নিজস্ব প্রতিবেদক:মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার ভিতরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বহরের মোটরসাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে নারীসহ দুই পুলিশ সদস্যকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা করেছে ঘিওর থানা পুলিশ।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে ঘিওর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বিএনপির ৯ জনকে আসামি ও ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে এই মামলা করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘিওর থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।
আসামিরা হলেন- খন্দকার বিল্টু, জিএম সেলিম, উজ্জল, মীর কাউসার, হারেজ, রফিকুল ইসলাম পিন্টু, রাজু, সামিউল আলম বিল্টু, শহিদুল ইসলাম। তারা সবাই মানিকগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার আকবর হোসেন বাবলুর অনুসারী এবং ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের পদধারী নেতা ও সক্রীয় কর্মী।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কোহিনুর মিয়া মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী খন্দকার আকবর হোসেন বাবলুর অনুসারী ঘিওর সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর কাউসার ও ঢাকার তেজগাঁও থানা কৃষকদলের আহ্বায়ক মো. সেলিম মিয়াসহ ২০-৩০ জন নেতাকর্মী বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। ভিড়ের কারণে গাড়ি পার্কিংয়ে সমস্যা হলে থানার পাশে গাড়ি রাখার চেষ্টা করেন তারা। তখন থানায় দায়িত্বে থাকা এক নারী পুলিশ সদস্য থানার ভেতরে মোটরসাইকেল রাখতে নিষেধ করলে নারী পুলিশ কনস্টেবলকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন মীর কাউসার। এরপর ওই নারী পুলিশ কনস্টেবল থানার ভেতরে গিয়ে ডিউটি অফিসার এএসআই রফিককে বিষয়টি জানান। ডিউটি অফিসার রফিক বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন এবং থানার ভেতরে মোটরসাইকেল না রাখতে অনুরোধ করেন। দ্বিতীয় দফায় বাবলুর অনুসারী মীর কাউসার থানার ডিউটি অফিসার রফিক এবং নারী কনস্টেবলের সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এ সময় সংসদ সদস্য প্রার্থী খন্দকার আকবর হোসেন বাবলু সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এএসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি দায়িত্ব পালন করছিলাম। হঠাৎ করে বহু মোটরসাইকেল নিয়ে থানার ভেতরে প্রবেশ করা হয়। আমি নিষেধ করলে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং আমার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করেন। এটি থানার শৃঙ্খলার পরিপন্থী।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও এমপি প্রার্থী খন্দকার আকবর হোসেন বাবলু বলেন, ‘আমরা পূজার মেলায় যোগ দিতে গিয়েছিলাম। আমি থানার ভেতরে ছিলাম না, আমার গাড়ি বাহিরে ছিল। পুলিশের কাছে আমার নেতাকর্মীরা হেনস্থার শিকার হয়েছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে হয়তো পুলিশের এএসআই রফিকের কথা কাটাকাটি হতে পারে, লাঞ্ছিত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ভিড়ের কারণে থানার ভেতরে গাড়ি রাখার কথা এসআই মাসুদ রানা বলেছিলেন। কিন্তু এসময় এএসআই রফিকুল ইসলাম হঠাৎ বাধা দেন এবং উত্তেজিত হয়ে আমাদের কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করেছেন।
তবে এই বিষয়ে ঘিওর সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মীর কাউসার বলেন, এসআই মাসুদ রানা অনুমতি দেওয়ার পর গাড়ি থানার ভেতরে ঢোকাতে গেলে এএসআই রফিকুল ইসলাম গেট বন্ধ করে দেন এবং আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। পরে ওসিকে জানাতে গেলেও তিনি ব্যস্ত থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে এসআই মাসুদ রানা জানান, মেলার ভেতরে গাড়ি ও মোটরসাইকেল প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে সেলিম মিয়াকে গাড়িটি পাবলিক লাইব্রেরির সামনে রাখতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা হয়তো থানার ভেতরে রাখতে গিয়েছিলেন। তখন এএসআই রফিকুল নিষেধ করায় সামান্য কথা কাটাকাটি হয়।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কোহিনুর মিয়া বলেন, থানা প্রাঙ্গণ প্রশাসনিক এলাকা। এখানে শত শত মোটরসাইকেল ঢোকানো নিয়মবহির্ভূত। পুলিশ সদস্যকে হেনস্তা করার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
Leave a Reply