অনলাইন ডেস্ক: বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কৃপা লাভের আশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করেছেন পুণ্যার্থীরা। এর মধ্যে জগন্নাথ হলের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও অনুষদের অংশগ্রহণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুণ্যার্থীদের ঢল নামে জগন্নাথ হল মাঠে। এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবেও সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কার্যক্রম শুরু হয়। মূল পূজা শুরু হয় ৯টা ১৫ মিনিটে।
এরপরে চলে পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ। পূজা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজায় অংশ নিয়েছেন। পরে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। হিন্দু ধর্ম মতে, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চেপে দেবী সরস্বতী জগতে আসেন। আর বিদ্যা, বাণী ও সুর পাওয়ার আশায় সরস্বতীর পূজায় নিবেদিত হন পূজারিরা। এবার জগন্নাথ হল মাঠে ৭১টি বিভাগের নিজস্ব প্রতিমা, চারুকলা অনুষদের একটি ও হলের একটিসহ মোট ৭৩টি প্রতিমা স্থাপন করা হয়। চারুকলা অনুষদের প্রতিমাটি হলের পুকুরে এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমাটি হলের উপাসনালয়ে স্থাপন করা হয়। এবার পূজা পরিচালনা করেন হল উপাসনালয়ের পুরোহিত সাধন চক্রবর্তী।
গত দুই বছর করোনার কারণে পূজা উদযাপন বন্ধ থাকায় এবার ব্যাপক পরিসরে পূজা উদযাপন করা হয়েছে বলে জানান ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শিশির দাস। তিনি বলেন, গত দুই বছর আমরা পূজা উদযাপন করতে পারিনি ঠিকই কিন্তু এবার বিরতি দিয়ে পূজা উদযাপন করছি। এটা গত কয়েক বছরের তুলনায় সেরা উদযাপন।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে পরিবারসহ পূজায় এসেছিলেন দেবলাল চক্রবর্তী। এত বড় পরিসরে পূজা উদযাপন ও সুন্দর পরিবেশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার খুবই ভালো লাগছে। আমি পরিবারসহ এখানে এসেছি। পুরো পরিবেশটাই উৎসবমুখর দেখে আনন্দিত।
এদিকে সরস্বতী পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হলেও উৎসব ছেয়ে গেছে বাকি সব শিক্ষার্থীর মাঝে। গতকাল সকাল থেকে পূজা উদযাপন করতে মাঠে এসেছিলেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রঞ্জু ইসলাম। তিনি বলেন, আমি পূজায় এসেছি সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। বেশ ভালোই লাগছে।
পূজার অনুষ্ঠানের সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, সকাল থেকেই পূজায় মানুষের ঢল ছিল। এত মানুষ আসবে আমরা সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। যেহেতু দুই বছর পরে আমরা পূজা উদযাপন করছি সবার মধ্যেই বেশ উৎসব উৎসব একটি রেশ দেখা গেছে। আর আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে কঠোর অবস্থানে ছিলাম। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপিত হয়েছে।
এদিকে করোনা সংক্রমণের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) গত দুই বছর সরস্বতী পূজার আয়োজন হয় সীমিত পরিসরে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সরস্বতী পূজা উদযাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিটি বিভাগ, ইনস্টিটিউট, হল প্রশাসন আলাদাভাবে এই পূজা উদযাপন করছে। বিভাগগুলো নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ৩৪টি বিভাগ, দুটি ইনস্টিটিউটসহ, ছাত্রী হল ও আলাদা আলাদা মোট ৩৭টি পূজামণ্ডপে এই পূজা যথাযথ ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
Leave a Reply