অনলাইন ডেস্ক: অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের ৭ নদীর পানি এখন বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এরমধ্যে সুরমা নদীর পানি সর্বোচ্চ বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। বিপদসীমার ওপরে থাকা নদীগুলোর মধ্যে আছে তিস্তা, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, পুরাতন সুরমা এবং সোমেশ্বরী।
এদিকে, আগামী দুইদিন ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপদসীমায় পৌঁছাতে পারে। এদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী শনিবার এই তিন বিভাগে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে। এর পর থেকে আবার বৃষ্টি বেড়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, সুরমা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী উজানে মাঝারি থেকে ভারী এবং আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও উজানে ভারি থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা জেলার কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে ও সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলায় চলমান বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অপরদিকে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু-খোয়াই নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর জেলার কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
উজানের বৃষ্টির বিষয়ে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কোচবিহারে ১৩৬ মিলিমিটার। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্য দিকে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।শনিবারের পূর্বাভাসেও দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে পঞ্চগড়ে ১৫৩ মিলিমিটার। এর বাইরে সিলেট ও হবিগঞ্জে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে ৩ নম্বর সতর্কতা বহাল
আবহাওয়া বিভাগ আরও জানায়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে বলে বিকেলে আবহাওয়ার এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এর আগের দিন বুধবারও এই তিন সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক দেখাতে বলা হয়েছিল।
Leave a Reply