শাহজাহান বিশ্বাস:মানিকগঞ্জের শিবালয়ে ভোটের মাঠে তিন খানের লড়াইয়ে জমে উঠেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এর মধ্যে একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ অপর দু’জন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ভোটের মাঠে একজন নতুন মুখ, অপর দু’জনের একজন বর্তমান চেয়ারম্যান আরেকজন সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমান আর সাবেকের মধ্যে চলছে অস্তিত্বের লড়াই। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ, রয়েছেন মুখোমুখি শক্ত অবস্থানে। প্রচার-প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। কর্মীসমর্থকদের মধ্যে বাকবিতন্ডা, হামলা-মামলার মতো ঘটনা ঘটছে এবং প্রকাশ্যে চলছে ভোটের লড়াই। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে যিনি নতুন মুখ, তিনি বিজয়ের আশায় ঠান্ডা মাথায় কচ্ছপ গতিতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনায় চষে বেড়াচ্ছেন পুরো উপজেলা।ফলে তিনি অল্প দিনে, স্বল্প সময়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনা-সমালোচনায় এসেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ইতিপূর্বে প্রার্থীর গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ,গুলি বর্ষণ, প্রতিবাদে পাল্টা-পাল্টি মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ এবং হামলা-মামলার মতো বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনায় মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার মধ্যে সবার দৃষ্টি এখন শিবালয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিকে।
জানা গেছে, ৬ষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আসন্ন শিবালয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১শে মে। এ উপজেলার মোট ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৩১ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৪২৬ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ৭৫ হাজার ৮০৫ জন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন ৩জন, ভাইস চেয়াম্যান পুরুষ ৭জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যন ৪জন। এর মধ্যে দুই চেয়ারম্যান প্রর্থী রয়েছেন কঠোর অবস্থানে। ফলে এ দু’জনকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনা-সমালোচনায় মুখোরিত হয়ে উঠেছে শিবালয় উপজেলাসহ পুরো জেলা।
চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের পরিচিতি:
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রেজাউর রহমান খান জানু প্রতীক(আনারস)।উপজেলার বাউলীকান্দা গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ খানের পুত্র। তিনি পশ্চিম মানিকগঞ্জের মধ্যে আলোচিত খান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ১৩ জনের অধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন বলে পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে। রাজনীতিই তার নেশা-পেশা।তিনি বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পর পর দুই বারের শিবালয় উপজেলা আওয়ামীলীগের নির্বাচিত সফল সভাপতি।এর আগে শিবালয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেছেন তিনি।তার বড় ছেলে ফাহিম রহমান খান রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদকের দায়ীত্ব পালন করছেন। ছোট ছেলে ফুয়াদ রহমান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি’র সাবেক সহসভাপতি ছিলেন, বর্তমানে শিবালয় উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য। প্রয়াত ছোট ভাই সাইফুর রহমান খান সুলতান একাধিকবার আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে তার ছেলে মোনায়েম মুনতাকিম রহমান খান অনিক আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।বড় ভাই প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিন্সিপ্যাল আব্দুর রউফ খান এরশাদের শাসনামলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৯৮৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রয়াত বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ খান মারা যাবার আগ পর্যন্ত আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
অপর প্রার্থী উপজেলার দাশকান্দী গ্রামের কফিল উদ্দিন খানের ছেলে মো: আব্দুর রহিম খান। তার পুর্ব পুরুষের রাজনৈতিক পরিচিতি না থাকলেও আরিচা ঘাটের সফল ও পরিশ্রমী ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে করেছেন তিনি। শিল্পপতি,
শিক্ষানুরাগী, জনদরদী ও সমাজসেবক হিসেবে ভাল পরিচিতি রয়েছে তার। প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ৯০ এর দশকে। ফরিদপুরের আটরশির জাকের পার্টির সাথে যুক্ত হয়ে আব্দুর রহিম খান মানিকগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এলাকায় দানবীর হিসাবে তার একটা পরিচিতি রয়েছে। ফলে তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই উপজেলায় বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছিলেন তিনি। পরে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি (দোয়াত কলম) প্রতিক নিয়ে ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার প্রতিও সাধারণ মানুষের সহানুভূতি চোখে পড়ার মতো।
অপরদিকে উপজেলায় এবারই প্রথম চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে (মোটর সাইকেল) প্রতিক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে খান পরিবারের অপর সদস্য মোবারক হোসেন (পান্নু খান) তিনি উপজেলার নালী ধুতরাবাড়ী গ্রামের মোহন খানের ছেলে।তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই।কর্মজীবনে ইউনিয়ন পরিষদের একজন সচিব ছিলেন। ১৯৯২ সালে ইউনিয়ন পরিষদের সরকারী এই চাকরিতে যোগদানের পর ২০০৭ সালে তিনি চাকরী ছেড়ে যোগদান করেন বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে।বর্তমানে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী হিসেবে সফলতা অর্জন করেছেন তিনি। এলাকায় ঠান্ডা এবং ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার।
উল্লেখ্য, গত ২ মে নির্বাচনী প্রতিক বরাদ্দের পর থেকেই সরব হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। পাবলিক প্লেস ও জনগুরুত্বপূর্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের ছবি ও প্রতিকযুক্ত নানা ধরনের পোস্টার,ব্যানার ও ফেস্টুন। প্রাথীরা ভোট প্রার্থনায় ঘুরছেন দ্বারে-দ্বারে। স্থানীয় হাট-বাজার,হোটেল-রেস্তোরা ও চায়ের আড্ডায় ভাইস-চেয়ারম্যান নিয়ে তেমন আলোচনায় না থাকলেও চেয়ারম্যান পদে ভোটের হিসেব-নিকেস কসছেন সাধারন ভোটার ও কর্মী-সমর্থকরা
Leave a Reply