অনলাইন ডেস্ক: সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে আসা সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার কথা সকাল সাড়ে ৭টায়। ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইটটি প্রায় আড়াই ঘণ্টা আকাশে চক্কর মেরে সকাল সোয়া ১০টায় অবতরণ করে। অন্যদিকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের দোহা ও শারজাহ থেকে ঢাকাগামী দুটি ফ্লাইট এবং আবুধাবি থেকে ঢাকাগামী এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইট দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে অবতরণে ব্যর্থ হওয়ায় সেগুলোকে কলকাতা বিমানবন্দরে পাঠানো হয়। পরে ফ্লাইটগুলো সেখানে নিরাপদে অবতরণ করে। মিয়ানমারে অবতরণের ঘটনাও রয়েছে। এ ছাড়া ফ্লাই দুবাইয়ের দুবাই থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইট ঢাকায় না নেমে চট্টগ্রামে অবতরণ করতে হয়েছে। শীতকালে কুয়াশা বাড়লে শাহজালালে এটা প্রায় প্রতিদিনের চিত্র। তবে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তি স্থাপন করা হলে এ সমস্যা সহজেই সমাধান হতো।
সাধারণত ফ্লাইট অবতরণের সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে রানওয়ে দেখতে না পেলে পাইলট আকাশে চক্কর দিতে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে অবতরণের জন্য বিমানবন্দরগুলোতে ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে পাইলট সহজে রানওয়ে শনাক্ত করে নিরাপদে অবতরণ করতে পারেন। দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘন কুয়াশা বা প্রচ- ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও রানওয়ে স্পষ্টভাবে দেখার জন্য ‘ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম-আইএলএস-১’ অনেক আগে স্থাপন করা হলেও ঘন কুয়াশায় তা কাজ করছে না। ফলে অবতরণ করতে না পেরে পাইলটকে কিছুক্ষণ আকাশে চক্কর দিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। পরে রানওয়ে দেখতে পেলে ফ্লাইট অবতরণ করান তিনি। না দেখতে পেলে কাছাকাছি বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেন। এ পরিস্থিতিতে শাহজালালে প্রতিদিন ফ্লাইট অবতরণ বা উড্ডয়নে বিঘœ ঘটছে। দেরিতে ফ্লাইট ছাড়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। সময়মতো গন্তব্যে যেতে না পেরে কেউ কেউ কানেক্টিং ফ্লাইট মিস করছেন।
শুধু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নয়, অভ্যন্তরীণ কোনো বিমানবন্দরে এ প্রযুক্তি কার্যকর না থাকায় সেখানকার যাত্রীরাও ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। সম্প্রতি সৈয়দপুরে নামতে না পেরে দুটি ফ্লাইট ফিরে আসে শাহজালালে।
অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীত এলেই শাহজালালে কুয়াশার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফ্লাইট বিপর্যয় ঘটে। গত কয়েক দিন ধরে ৪-৬ ঘণ্টা ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশে ঘন কুয়াশাতেও প্রতিনিয়ত ফ্লাইট ওঠানামা করে। কারণ তাদের রয়েছে উন্নত আইএলএস প্রযুক্তি। সময়মতো অবতরণ করতে না পারায় ফ্লাইট সিডিউলে বিঘ্ন ঘটছে। বাড়ছে ভোগান্তি, ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ যা উড়োজাহাজ মালিকদের পকেট থেকেই যাচ্ছে। অথচ বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো উন্নত প্রযুক্তি স্থাপন করলে সহজেই পুরো সমস্যার সমাধান হতো।
কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়া কোনোটিতেই বৈরী আবহাওয়ায় উড়োজাহাজ ওঠানামার উন্নত আইএলএস প্রযুক্তি নেই। যে তিনটি বিমানবন্দরে এ প্রযুক্তি আছে তাও অনেক পুরোনো। ফলে ঘন কুয়াশা কিংবা ঝড়-বৃষ্টির কারণে দৃষ্টিসীমা কমে এলেই বিঘিœত হয় উড়োজাহাজ চলাচল। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে আইএলএস প্রযুক্তি রয়েছে তার দৃষ্টিসীমা ৬০০ মিটার। শীতকালে ঘন কুয়াশায় প্রায়ই বিমানবন্দরের রানওয়েতে দৃষ্টিসীমা নেমে আসে ৫০ থেকে শূন্য মিটারে। ফলে পুরোনো আইএলএস-১ দিয়ে ফ্লাইট ওঠানামা করানোয় বিঘ্ন ঘটছে।
বৈরী আবহাওয়ায় বিশে^র বিভিন্ন দেশে আইএলএস-২, আইএলএস-৩, আইএলএস-৩-এ-বি-সি ব্যবহার করা হয়। প্রযুক্তি যত উন্নত হবে তার খরচও তত বেশি হবে। শাহজালালের থার্ড টার্মিনালে আইএলএস-২ প্রযুক্তি স্থাপনের কাজ চলছে। এটার দৃষ্টিসীমা ২০০ মিটার পর্যন্ত। তখন এ সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে। তবে আইএলএস-৩ স্থাপন করলে কোনো সমস্যাই থাকবে না।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে প্রতিদিন সকালে ৭-৮টি করে ফ্লাইট ডাইভার্ট হচ্ছে। ইদানীং সিলেট, কলকাতায় গিয়েও নামতে হচ্ছে। এতে আমাদের তেল খরচ, ল্যান্ডিং চার্জসহ অপারেশন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যাত্রীদের ভোগান্তিও হচ্ছে। আবার আমরা সিডিউল যথাযথভাবে রক্ষা করতে পারছি না। আশা করছি, কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শাহেদ আহমেদ খান সময়ের আলোকে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় সকালে ঘন কুয়াশার জন্য কিছু ফ্লাইট অবতরণ করতে না পারায় সেগুলো সিলেট, চট্টগ্রাম ও কলকাতায় ডাইভার্ট হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কমে গেলে বিমানবন্দরের ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড এবং রেগুলেশন বিভাগের পরিচালক একেএম ফাইজুল হক সময়ের আলোকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে কিছু ফ্লাইট নামতে পারছে না। আমাদের উন্নত প্রযুক্তি নেই। আইএলএস-২ স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া রানওয়েতে অ্যাপ্রোচ লাইটও বসাতে হবে। এটা হলে সমস্যা কেটে যাবে। ২০০ মিটার ভিজিবিলিটিতেও উড়োজাহাজ অবতরণ করতে পারবে। তবে জিরো ভিজিবিলিটিতে উড়োজাহাজ নামতে পারবে না। এ জন্য আমাদের ক্যাটাগরি-৩-এ উন্নীত করার প্রয়োজন হবে। উন্নত প্রযুক্তির জন্য অর্থও বেশি খরচ করতে হয়।
Leave a Reply