অনলাইন ডেস্ক: মস্কোর পারমাণবিক শক্তির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেকোনো নিষেধাজ্ঞায় ভেটো দেবে হাঙ্গেরি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টোর অরবান গতকাল শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় রেডিওকে সাফ এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এদিকে ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার বৃহস্পতিবারের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যুর কথা জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্রের পর কিয়েভকে ট্যাঙ্ক দিচ্ছে কানাডাও। খবর বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান ও রয়টার্সের।
ভেটোর হুমকি হাঙ্গেরির: রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা রোসাটামকে নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়ে আসছে ইউক্রেন। তবে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী অরবান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পারমাণবিক শক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞাগুলোতে স্পষ্টভাবে ভেটো দেওয়া উচিত। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পারমাণবিক শক্তি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে দেব না।
২০২২ সালের আগস্টে মধ্য ইউরোপের স্থলবেষ্টিত দেশ হাঙ্গেরিতে নতুন দুটি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের ঘোষণা দেয় রাশিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্র হাঙ্গেরির সঙ্গে রাশিয়ার এই চুক্তি সই হয় ২০১৪ সালে। এর লক্ষ্য বর্তমান পাকস পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্প্রসারণ।
ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় নিহত ১১: কিয়েভ পশ্চিমাদের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক পাওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার মস্কো ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়ে ইউক্রেনজুড়ে বেসামরিকদের প্রাণভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে বাধ্য করেছে। তাদের সর্বশেষ এ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় অন্তত ১১ বেসামরিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কিয়েভের ধারাবাহিক অনুরোধের মুখে সম্প্রতি জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে কয়েক ডজন অত্যাধুনিক আব্রামস ও লেপার্ড ট্যাঙ্ক দিতে রাজি হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় মস্কো ইউক্রেনের বিভিন্ন সংবেদনশীল স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র মেরে এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে তাদের রাগ ঝেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এর আগেও যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয়দের সফলতার পর মস্কো প্রতিবেশী দেশটি লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে কোটি কোটি ইউক্রেনীয়কে অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখেছিল, অনেক এলাকায় সৃষ্টি হয়েছিল পানির সংকট।
ট্যাঙ্ক দিচ্ছে কানাডাও: রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দেওয়ার কথা জানানোর পরপর একই ঘোষণা দিয়েছে কানাডাও। বৃহস্পতিবার কানাডা সরকার জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে চারটি লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক দেবে। এ বিষয়ে কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী অনিতা আনন্দ অটোয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, মিত্র ও অংশীদার দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ইউক্রেনকে এই অনুদান দিচ্ছে কানাডা। এই উদ্যোগ রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও জোরালো করতে সহায়তা করবে।
কয়েক সপ্তাহের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত বুধবার জার্মানি বলেছে, তারা ইউক্রেনকে ১৪টি লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক দেবে। একই দিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে ৩১টি আব্রামস ট্যাঙ্ক দেবে বলেও জানায়। এর আগে দেশটিকে ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্ক দেওয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এ ছাড়া ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে ট্যাঙ্ক দেবে পোল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তার দাবি, অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক ছাড়া রাশিয়ার বিপক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। যুদ্ধ শুরুর বছরখানেকের মাথায় মিত্রদের কাছ থেকে ট্যাঙ্ক পাওয়ার ঘোষণা ইউক্রেনের জন্য অন্যতম অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এবার তাদের পক্ষ থেকে যুদ্ধযানও চাওয়া হয়েছে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে।
Leave a Reply