অনলাইন ডেস্ক:চলমান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে, উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ৯ মাসে দেশটিতে ৭ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫১ শতাংশ বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিসিয়াল সোর্স ‘অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা)’ এ তথ্য প্রকাশ করেছে। গতকাল রোববার বাংলাদেশে এ তথ্য জানিয়েছে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সময়ের আলোকে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হচ্ছে-যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চেইনশপ ওয়ালমার্টসহ শীর্ষ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত কয়েক মাস অনেক অর্ডার স্থগিত রেখেছিল। পরে সেসব স্থগিত করা অর্ডার অনুযায়ী তারা পোশাক নিতে আগ্রহ দেখায়। আমরা তাদের চাহিদামতো পোশাক রফতানি করেছি। ফলে দেশটিতে আমাদের পোশাক রফতানি বেড়েছে। এ ছাড়া কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের পোশাকের ইউনিট প্রাইস বেড়েছে। এ কারণেও রফতানি আয় বেশি হয়েছে। তৃতীয়ত বিষয় হচ্ছে-মার্কিন বাজারে আমরা হাইভ্যালু প্রোডাক্ট রফতানি বাড়িয়েছি। এর প্রভাবেই দেশটি থেকে আমরা বেশি রফতানি আয় পেয়েছি। আশা করছি আরও কয়েক মাস এ অবস্থা বিরাজ থাকবে। তবে শিল্পে এখনও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট রয়েছে। যদি গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে এই উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে।’
সেপ্টেম্বর সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রফতানি করে। এ সময়ে বাংলাদেশ থেকে তাদের পোশাক আমদানি ৫০ দশমিক ৯৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সময়ে বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি ৩৪ দশমিক ৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ পোশাক রফতানি করে যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে। চীন ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ শেয়ার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সর্ব বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ। ১৮ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার নিয়ে ভিয়েতনামের অবস্থান দ্বিতীয়।
২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে চীন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটির তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে দেশটিতে ভিয়েতনামের রফতানি পৌঁছেছে ১৪ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ৯ মাসে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শীর্ষ পোশাক সরবরাহকারীদের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধিসহ অন্যান্য শীর্ষ দেশগুলো হলোÑইন্দোনেশিয়া ৫৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ভারত ৫৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ, কম্বোডিয়া ৪৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ, পাকিস্তান ৪০ দশমিক ১১ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়া ৩৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক রফতানি বৃদ্ধির পেছনে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় কারখানা চালু রেখে তৈরি পোশাকের চাহিদা পূরণ করার কারণে এ সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে অন্য দেশের তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। সে সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রাখা হয়েছিল। মহামারির মধ্যে তৈরি পোশাক সরবারহ করার এ সুফল বাংলাদেশের। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি বৃদ্ধির এটাও অন্যতম প্রধান কারণ।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার। প্রায় ১০ বছর আগে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাজারটিতে রফতানি কমে যায়। তারপর কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক সংস্কার কাজ করেন উদ্যোক্তারা। ফলে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি। অন্যদিকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সালে দেশটির অনেক প্রতিষ্ঠান বিকল্প উৎস হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নেয়। তবে করোনার কারণে রফতানি আবার নিম্নমুখী হতে থাকে। গত বছরের মে মাস থেকে বাজারটিতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি আবার বাড়তে শুরু করে। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ।
Leave a Reply