নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশাখের মাঝামাঝিতে পদ্মা জোয়ারের পানি আসতে না আসতেই আবারও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নতুন করে নদী ভাঙনের আতংকে রয়েছে পদ্মাপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ।
জানা যায়, প্রায় পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনে এ ইউনিয়নের ভৌগলিক অবস্থানের প্রায় ৭০ শতাংশই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত প্রায় এক মাস আগে নদীতে জোয়ারের পানি আসতেই উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি থেকে উপজেলার সীমান্তবর্তী মালুচী ঘাট এলাকায় তীব্র স্রোত এবং ঢেউয়ের আঘাতে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেয়। এতে করে এ এলাকার বেশ কিছু ফসলের জমি নদী গর্ভে চলে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বেশ কিছু বসতবাড়িসহ গাছপালা।
রোববার বিকেলে ভাঙনকবলিত এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এলাকা নিয়ে জোয়ারের পানির তীব্র স্রোত আর ঢেউ আঘাতে নদীর তীরে ধসে পড়ছে। এসব এলাকায় নদী তীরবর্তী কৃষিজমির অনেক জায়গায় ৫০ ফিট দৈর্ঘ্য এলাকা নিয়ে ফাটল ধরতেও দেখা যায়। একাধিক স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় নদীর তীরবর্তী স্থানে পানির গভীরতা বেশি হওয়ায় গত কয়েকদিনে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র স্রোত এবং ঢেউয়ের আঘাতে আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এ এলাকায় ইতিপূর্বে নদী শাসনের কাজে কখনও জিও ব্যাগ ফেলোনো হয়নি বলেও স্থানীয়রা জানান।
মালুচী গ্রামের বাসিন্দা, গোপাল সরদার জানান, আমার বাড়ি এক ভাঙন দিছে। এখনও আছি পদ্মা পাড়েই। কখন জানি এটুকুও চলে যায়। গত ২০/২৫ দিন আগে পানি বাড়ায় সাথে সাথে আবার ভাঙন শুরু হইছে। তবে ২/৩ দিন ধরে পানি কমতে থাকায় আপাতত ভাঙতেছে না। পানি বাড়া শুরু হলে আবার ভাঙন শুরু হইব। সামনে বিশাল চর জেগে উঠলেও তীরে নদীর গভীরতা বেশি। তাই স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতটা বেশি লাগে। তাই ভাঙনও দেখা দেয়। এখানে আগে কখনও জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি। তাই দ্রুত জিও ব্যাগ না ফেললে এই ইট সোলিং রাস্তাসহ পুরো চাপটাই নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
একই গ্রামের নোয়াব আলী বলেন, কুশিয়ারচর পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়েছে। আর শিবালয়ের শেষ সীমানা মালুচী ঘাটের পশ্চিমে জিও ব্যাগ পড়েছে। মাঝের এই জায়গাটুকুতে এখনও জিও ব্যাগ পড়েনি। গত কয়েকদিনে জোয়ারের পানি আসতে শুরু করায় এই এলাকায় আবার ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। এখানে পানির গভীরতাও বেশি। তাই এখনই ভাঙনরোধ করা না হলে পানি বাড়া শুরু হলেই বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিতে পারে। দেখেন, কত জায়গায় লম্বা হয়ে জমিতে ফাটল দেখা দিছে। পানি বাড়লেই এসব ফাটল ধরা জমি নদীতে ধসে পড়বে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক জানান, কোটকান্দি ওসমানের বাড়ি হতে মালুচি ঘাট পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কুশিয়ারচর বিল্লাল মেম্বাবের বাড়ি পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়লেও তারপর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এখনও কোনো জিও ব্যাগ পড়েনি। জোয়ারের পানি আসতে না আসতেই ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কোটকান্দি এলাকায় জিও ব্যাগ নিয়েও নদীতে ধসে পড়ছে। আমি বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আবার পানি বাড়ার সাথে সাথে বড় ধরনের ভাঙন দিতে পারে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন জানান, হরিরামপুরের বেশিরভাগ এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে নদী শাসনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট কোটকান্দি থেকে মালুচি ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার, কাঞ্চনপুরে আরও ৫০০ মিটার এবং আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ চরাঞ্চলে ৫০০ মিটার করে মোট ২৭০০ মিটার নদী তীরবর্তী এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর জন্য মানিকগঞ্জ-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বরাবর বাজেটের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে। বাজেট অনুমোদন পেলেই আমরা এসব এলাকায় কাজ শুরু করতে পারব।”
তবে আমাদের যে পরিমাণ চাহিদা দেখা দেয়, সে অনুযায়ী বাজেট খুবই সীমিত। তাই আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেক সময় অনেক কিছু করতে পারি না বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, প্রায় পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনের ফলে এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নর হাজার মানুষ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি জমি জমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছরে এ উপজেলার ধূলশুড়া ইউনিয়ন থেকে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে তীর রক্ষা কাজে শতশত কোটি টাকার জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী তীর রক্ষা বাধ নির্মাণের কাজ করা হয়েছে। এরপরেও বর্তমানে পদ্মার ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়েই এ উপজেলার কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস।
Leave a Reply