
শহিদুল ইসলাম: ঐতিহ্যবাহী শিবালয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ! ক্রীড়ামুদি ও খেলোয়ারদের জন্য যা প্রস্তুত হয় ১৯৪৯ সালে। সে থেকেই এ মাঠে ফুটবল. ভলিবল, বাস্কেট ও ক্রিকেটেরমতো জমকালো নানা নানা টুর্ণামেন্টের আয়োজন চলছে। যার অধিকাংশই আয়োজন করেছে শিবালয় মহামেডান ইয়ুথ ক্লাব ও উদীয়মান যুব সংঘ। ৮০ দশকের শুরুতে স্থানীয় যুব ও ক্রিড়াপ্রেমীদের সমন্বয়ে যাত্রা শুরু করা উদীয়মান যুব সংঘ পথ চলার পথিমধ্যে উঁছুট খেলেও পিঁচু ফিরে তাকাতে হয়নি মহামেডান ইয়ুথ ক্লাব নামক এ সংগঠনটিকে।
জাতীয় ও সামাজিক নানা কর্মকান্ডে অংশ নেয়া এ ক্লাবের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বিশেষকরে প্রতি বছরের ফুটবল টুর্ণামেন্টের মাধ্যমে সংগঠনটির জনপ্রীয়তা দাঁড়ায় আকাশচুম্বি। এ ক্লাবের আয়োজনে ফুটবল টুর্ণামেন্টে অংশ নেয়া বিভিন্ন দলের হয়ে মাঠের দর্শকমাতান স্থানীয় ও দেশ সেরা জাতীয় দলের তৎকালীন খেলোয়াররা। দেশীয় খেলোয়ারদের সাথে অংশ নেন বিদেশি খেলোয়াড়রাও।
ফুটবলের পাশাপাশি ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে এ ক্লাব দেশের গন্ডি পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী ভারতের কলকাতায় আয়োজিত ক্রিকেট টুর্ণামেন্টেও অংশ নেন। বিভিন্ন সময়ে এ ক্লাবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মঞ্চ নাটক। ঐতিহাসিক নাটক নবাব সিরাজদৌলা, এক পয়সার আলতা, স্বামীর চিতা জ্বলছে, অভিসপ্ত ফুলশয্যাসহ নানা নাটকে অংশ নিয়ে স্থানীয় শিল্পিরা বেস সুনাম কুড়ান। সুষ্ঠুধারার ক্রিড়া ও সাংস্কৃতি মহল যেন ছিলো এ ক্লাবের দখলে। কিন্তু বর্তমানে এ চিত্র যেন সম্পুর্ণ উল্টো।
যা হোক, আবারো ফিরে আসি সরকারি স্কুলের এ খেলার মাঠে। স্বাধিনতা পরবর্তী জনপ্রীয় ফুটবলের কথা দিয়েই শুরু করছি। মাঠে যে কোন টুর্ণামেন্টে অংশ নেয়া খেলোয়াড়রা গায়ে রং-বেরঙ্গের জার্সি ও পায়ে স্পাইকযুক্ত বুট পড়া খেলোয়ারদের সাথে পায়ে শাড়ি কাপড়ের পাইর পেঁচিয়ে ফুটবলের নৈপুর্ন দেখিয়েছেন ঘটাদা, কিয়াম উদ্দিন, আমীর উদ্দিন, আব্দুর জব্বার, আবুল হাসেমসহ নাম নাজানা আরোও অনেকেই। যারা আজ অনেকেই প্রয়াত। ৮০ দশকে জনপ্রীয় স্থানীয় ফুটবলার কল্যাণসাহা, বাবুল আকতার, কালাম, হারুন, বাক্কু, ফরিদ, গুরুদাস, মজিবর, অমলেশ, কদম, শাহজাহান, মজিদ, আলতাব, হাফিজ, আতিক, ভ্যাম্বল, আওয়াল এদের কথা না বললেই নয়। প্রতিটি টুর্ণামেন্টেই এ মাঠে এদের ফুটবল নৈপুর্ণ দর্শকদের মাতিয়ে তুলেছে। মাঠে খেলা পরিচালনা করেছে বা.ফু.ফে স্বিকৃতি প্রাপ্ত রেফারিরা। যার মধ্যে মোখলেছুর রহমান সেলিম ছিলেন বেশ প্রীয়মুখ।
মহামেডান ইয়ুথ ক্লাব ৯০ দশকে এ মাঠে নিয়মিত আয়োজন করতো ফুটবল টুর্ণামেন্ট। এতে অংশ নিতেন ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, টাংগাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের নাম করা ফুটবল দল।
খেলার উদ্বোধনী ও চুড়ান্ত পর্বে অতিথি করা হতো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি উচ্চপদস্থ্য কর্মকর্তাদের। বাদ জাননি যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীও। টুর্ণামেন্টে বিভিন্ন দলের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছেন জাতীয় দলের আসলাম, কায়সার হামিদ, এ্যামিলি, সাব্বির, গাউস, আরমান, পাবনার প্রিন্স, বকুল, রানা, ঢাকার নারায়নগঞ্জের মনসুর স্পোর্টি ক্লাব, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশের খেলোয়ার। এদের মধ্যে এ মাঠে বেশির ভাগ জয় পেয়েছেন সেনাবাহিনীর খেলোয়ারা।
এ সকল খেলোয়ারদের নৈপুর্ন দেখতে দুপুর গড়াতেই মাঠের চার পাশ কনায়-কনায় ভড়ে ঊঠতো উৎসুক দর্শকদের পদচারনায়। মাঠে বাদাম, আখ, আমড়া, আইসক্রিম বিক্রেতাদের হাক-ডাকে মুখরিত থাকতো দর্শকরা।
আশি ও নব্বই দশকের পর ২০০০ সালের পর এ মাঠে আর তেমনটি গড়াইনি ফুটবল। আয়োজকরাও ফুটবল ছেড়ে জড়িয়ে পড়েন নানা রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডে। ফুটবলের পরিবর্তে মাঠে বিভিন্ন সময়ে আড্ডা জমে উঠতি বয়সী মাদকসেবীদের। ধীরে-ধীরে নিরবে নিভুতে প্রাণ হারায় এ মাঠের ফুটবল। জৌলুস হারায় মহামেডান ইয়ুথ ক্লাব নামক ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক প্রেমী স্থানীয় বৃহৎ এ সংগঠনটি। দুঃখজনক হলেও রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে যার পুরোটাই ধ্বংস হয় ২০২৪ সালে।
এ অবস্থায় সুস্থ্য ধারার বিনোদন ও জনপ্রীয় ফুটবলকে আবারোও উজ্জীবিত করতে প্রাক্তনদের সহায়তায় অধুণালুপ্ত মহামেডান ইয়ুথ ক্লাব যেন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ক্লাবের হাল ধরেছেন উদ্দমীরা। এরা সরকারি স্কুলের এ মাঠে আয়োজন কছেন ‘শহীদ জিয়াস্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’২৫। টুর্ণামেন্টে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন জেলার আটটি দল। এ যাত্রায় ফুটবলসহ এলাকায় সুস্থ্য বিনোদন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে এ আসা সকলের।
তবে, স্থানীয় সাংস্কৃতি ও ক্রিড়াংঙ্গণকে ধ্বংস করতে কারা কতটুকু কলকাঠি নেরেছেন-অপকর্মে কাদের ইন্দন ছিলো আগামীতে বলবো তাদের কথা। সাথে থাকুন-সুস্থ্য থাকুন।
Leave a Reply