অনলাইন ডেস্ক: পৃথিবীতে চলতে হলে কাউকে না কাউকে অনুসরণ করে চলতে হয়। কারণ মানুষ নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অজ্ঞ, কর্মনীতি ও কর্মকৌশলে অনেক ক্ষেত্রেই অনভিজ্ঞ। কর্মপরিণতির ব্যাপারেও অনিশ্চিত। তাই তার কর্মগুলো সুন্দর, পরিপাটি ও অর্থবহ করার জন্য ইচ্ছা-অনিচ্ছায়, বুঝে না বুঝে কাউকে না কাউকে অনুসরণ করতেই হয়। বিষয়টি যেমন প্রাকৃতিক তেমনি প্রয়োজনীয়ও বটে। ইসলাম মানুষের এই প্রাকৃতিক প্রয়োজনটাকে অবহেলা করবে তো দূরের কথা বরং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তবে যে কারও অনুকরণের মধ্যেই যে কল্যাণ, তা কিন্তু নয়। তাই ভালো-মন্দ উভয় দিক বিবেচনা করে মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
যদি এমন কাউকে অনুসরণ করা হয়, যিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান শেখাবেন; কিন্তু আত্মীয়তার সুসম্পর্ক রক্ষায় কোনো ফর্মুলা দিতে পারবেন না। যিনি দর্শন শেখাবেন; কিন্তু পরিবারের সুন্দর ব্যবস্থপনা জ্ঞান দিতে পারবেন না। হয়তো ব্যবসায় প্রচুর মুনাফা অর্জনের পলিসি শেখাবেন; কিন্তু ধোঁকা না দিয়ে পরিপূর্ণ সততার সঙ্গে ব্যবসায় শিক্ষা দিতে পারবেন না। প্রচ- রকম উদারতা শেখাবেন; কিন্তু নিপীড়িত মানুষের পক্ষে জালিমের বিপক্ষে কথা বলার অনুমতি দেবেন না। হয়তো না খেয়ে মরে যাওয়ার মতো তপস্যা শেখাবেন; কিন্তু সৎভাবে আয়-উপার্জন করার সঠিক পথটি গুরুত্বের সঙ্গে মানার কথা বলবেন না। আবার হয়তো একটি সুন্দর সকাল উদযাপনের নির্দেশনা দেবেন; কিন্তু বিকালটা কীভাবে কাটানো হবে, সেটি বলতে পারবেন না। কেউ হয়তো জগতের সব ভালো কাজের পরামর্শ দিতে পারবেন; কিন্তু যাবতীয় অন্যায় থেকে কীভাবে বেঁচে থাকা যায় সে পদ্ধতি বাতলে দিতে পারেন না। তাহলে এমন ব্যক্তিকে কীভাবে অনুসরণ করা যায়; যিনি নিজেই অপূর্ণাঙ্গ বা যার জ্ঞান আংশিক। আর অনুকরণের ক্ষেত্রে কোনো একজনকেই পূর্ণাঙ্গরূপে অনুকরণ না করা হয়, তা হলে জীবনের বহু ক্ষেত্রে দ্বিমুখিতার মুখোমুখি হতে হবে, যা যেকোনো বিবেকবান মানুষের জন্য বেমানান।
আংশিক আদর্শ অনুকরণে দ্বিমুখিতার উদাহরণ বলা যায়-এমন একজনকে অর্থনীতিতে মান্য করা হলো, যার আদর্শ-‘অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে সুদে কোনো ক্ষতি নেই, কোনো অন্যায় নেই’। পক্ষান্তরে ব্যক্তিজীবনে আরেকজনকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হলো-যিনি বলেছেন, ‘সুদ মহাপাপ’। এখন কোনো একজন মানুষ যদি একই সময়ে বিপরীতমুখী এই দুটি আদর্শ অনুসরণ করতে চায়, তাহলে এমন হবে যে, একজনের আদর্শ মেনে সে সারা দিন কুলুর বলদের মতো সুদি কারবারে মজে রইল, আর রাতে আরেকজনের আদর্শ মানতে গিয়ে দিনের উপার্জিত অর্থ থেকে পরিপূর্ণভাবেই বঞ্চিত হলো। এমনিভাবে একজনের আদর্শে ‘নারী-পুরুষ দুজনের সম্মতিতে যৌনকর্মে কোনো দোষ নেই।’ আরেক জনের আদর্শে ‘বৈধ পন্থায় বিবাহের মাধ্যম ছাড়া, শুধু নারী-পুরুষের সম্মতিতে যৌনকর্ম গুরুতর অন্যায়।’
দুনিয়াতে এমন কোনো মানুষ আছে কি? বিপরীতমুখী দুটি রীতি একজন ব্যক্তির মাঝে একত্রে সমন্বয় করতে পারবে? সুতরাং তাকে দেখেশুনে, জেনে-বুঝেই এমন কাউকে নিজের আদর্শ বা মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, যাকে অনুসরণ করলে পূর্ণাঙ্গ জীবনের একটি গাইডলাইন পাওয়া যাবে এবং জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই আদর্শ সংকটে পড়বে না। আর এমন ব্যক্তিই হচ্ছেন মুহাম্মাদ (সা.)। নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলে মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর সুমহান আদর্শের দ্যুতি পাওয়া যাবে। পবিত্র কুরআনে সুরা আহজাবের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘রাসুল (সা.)-এর মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।’ মহান আল্লাহ সবাইকে নবীজির জীবন অনুসরণের তওফিক দিন।
Leave a Reply