1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন আজ শুরু হচ্ছে থাইল্যান্ড সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আজ সংবাদ সম্মেলন করবেন নিষেধাজ্ঞা শেষে শুরু হচ্ছে সাগরে ইলিশ ধরা শিবালয়ে শ্রমিক লীগের উদ্যোগে মহান মে দিবস পালিত শিবালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন শিবালয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা আ.লীগ নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান প্রচণ্ড গরমে যা করলে সুস্থ থাকবেন গুচ্ছভুক্ত ২৪ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শনিবার

গ্রামের সাধারণ এক গৃহবধূ: জীবন সংগ্রামে হার না মানা ফাতেমা

  • সর্বশেষ আপডেট : বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১২৮ বার পড়েছেন

অনলাইন ডেস্ক: গ্রামের সাধারণ এক গৃহবধূ। তবুও বাকি দশজনের চেয়ে তিনি আলাদা। এক হাতে সামলেছেন অসহায় বরের সংসার; নিজের পড়াশোনা থেমে গেছে মাঝপথে-সেই ক্ষত বুকে চেপে অন্য হাতে শিক্ষিত করেছেন চার মেয়েকে। নিজের সব না পাওয়াকে পরিণত করেছেন পাওয়ায়। তাকে নিয়ে লিখেছেন নাজমুল আহমেদ রনি

ফাতেমা বেগম একটি নাম যা কখনো একটি সংগ্রামী জীবনের আলোকিত গল্প, কখনো হারিয়ে না যাওয়া মায়ের জীবন্ত এক ছবি। শত হতাশা নিয়ে বেঁচে থাকা একজন নারী, যিনি হতাশায় ডুবে না থেকে বারবার উঠে দাঁড়িয়েছেন নতুন আশা নিয়ে। ফাতেমা ভোরের সূর্যের মতো আলোকিত হয়েছেন নিজে এবং সে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন তার পরিবারকে। ফাতেমা একাধারে একজন স্ত্রী, জীবনে চলার পথে পিপাসিত হয়েও এগিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকেননি। কঠোর পরিশ্রম করে পরিশ্রান্ত তিনি নিজে হাসতে না জানলেও চার মেয়েকে হাসতে শিখিয়েছেন। দুঃখগুলো সঙ্গী করে এগিয়ে গেছেন যোদ্ধার মতো।

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে:

ফাতেমা বেগম তার বর খলিলুর রহমান এবং চার মেয়েকে নিয়ে আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামে বসবাস করেন। অসুস্থ খলিলুর রহমান পেশায় একজন রিকশাচালক। অভাব ছিল জীবনের নিত্যসঙ্গী। ভাড়ায় রিকশা চালাতেন তিনি। দিনশেষে মালিকের টাকা দিয়ে বাকি যা থাকে তা-ই নিয়ে বাড়ি ফেরেন। নিজের দুর্বলতার জন্য প্রতিদিন রিকশা চালাতেও পারতেন না। নিয়মিত ওষুধ খেতে হতো তাকে।

প্রাত্যহিক খরচের চাপে দিশেহারা লাগত ফাতেমার। অভাবের সংসারে বরের ওষুধ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। আতঙ্কে জমে যেতেন তিনি। সত্য বিবাহিত এক কিশোরী কীভাবে বুঝবে জীবনে অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু জীবন হাত ধরে শিখিয়ে দিয়েছে তাকে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়ানো সেই কিশোরীর চোখের টলটলে পানি সময়ের চাপে একসময় মুক্তো হয়ে উঠেছে।

কঠিন সেই দিনগুলো:

কিশোরীবেলার রঙিন দিনগুলো এক ঝটকায় যেন হারিয়ে গেল বিয়ে হওয়ার পর। শ^শুরের রেখে যাওয়া সামান্য জমিতে দোচালা মাটির ঘরই হয়ে উঠল ফাতেমার একমাত্র সম্বল। একদিকে অসুস্থ বর, অন্যদিকে সংসারে লেগে থাকা অভাব ফাতেমাকে পাগল করে তুলল। পরিস্থিতি সামাল দিতে একটি সেলাই মেশিন কিনে আনলেন। প্রতিবেশীদের কাপড়-চোপড় সেলাই শুরু করলেন। ঈদের সময় যখন কাজ বেশি থাকে তখন সারাদিন সংসারের কাজ সেরে রাত জেগে কাপড় সেলাই করেন। পাশাপাশি চলল হাঁস-মুরগি পালন।

