এ বছর আমরা লক্ষ্য করছি এবং জেলেদের থেকে জানতে পেরেছি নদীতে ইলিশ সংকট।তবে আমরা আশাবাদী, আমাদের যে মা ইলিশ সংরক্ষণ করার সময় সূচি, তার আগেই নদীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ইলিশ আসবে এবং জেলেরা ইলিশ শিকার করতে পারবেন।এ ছাড়া নদী দূষণ, নাব্যতা সংকটে নদীতে পানি কমে যাওয়া পলিশন, কারেন্ট জাল দিয়ে অবৈধভাবে নির্বাচারে মাছ ধরাসহ ইত্যাদি কারণে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ উৎপাদন করতে পারে না, ফলে ইলিশ সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এখনও যে সময় আছে, তাতে ইলিশ নদীতে আসবে। এছাড়া মৎস্য বিভাগের জনবল একেবারেই কম। যে কারণে এ স্বল্প সংখ্যক এ অভিযান পরিচালনা করা একেবারেই কঠিণ হয় পড়েছে।

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :