নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জ সদর থানার চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত রুকসানা (৩৬) ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকারী ঘাতক স্বামী মো: রুবেলকে মাত্র আট ঘন্টার ব্যাবধানে গ্রেফতার করেছে র্যযাব ৪ সিপিসি ৩ মানিকগঞ্জ এর একটি দল। গ্রেফতার হওয়া মোঃ রুবেল (৩৭) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মত্ত গ্রামের মো: লাল মিয়ার পুত্র।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব ৪ সিপিসি ৩ মানিকগঞ্জের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, গত ২৫ নভেম্বর রাতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সিপিসি ৩, র্যাব ৪ এর একটি চৌকশ আভিযানিক দল মানিকগঞ্জ সদর থানার চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত রুকসানা ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু এবং ভিকটিমের মোবাইল উদ্ধারপূর্বক হত্যাকারী মোঃ রুবেলকে ৮ ঘন্টার মধ্যে ঢাকা মহানগরীর দারুস সালাম থানাধীন মাজার রোড এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরনে জানা যায় যে, ভিকটিম রুকসানা নওগাঁ জেলার আত্রাই থানাধীন সাহাগোলাতে বসবাস করতো। প্রায় ১৮ বছর পূর্বে ভিকটিম একই এলাকার মো: সাহেবের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বৈবাহিক জীবনে ভিকটিমের সাথে তার স্বামীর প্রায়শই পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তারা উভয়েই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আলাদা হয়ে যায়। ভিকটিম বিবাহ বিচ্ছেদের কিছুদিন পর জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ঢাকায় চলে আসেন এবং গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল সাভারে চাকরি নেন।
উক্ত মেডিকেলে সেবা নিতে আসা বিবাদী রুবেল এর সাথে ভিকটিমের পরিচয়ের এক পর্যায়ে তারা উভয়েই মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং পরবর্তীতে উভয়ের সম্মতিতে ২০২২ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের পর থেকে বিবাদী কোনো জীবিকা নির্বাহ না করে ভিকটিমের জীবিকার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ভিকটিম বিবাদীকে জীবিকা নির্বাহের জন্য তাগিদ দিলেও বিবাদী ভিকটিমের কথায় কোন কর্ণপাত না করে তার উপর আরো নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। উক্ত বিষয় নিয়ে তাদের উভয়ের মধ্যে প্রায়শই দ্বন্দ্ব লেগে থাকতো। ভিকটিম ঘটনার ৭ দিন পূর্বে বিবাদীকে আবারো জীবিকা নির্বাহের তাগিদ দেয় এবং বিবাদী কোন কাজ না করলে ভিকটিম তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাবে মর্মে জানায়। বিবাদী ভিকটিমের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ২৪ নভেম্বর ভিকটিমকে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাত্রি যাপনের উদ্দেশ্যে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে রংধনু আবাসিক হোটেলের ৫ম তলায় দক্ষিণ পাশে ৫২৬ নং কক্ষে উঠে। পূনরায় আবাসিক হোটেলে পারিবারিক বিষয় নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ভিকটিম রাতে ঘুমিয়ে পড়লে বিবাদী তার সাথে থাকা ধারালো চাকু দ্বারা ভিকটিমকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু নিজ হেফাজতে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরের দিন সকালে রংধনু হোটেলের ম্যানেজার কক্ষের সামনে ডাকাডাকি করলে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে হোটেল ম্যানেজার দুপুরে পুনরায় ডাকাডাকি করে শব্দ না পেয়ে কক্ষের দরজা ধাক্কা দিলে দরজা খুলে গেলে ভিকটিমের গলাকাটা মৃতদেহটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় পুলিশ ও র্যাব ৪, সিপিসি ৩ মানিকগঞ্জ ক্যাম্পকে অবহিত করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতপূর্বক মৃতদেহ মর্গে প্রেরণ করে।
র্যাব ৪ সিপিসি ৩ মানিকগঞ্জের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ও হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষনপূর্বক ঘটনাস্থলে থাকা পারিপার্শ্বিক আলামত এবং তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত ঘটনার রহস্য উদঘাটন পূর্বক ঘটনার সাথে জড়িত অভিযুক্ত রুবেলকে উপরে উল্লেখিত স্থান হতে আটক পূর্বক তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিবাদীর ভাড়াকৃত মিরপুর ১ টোলারবাগ ৩নং গেইট সংলগ্ন জনৈক জসীমের ৫ তলা বিশিষ্ট ভবনের নিচতলায় বিবাদীর শয়ন কক্ষ হতে তার ব্যবহৃত কাধে ঝুলানো ব্যাগ হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু এবং ভিকটিমের মোবাইল উদ্ধার করা হয়। আটকের পর অভিযুক্ত জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক ভাবে ঘটনার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Leave a Reply