এদিকে সময় গড়ায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংসারে যুক্ত হয় নতুন মুখ। দুজন থেকে তিনজন, চারজন। ক্রমে এই সংখ্যা ছয়জনে গিয়ে ঠেকে। কন্যাসন্তানকে বলা হয় সৌভাগ্যের প্রতীক। ধর্মীয় মানদ-ে এই কথাটা মানলেও, সামাজিক মানদ-ে কন্যার অবস্থান এখনও নড়বড়ে। একে একে চার কন্যার মা-বাবা হয়ে ওঠে ফাতেমা-খলিল দম্পতি। নিদারুণ অভাবের মুখে ফাতেমাই হয়ে উঠলেন সংসারের ত্রাতা। বাবার বাড়িতে অভাবের সংসারে পড়াশোনাটা করা হয়ে ওঠেনি ঠিকঠাক। এসএসসি পাস করে থামিয়ে দিতে হয়েছিল তার লেখাপড়া। বুকের ভেতরে সেই না পাওয়া

জমিয়ে রেখে মেয়েদের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়ান তিনি। সবগুলো মেয়েকে পড়াশোনা শেষ করানোর মিশনে নেমে পড়েন। কাপড় সেলাই আর হাঁস-মুরগি পালন করে সেই দিনগুলোর খরচ যেন চলছিল না।

উপার্জনের নতুন উপায় খুঁজতে হয় তাকে। নিজ বাড়ির আঙিনায় তো সবজি চাষ করতেনই, সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার অন্যের জমিতে সবজি চাষ শুরু করেন তিনি। পরিশ্রমী ফাতেমা এত পরিশ্রমের পরেও মনোবল হারাননি। কখনো সংসার, সন্তানদের প্রতি বিরক্ত হননি। জীবনের এ চলমান যুদ্ধের শেষ কোথায় তা জানেন না। তবু মেয়েদের পড়াশোনা শেষ করার প্রাথমিক লক্ষ্যে উতরে যেতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে গেছেন তিনি। মেয়েদের নিজ পায়ে দাঁড় করানোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে এসব পরিশ্রম তাই তুচ্ছ মনে হয় তার কাছে।

যোগ্য মায়ের যোগ্য মেয়ে:

ফাতেমার জীবনের সেরা অর্জন তার চার মেয়ে। জীবনের যে দুর্গম পথে পা বাড়িয়েছিলেন তিনি, তার শেষ কোথায় তিনি জানেন না তবু মেয়েদের মাঝে নিজের হারানো ছেলেবেলা খুঁজে পান তিনি। যতবার মেয়েদের দিকে তাকান নিজেকে পরিতৃপ্ত মনে হয় তার। বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি।

নিজের প্রচেষ্টায় কোনো রকমে এসএসসি পর্যন্ত গিয়ে থেমে যেতে হয়েছিল তাকে। ফাতেমা বেগম তাই মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই সচেতন। অভাবের সংসারেও মেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে যান। ফাতেমা স্বপ্ন দেখেন একদিন তার মেয়েরা লেখাপড়া করে চাকরি-বাকরি করবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত করবে নিজেদের। আর সেই স্বপ্নই ফাতেমার মাঝে এক নতুন আশার প্রদীপ জ্বালায়। ফাতেমা স্বপ্ন দেখেন শুধু তার মেয়েদের কীভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করবেন।

ফাতেমার চার মেয়ে। বড় মেয়ে সাবিনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে নিজ গ্রাম হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করছেন, দ্বিতীয় মেয়ে মাহমুদা চিনাইর বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত, তৃতীয় মেয়ে চিনাইর বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি অধ্যয়নরত এবং চতুর্থ মেয়ে হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

ফাতেমার কষ্টের দিনগুলো কাছ থেকে দেখেছেন তার প্রতিবেশী ও আশপাশের মানুষজন। হীরাপুর শহীদ নোয়াব মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের শিক্ষক মো. ইলিয়াছ খান ফাতেমা বেগমের মেয়েদের বিষয়ে বলতে গিয়ে জানান, ফাতেমার চার মেয়েই আমাদের স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে। তারা ছাত্রী হিসেবে খুবই মনোযোগী, মেধাবী ও পরিশ্রমী। সবসময় মেধাতালিকায় তাদের স্থান ছিল প্রথমদিকে। সর্বোপরি মেয়েগুলো আমাদের স্কুলের গর্ব।

ফাতেমা বেগমের বিষয়ে দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আয়েত আলী বলেন, ফাতেমা বেগম অনেক কষ্ট করে সংসার সামলে মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। মেয়েগুলোও একেকজন রত্ন। তারা কষ্ট করে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ফাতেমা বেগম একজন সফল নারী, সফল মা। কন্যাসন্তানের মায়েদের জন্য তিনি একজন অনুপ্রেরণা।

সুত্র:সময়ের আলো

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :