অনলাইন ডেস্ক: আমান ইসলাম একজন তরুণ ব্যবসায়ী। গত কয়েক বছর ব্যবসা ভালো হওয়ায় এ বছরই ঢাকায় জমি কেনার চিন্তা করেছিলেন। তবে হঠাৎ করেই জমি নিবন্ধনে উৎসে কর ২৪ গুণ হওয়ায় সরে এসেছেন সেই চিন্তা থেকে। তিনি বলেন, আমার ব্যবসা খুব বেশি বড় না। গত ২ বছর ব্যবসা কিছুটা ভালো ছিল। তাই চিন্তা করেছিলাম ঢাকায় এক টুকরো জমি কিনে কিছু টাকা বিনিয়োগ করতে। তবে এখন রেজিস্ট্রেশনের কর এলাকাভিত্তিক ২৪ গুণের বেশি হয়ে যাওয়ায় জমিতে বিনিয়োগ করা নিরাপদ হবে না বলে মনে হচ্ছে। তাই আপাতত জমি কেনার চিন্তা বাদ দিয়েছি।
শুধু আমানই নয়, ছোট-বড় অনেক ব্যবসায়ী জমিতে বিনিয়োগ লাভজনক ও নিরাপদ ভাবেন। তবে নিবন্ধন কর ২৪ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ঢাকা বা বড় শহরে জমিতে বিনিয়োগ করা নিরাপদ মনে করছেন না তারা। আর অতিরিক্ত কর আরোপ আবাসন খাতের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনও (বিএলডিএ)। গত ৬ জুলাই সংগঠনের সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ভূমি উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের এই সংগঠন। সংগঠনটি মনে করে, জমি নিবন্ধনে অতিরিক্ত কর আরোপের কারণে দেশের আবাসন খাতে বিনিয়োগ কমবে। পাশাপাশি অনেকেই দেশের বাইরে বাড়িঘর করতে আগ্রহী হবেন। ফলে শঙ্কা বাড়বে অর্থ পাচার বৃদ্ধিতে।
জানা গেছে, আয়কর আইন ২০২৩-এর আওতায় উৎসে কর বিধিমালায় নতুন ওই কর নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২৬ জুন বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ওই বিধিমালা অনুযায়ী দেশের যেকোনো এলাকায় স্থাবর সম্পত্তি বা জমি ও ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তর এলাকাভিত্তিক ২৪ গুণ বা কোথাও এর চেয়েও বেশি কর গুনতে হবে। ক্রেতাকে জমি, ফ্ল্যাট বা যেকোনো স্থাপনা নিবন্ধনের জন্য শুধু উৎসে কর হিসাবে কাঠাপ্রতি ৩ লাখ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। যা ইতিপূর্বে ছিল ১৬ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা।
আয়কর বিধিমালার সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে কর আদায় শীর্ষক ৬ নম্বর ধারা অনুসারে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি নিবন্ধন কর ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে। গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম এলাকায় সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা ও জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা এলাকায় উৎসে কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের যেকোনো পৌরসভার আওতাধীন সম্পত্তি কর ২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ এবং বাকি এলাকাগুলোয় ১ শতাংশ থেকে কর বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দেন। আর ওই প্রস্তাবনা বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কর পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ বিএলডিএর : প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বিএলডিএ বলেছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকার অবস্থিত জমি, জমিসহ বাড়ি, যেকোনো স্থাপনা বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস হস্তান্তরের ক্ষেত্রে শুধু উৎসে কর হার ছিল দলিল মূল্যের ওপর ৪ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৪ শতাংশের পরিবর্তে দলিল মূল্যের ওপর ৮ শতাংশ অথবা বিভিন্ন এলাকার ওপর ভিত্তি করে কাঠাপ্রতি ২০ লাখ, ১২ লাখ, ১০ লাখ, ৮ লাখ, ৬ লাখ ও ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এলাকাভেদে কর হার ২৪ গুণের বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এত বেশি কর নির্ধারণের কারণে জনগণ জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহী হবে। এ ছাড়া দেশের বাইরে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে তারা। এসব কারণে বিদেশে অর্থ পাচারেরও সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি দেশের আবাসন খাতে চরম অস্থিরতা দেখা দেবে। উচ্চ কর হার অযৌক্তিক, অমানবিক, স্বেচ্ছাচারী এবং বাস্তবায়নের অযোগ্য উল্লেখ করে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রেজিস্ট্রেশন কর সহনীয় পর্যায়ে আনার লক্ষ্যে উৎসে কর পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। ওই কর বৃদ্ধির কারণে জমি কেনাবেচা কম হবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাবে।
এ ছাড়াও আবাসন ব্যবসার সঙ্গে প্রায় ১০ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এবং ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান। উৎসে করসহ অন্যান্য কর কমানো না হলে ১০ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে এবং ১ কোটি লোক বেকার হয়ে যাবে। যার ফলে দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে।
Leave a Reply