শাহজাহান বিশ্বাস: মানিকগঞ্জের শিবালয় অক্সফোর্ড একাডেমির প্রধান শিক্ষক আঃ মতিন খানের স্বেচ্ছাচারিতামূলক অনিয়মতান্ত্রিক বে- আইনী কার্যকলাপ ও দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বেশীর ভাগরই সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটি।
প্রকাশিত তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার অক্সফোর্ড একাডেমীর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিগত ০২/০৯/২০২৪ইং তারিখে অভিযোগের ভিত্তিতে ৬ (ছয়) সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দ্বারা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ সময় অভিযোগকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্য, পর্যালোচনা ও মন্তব্য সহকারে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন প্রতারণার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের তহবিল হতে নিজের মামলার ব্যয়ভারের নামে টাকা তুলিয়া নিজের ও আত্মীয় স্বজনদের নামে ৯৮.৫০ ডিঃ জমি ক্রয় করেন যাহার বর্তমান মূল্য ৪ কোটি টাকা।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিবিধ/উন্নয়নের নামে বিদ্যালয়ের ১৫০০ ছাত্র- ছাত্রীদের নিকট হতে উন্নয়নের নামে ৫ লক্ষ্যাধিক টাকা অত্মসাৎ করেন। অফিস সহকারি মোঃ ছবিল উদ্দিন, বক্তব্য মতে উক্ত টাকা প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের হিসাব তহবিলে জমা প্রদান করতে না দিয়ে নগদ টাকা হিসেবে আত্মসাৎ করেন। দৈনন্দিন আদায় রেজিষ্টার ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে অর্থ আত্মসাৎ-এর সত্যতা পাওয়া যায়। বিদ্যালয় উন্নয়নের নামে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে ৬,০০,০০০/- টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।
ভুয়া সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে শরীর চর্চা শিক্ষক জনাব মোঃ রাজা মিয়ার নিয়োগ প্রদান, ২০০৬ সালে করা হলেও যোগদান দেখানো হয়েছে ০২/০২/১৯৯৯খ্রিঃ, উক্ত সময়ে সরকারি কোষাগার হতে বিরাট অংকের টাকা অবৈধ ভাবে উত্তোলন করেন। শরীর চর্চা শিক্ষক জনাব মোঃ রাজা মিয়া কর্তৃক মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে মামলা চলমান এবং মাননীয় আদালতের রায়ই চূড়ান্ত বিবেচ্য।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হইতে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক রেখা রানী দত্ত থাকা সত্বেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার কারনে এখন পর্যন্ত তাকে এম.পি.ও ভুক্ত করেন নাই। বর্তমানে রেখা রানী দত্তের ৮,০০,০০০/- টাকার মতো বকেয়া পাওনা রয়েছে।
শিক্ষক/কর্মচারীদেরকে বিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত বেতনের অংশ ও উৎসব ভাতা বাবদ প্রায় অর্ধকোটি টাকা বাকী রয়েছে মর্মে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। বিগত ১৭ মাসের বেতন ভাতাদি ও বোনাস প্রদান করা হয়নি এই অভিযোগটি প্রমাণিত হয়েছে।
প্রত্যেক মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উন্নয়ন ও বিভিন্ন বিল ভাউচার দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমানিত।
জানুয়ারী ২০২৩ ও মার্চ ২০২৪ মাসের আয় ব্যায়ের বিবরণী তথ্য হতে প্রধান শিক্ষকের রুম মেরামত বাবদ ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ৪৭,৮০০/- ও ৯৪,৮৭২/- ব্যায় দেখানো হয় হয় যা সম্পূর্ন বিধি বর্হিভূত।
জুলাই ২০২৪ সালের কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়ার জন্য ৮৯,৮০০/- উত্তোলন করা হলেও উক্ত ট্রাস্টের একাউন্টে ২১,১০০/- টাকা জমা প্রদান করা হয় এবং (৮৯৮০০-২১১০০)=৬৮৭০০/- টাকা প্রধান শিক্ষক কর্তৃক আত্মসাৎ করেন এবং একই ভাউচারের উন্নয়ন ও মেরামত বাবদ ১,০৮,৬৭০/- টাকা খরচ করা হয় যাহার কোন অর্থ ও ক্রয় উপকমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত নয় এবং উত্তোলিত টাকার কোন প্রকার ভ্যাট আইটি জমা প্রদান করা হয় নাই।
আগস্ট ২০২৩ আয় ব্যায়ের বিবরণী তথ্য মতে বই ক্রয় বাবদ খরচ করা হয় ৬১,৬৫৮/- টাকা কিন্তু সরেজমিনে ৩৬ ধরনের বই পাওয়া যায় নাই যাহার বাজার মূল্য প্রায় ১০,০০০/- টাকা। অক্টোবর ২০২৩ এর আয় ব্যায়ের তথ্যমতে প্রধান শিক্ষক উন্নয়নের নামে ১১৫৭৩৫/- বিলভাউচার করেন যার মধ্যে ভুয়া ভাউচারের (মেসার্স রাতুল এন্টারপ্রাইজ) মাধ্যমে মাটি ভরাটের নামে ৫০,০০০/- টাকা আত্মসাৎ করেন। নভেম্বর ২০২৩ এর আয় ব্যায়ের তথ্যমতে ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ৮৮১৯০/- উত্তোলন করেন এবং অফিস রুমের ফার্নিচার বাবদ বিধি বর্হিভূতভাবে ১,২৬,৪৯৩ টাকা ব্যায় করেন। জুলাই ২০২২ আয় ব্যায়ের তথ্য মতে বিদ্যুৎ সার্ভিসিং এর নামে ব্যয় দেখানো হয় যা সম্পূর্ন বিষি বর্হিভূত।
প্রধান শিক্ষক নিজ ক্ষমতা বলে কোন প্রকার নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের ফান্ড হতে গভর্নিং বডির সভাপতিকে ১,০০,০০০/- টাকা প্রদান করেন যাহার স্বপক্ষে কোন প্রকার বিল ভাউচার পাওয়া যায় নি যাহা অর্থ আত্মসাৎ এর নামান্তর।
তদন্ত কর্মকর্তা মন্তব্য থেকে জানা গেছে, সামগ্রিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, আনিত অভিযোগ সমূহের অধিকাংশই সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। অত্র প্রতিষ্ঠানের ব্যায় নির্বাহের ক্ষেত্রে প্রচলিত সরকারি আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি অর্থ আত্মসাৎ-এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
উল্লেখ্য, শিবালয় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ ফারুক হোসেনকে প্রধান করে ৬সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন, বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম, উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার রাশেদ আল মাহমুদ কলেজ শাখার শিক্ষক মোহাম্মদ বাদল খান, স্কুল শাখার সহকারি শিক্ষক বিপ্লব কুমার বিশ্বাস, সহকারি শিক্ষক লিপি আক্তার।
Leave a Reply