অনলাইন ডেস্ক: বিশ্ববাজারে ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে। দেখা যাচ্ছে গত ৫ মাসের ব্যবধানে গম, চিনি, পাম অয়েলের মতো নিত্যপণ্যের দাম অনেকখানিই কমেছে। তবে দেশের বাজারে দাম কমার কোনো লক্ষণ তো নেই, উল্টো আরও বাড়ছে। আবার কিছু পণ্যের দাম কেজিতে ২০ থকে ২৫ টাকা কমার কথা থাকলেও চড়া দামেই স্থিতিশীল রয়েছে।
বিশ্ব বাজারে দাম কমার পরও দেশের বাজারে দাম না কমায় ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফা লুটে নিচ্ছে আর ভোক্তার পকেট খালি হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অতি মুনাফার লোভেই ব্যবসায়ীরা এমনটি করছে। সেই সঙ্গে সরকারের যথাযথ মনিটরিং না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েছে।
বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৫ মাস আগে এপ্রিল মাসে প্রতি টন গমের দাম ছিল ৩৭৮ ডলার ১৮ সেন্ট। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতি মাসেই কমেছে গমের দাম। বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনাকারী প্রতিষ্ঠান ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য বলছে, মে মাসে এসে গমের দাম আরও কমে হয় প্রতি টন ৩৬৭ ডলার ৭৪ সেন্ট, জুন মাসে হয় ৩৪৫ ডলার ৫০ সেন্ট, জুলাইয়ে কমে হয় ৩৩৬ ডলার ৮৫ সেন্ট এবং বর্তমানে অর্থাৎ আগস্ট মাসে বিশ্ববাজারে প্রতি টন গমের মূল্য আরও কমে হয়েছে ৩২২ ডলার ৮৪ সেন্ট।
অথচ দেশের বাজারের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, গত ৫ মাসে আটা এবং ময়দার দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ৫ মাস ধরেই বাজারে খোলা আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় এবং প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি এবং প্যাকেটজাত ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে।
দেশের বাজারে চিনির দাম বিগত কয়েক মাসে বেশি বেড়েছে। অথচ বিশ্ববাজারে কমেছে। ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য বলছে, গত এপ্রিল মাসে ১ কেজি চিনির দাম ছিল ৬৫ সেন্ট। টাকার অঙ্কে যা হয় (১ ডলার = ১০৮ টাকার হিসাবে) ৭০ টাকা। মে মাসে কমে হয় ৫৪ সেন্ট বা ৫৮ টাকা ৩২ পয়সা। জুন মাসে হয় ৪৮ সেন্ট বা ৫১ টাকা ৮৪ পয়সা, জুলাই মাসে হয় ৪৩ সেন্ট বা ৪৬ টাকা ৪৪ পয়সা এবং আগস্টে কমে হয়েছে ৪২ সেন্ট বা ৪৫ টাকা ৩৬ পয়সা।
অথচ দেশের বাজারে এখনও প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা এবং খোলা চিনির কেজি ১৩০ টাকা। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে গত ৫ মাস ধরেই কমেছে পাম অয়েলের দাম। এপ্রিলে প্রতি টন পাম অয়েলের দাম ছিল ১ হাজার ৫ ডলার ২৪ সেন্ট। পরের মাসে মে-তে হয় ৯৩৪ ডলার ০৬ সেন্ট, জুনে কমে হয় ৮১৬ ডলার ৯৭ সেন্ট, জুলাইয়ে হয় ৮০৮ ডলার ৫৬ সেন্ট এবং আগস্টে কমে হয়েছে ৮০২ ডলার ২৫ সেন্ট।
দেশের বাজারে সর্বশেষ পাম অয়েলে লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১২৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে এ দামে মেলে না পাম অয়েল। এ ছাড়া ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৭৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এখনও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়।
বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে না কমার বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, বিদেশে যখন পণ্যের দাম বাড়ে তখন ব্যবসায়ীরা দেশের বাজারে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বিশ্ববাজারে কমলে তখন আর কমায় না। শুধু তাই নয়, কখনো সরকারের চাপে কিছুটা দাম কমালেও সেটি ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। তারা যেটুকু দাম কমার ঘোষণা দেয়, তার সুফল পায় না ভোক্তারা। কারণ খুচরা বাজারে দাম কমে না। এটা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের চরম অসাধুতা। বিশ্ববাজারে দাম কমার ফলে তারা অস্বাভাবিক মুনাফা লুটে নিচ্ছে, অথচ ভোক্তার কোনো লাভ হচ্ছে না। এখানে সরকারের তদারকিরও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলেরও দাম কমেছে। এ ছাড়া আরও অন্যান্য পণ্যের মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যেরই দাম কমেছে। আগের জুন-জুলাইয়েও জ্বালানি, কৃষি, খাদ্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং ধাতব পণ্যসহ প্রায় সব খাতের গড়মূল্য কম ছিল। পণ্যমূল্যের ওপর বিশ্বব্যাংকের মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে ১ বছর আগের তুলনায় বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য এখনও অনেক বেশি। এ কারণে বিশে^র প্রায় সব দেশেই এখনও উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল রয়েছে। ১ বছর আগে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল টনপ্রতি গড়ে ৭৩ ডলার। চালের দাম ছিল ৪০০ ডলারের নিচে। সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৪০০ ডলারের কিছুটা বেশি। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বব্যাংকেরই আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৯০ শতাংশেরও বেশি দেশে এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের ক্ষেত্রে এ হার ৯৩ শতাংশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে লাখ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে।
Leave a Reply