অনলাইন ডেস্ক: জ্বালানি তেল কিংবা বৈদ্যুতিক চার্জ ছাড়াই চলছে গাড়ি! শুনতে খুব অদ্ভুত লাগছে তাই না? অদ্ভুত হলেও সত্যি। জ্বালানি তেল বা বৈদ্যুতিক চার্জ ছাড়া চলতে পারবে মাইলের পর মাইল। প্রয়োজন হবে শুধু মাত্র হাইড্রোজেন গ্যাস।
দূষণের এই যুগে কম্পিউটারের পরে যদি কোনো যুগান্তকারী আবিষ্কারের অবস্থান থাকে, তবে তা হবে ক্লিন ফুয়েলের ব্যবহার। আর, এমনই এক অসাধ্য সাধন করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার অটোমোটিভ এবং টেক কোম্পানি হাইপেরিয়ন ইনকোর্পোরেটেড।
‘এক্সপি-১’ নামে একটি প্রোটোটাইপ সুপারকার তৈরি করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এই প্রতিষ্ঠান; যা চলবে হাইড্রোজেন দিয়ে। তবে হাইড্রোজেন পুড়িয়ে নয়, বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। রকেট সাইন্সে অন্যতম এক জ্বালানি হাইড্রোজেন। আর, প্রতিদিনের যাতায়াত ব্যবস্থায় হাইড্রোজেনের জ্বালানি ব্যবহার মানেই শুরু হলো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির আরও একটি অধ্যায়ের উন্মোচন।
কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাসচালিত (সিএনজি) গাড়িগুলোর মতোই হাইপেরিয়নের এই ‘এক্সপি-১’-র জ¦ালানিতে ব্যবহার করা হয় উচ্চচাপে থাকা হাইড্রোজেন গ্যাস। বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে উচ্চচাপে থাকা হাইড্রোজেন বিক্রিয়া করে উৎপন্ন করবে বৈদ্যুতিক প্রবাহ। যা, চার্জ করবে গাড়ির ফুয়েল সেলগুলোকে। আর বিক্রিয়া থেকে পাওয়া চার্জের সাহায্যেই ঘণ্টায় ৩৫৫ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলতে পারে এই প্রোটোটাইপ সুপারকার। উচ্ছিষ্ট হিসেবে কার্বন ডাই-অক্সাইড বা ধোঁয়া নয়, নির্গত হয় পানি; যা পরম পরিবেশবান্ধব।
হাইড্রোজেনচালিত এ গাড়ির ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা বৈদ্যুতিক বা ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এক্সপি-১-এর মোটর ইঞ্জিন এক হাজারেরও বেশি হর্স পাওয়ার উৎপাদন করতে সক্ষম। আর এক ট্যাঙ্ক হাইড্রোজেন নিয়ে অনায়াসেই পাড়ি দিতে পারে ষোলশ কিলোমিটারেরও বেশি পথ।
জ্বালানি তেলপূর্ণ অবস্থায় ব্যাটারিযুক্ত অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় আয়তন সাপেক্ষে হাইড্রোজেন গ্যাস হালকা হওয়ায় এক্সপি-১-র ওজন অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে অনেক কম। সুপারকারটির ওজন মাত্র দুই হাজার ২৭৫ পাউন্ড বা এক হাজার ৩১ কেজি। ওজন কম হওয়ায় অন্যান্য গাড়ির তুলনায় দ্রুততম সময়ে গতিবেগ অর্জনে সক্ষম এই সুপারকার। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগ তুলতে যা সময় নেয় মাত্র ২.২ সেকেন্ড।
ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলো চার্জ হতে ২০-৪০ মিনিট সময় নিলেও হাইপেরিয়ান ‘এক্সপি-১-র সময় লাগে মাত্র দুই মিনিট। হাইড্রোজনে স¤পূর্ণ ট্যাঙ্ক পূরণ করতে সময় লাগবে মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিনিট।
এক্সপি-১-র কেবিন একটু বিলাসীভাবেই সাজানো হয়েছে। গাড়িটিতে রয়েছে ‘কি-লেস ইগনিশন সিস্টেম’ বা চাবিবিহীন ওয়্যারলেস প্রযুক্তি। গাড়িটির দরজা খুলতে কিংবা চালু করতে প্রয়োজন হয় না কোনো আন্যালগ চাবির। ড্রাইভিং কেবিনে রয়েছে একটি বিশাল ৯৮-ইঞ্চি কার্ভড স্ক্রিন, যা ড্যাশবোর্ড এবং সেন্টার কনসোলকে একীভূত করেছে। গাড়িতে রয়েছে ‘অল হুইল ড্রাইভ সিস্টেম’। যা, যেকোনো বিপত্তিকর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করবে চালককে। এ ছাড়াও এ গাড়িতে রয়েছে আরও বেশ কিছু আধুনিক প্রযুক্তি। যা নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি হাইপেরিয়ন।হাইড্রোজেনচালিত এক্সপি-১ গাড়িটির দাম এখনও নির্ধারণ করেনি হাইপেরিয়ান। তবে পারফর্ম্যান্সের ভিত্তিতে এর দাম পরিবর্তিত হবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির সিইও অ্যাঞ্জেলো কাফ্যান্টারিস। যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ ইউনিট এক্সপি-১ তৈরি করা হবে, বলে সম্প্রতি এক বিবৃতি দেয় হাইপেরিয়ন।
বর্তমান বাজারের হিসেবে এক হাজার হর্সপাওয়ারের গাড়িগুলোর দাম দুই থেকে তিন মিলিয়ন ডলার। তবে গাড়িটি কবে নাগাদ বাজারে আসবে এ নিয়ে স্পষ্টভাবে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
Leave a Reply