অনলাইন ডেস্ক: প্রত্যন্ত গ্রামের এক কিশোরী। যার কাজ কুসংস্কার ও বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়া। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবেশীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়নো। নারী-শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করা। শাক-সবজি চাষ এবং হাস-মুরগি পালনে অস্বচ্ছলদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে স্বচ্ছলতার পথ দেখানো।
তবে একজন নারী হয়ে লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রচারবিমুখ এসব কাজ করা ততটা সহজ ছিল না। তবুও সমাজের নানা প্রতিবদ্ধকতা ডেঙিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে হয়ে ওঠেন ‘স্বেচ্ছাসেবী’। অবশেষে জাতীয় পর্যায়ে এ কাজের স্বীকৃতিও মিলেছে তার। জাতীয় পর্যায়ে স্বকৃতিস্বরূপ মানবাধিকার পদক পাওয়া ওই ‘সেচ্চাসেবী’ নারী শারমিন আক্তার (১৯)। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব বাহেরচর গ্রামের কবির সিকদারের মেয়ে।
তৃণমূল পর্যায়ে তার এই কাজের জন্য ‘মানুষের জন্য মানবাধিকার পদক-২০২২’ অর্জন করেন তিনি। ঢাকার আগারগাও মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তাকে এই পদক দেওয়ার ঘোষণা করা হয়। তবে এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় শারমিন ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি। পরে পদক গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে।
গত ২৮ নভেম্বর শারমীনকে দেওয়া মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রন পত্রে জানা যায়, কমিউনিটি পর্যায়ে মানবাধিকার সংরক্ষণ, সুরক্ষা কিংবা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যারা একাগ্রভাবে কাজ ও আন্দোলন করছেন এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছেন তাদের অবদানের জন্য এ বছর ৬ জন মানবাধিকার কর্মীকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ততা ও তৃণমূল পর্যায়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ শারমিনকে মানবাধিকার পদকের জন্য নির্বাচিত করা হয়। জানা গেছে, শারমিন উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব বাহেরচর গ্রামের কবির সিকদারের মেয়ে। তার বাবা পেশায় কৃষক। বর্তমানে শারমীন রাঙ্গাবালী হালিমা খাতুন মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি ২০১৮ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (ভার্ক) এর স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। সংস্থাটির তৎকালীন উপজেলা সমন্বয়কারী মোহসীন তালুকদার বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে শারমিন একটিভ। তার দক্ষতার কারণেই আমাদের কাজে তাকে যুক্ত করা হয়। সে খুব ভাল কাজ করতো। শারমিনের এই অর্জনের জন্য আমরাও গর্বিত।’
এ বিষয় নিয়ে কথা হয় শারমিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি। বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে কাজ করতে আমাকে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। একবার নুছাইবা নামের ১৬ বছর বয়সী আমার খালতো বোনের বাল্য বিয়ে আমি বন্ধ করেছিলাম। এজন্য মন্দ কথাও শুনতে হয়েছে বোনের পরিবারের। কিন্তু নুছাইবা যখন এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়, তখন ওর পরিবার আমার ওপর ওইকাজের জন্য খুশি হয়।’ শারমিন বলেন, ‘প্রথম যখন কাজটি শুরু করেছিলাম তখন এলাকার মুরব্বিরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন। যেমন: মেয়ে হয়ে পুরুষের সাথে কাজ কেন করতে হবে ? ঝড়ের মধ্যে একটা মেয়েকে এ ধরনের কাজ কেন করতে হবে? এ কাজ করে লাভ কি?।’
পদক পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শারমিন বলেন, ‘আমি এই পদক পেয়ে অনেক অনেক আনন্দিত। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারলে আরও ভাল লাগতো। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি এই কাজ করে যেতে চাই। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে মানুষের কল্যানে কাজ করবো।’ শারমিনের মা ইয়ানুর জানান, মেয়ের এই অর্জনে তিনি গর্বিত।
Leave a Reply