অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার দাবি করেছে ‘ইন্ডিয়ান সাইবার ফোর্স’। মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান সাইবার ফোর্স এক টেলিগ্রাম পোস্টে এ তথ্য জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৪০ হাজার ডাটাবেজ হাতিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে তারা।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এগুলো আমাদের ডাটা নয়। অন্য কোনো ব্যাংকের পুরোনো ডাটা। শুধু নিজেদের পাবলিসিটি ও ক্ষমতা দেখানোর জন্য বলছে ডাটা হ্যাক। আমাদের এখনও কোনো সমস্যা হয়নি।
এদিকে মঙ্গলবার একটি পোস্টে ইন্ডিয়ান সাইবার ফোর্স লিখেছে, ‘বাংলাদেশ কি ধ্বংসের জন্য প্রস্তুত? বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪০ হাজার প্লাস ডাটাবেজ আপলোড করা হবে। নিজেকে ভারতীয়দের দ্বারা ধ্বংস করা দেখতে থাকুন।’ প্রমাণ হিসেবে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের একটি তালিকাও পোস্টে শেয়ার করেছে তারা। সেই তালিকায় ব্যাংকের ব্রাঞ্চের নাম, অ্যাকাউন্টধারীর নাম, বাবা/স্বামীর নাম, অ্যাকাউন্টধারীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে।
শুধু তাই নয়, সরকারি বেশ কিছু ওয়েবসাইটে হামলা চালিয়ে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ারও দাবি করেছে হ্যাকার গ্রুপ। যেসব ওয়েবসাইটে হামলা চালিয়েছে তার আইডি ও পাসওয়ার্ডর নিজেদের গ্রুপে শেয়ার করেছেন তারা। এ ছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে ডিডস হামলা চালিয়ে একঘণ্টা সার্ভার ডাউন করে রাখার দাবি করেছে ইন্ডিয়ান সাইবার ফোর্স।
যেসব প্রতিষ্ঠানে হামলার দাবি : বাংলাদেশ এয়ারপোর্টের ওয়েবসাইট একঘণ্টা ডাউন করে রাখার দাবি করে তারা লিখেছেন, ‘নো ফ্লাইটস টুডে সরি
ডাউন টাইম ১ আওয়ার।’ এ ছাড়া হামলার তালিকায় আরও রয়েছে-বিডি-ই-সেবা ডটকম, মাইগভ বিডি, বিডি স্কিল গভ বিডি, আইডি টেক্সট গভ বিডি, ই-টিকেট রেলওয়ে গভ বিডি, সাইনঅভপ ডট লাইভ ডটকম। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের আইডি পাসওয়ার্ডও তারা গ্রুপে শেয়ার করেছেন।
শুধু বাংলাদেশই নয়, পাকিস্তান রেলওয়ে, পাকিস্তানের ওসমান ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড, ডিভিশনাল পাবলিক স্কুল রাওয়ালপিন্ডি এবং এয়ারপোর্টের ওয়েবসাইটও একঘণ্টা ডাউন করে রাখার দাবি করেছে তারা। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটও ডাউন করার দাবি করে ভারতীয় এই হ্যাকার গ্রুপ।
এর আগে গত ৩১ জুলাই ইন্ডিয়ান সাইবার ফোর্স বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সাইবার হামলার হুমকি দিয়ে লিখেছিল ‘কামিং বিগ বুম অন ১৫ আগস্ট, পাকিস্তান অ্যান্ড বাংলাদেশ কিডডেস জাস্ট ইনজয় উইথ আওয়ার সাইবার স্পেস, উই উইল কাম ইউথ স্টর্ম।’ ইন্ডিয়ান সাইবার ফোর্সের এমন ঘোষণার পরপর ‘মিস্টিরিয়াস টিম বাংলাদেশে’ নামে একটি ফেসবুক পোস্টে পাল্টা হুমকি দিয়ে বাংলাদেশের হ্যাকাররা লিখেছিলেন ‘আমরা তো হাতে চুড়ি পরে বসে থাকব না, খেলা আমরাও জানি’। মিস্টিরিয়াস টিম বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে ইন্ডিয়ান সাইবার ফোর্সের হুমকির খবর শেয়ার করে সেখানে আরও লেখা হয়েছিল যে, ‘ওকে, উই আর রেডি, কামিং কামিং কিডস, উই আর কলিং অল বিডি হ্যাকার্স ফর প্রিপিয়ারিং এ সাইবার ওয়ার এগেনেস্ট দেম, বিডি হ্যাকার্স আর গেটিং রেডি, উই আর ওয়েটিং ফর ইউ কিডস, বিডি ব্লাক হ্যাটস এলাইভ।’
ভারত ও বাংলাদেশের হ্যাকারদের মধ্যে এমন হুমকি-পাল্টা হুমকিতে দুই দেশে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (বিজিডি ই-গভ সার্ট) থেকে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়।
গত ৪ আগস্ট বিজিডি ই-গভ সার্ট প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাইবার হামলা এড়াতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়।
এরপর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে সাইবার হামলা না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত শনিবার ১২ আগস্ট রাত ২টা ২৪ মিনিটে দেওয়া এক পোস্টে তারা লিখেছিল-‘দ্য গ্রুপ ইজ পারমানেন্টলি ক্লোজ বাই ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট. উই আর নট অ্যাটাকিং অন এনি কান্ট্রি, উই আর নট ডিফেসার, উই আর নট হ্যাকার উই আর সন অব ইন্ডিয়া।’ পোস্টের সব শেষে লেখেন ‘জয়হিন্দ, জয় ভারত’ গুড বাই।
এর আগে ১১ আগস্ট রাত ২টা ২৭ মিনিটে হুমকি দিয়ে আর একটি পোস্টে তারা লিখেছে-শুভেচ্ছা, বাংলাদেশ সরকার, আপনি আমাদের সাইবার অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আপনি কি কখনো এই অপারেশনের পেছনের যুক্তিকে পুরোপুরি বোঝার চেষ্টা করেছেন? প্রকৃত কারণ হলো সম্প্রতি সাইবার আক্রমণের যে ঘটনা ঘটেছে, আমাদের সোজাসাপ্টা কথা হলো আমরা কেবল ভারতীয় সাইবার যোদ্ধা, অপরাধী নই। একটি গোষ্ঠী বা সংস্থা ভারতীয় ইন্টারনেটে আক্রমণ চালিয়ে গেলেও আমরা নীরব থাকতে পারি না। আমরা আপনার ওয়েবসাইট হ্যাক করার বিষয়ে দুবার ভাবব না। যদি এটা চলতে থাকে।
গত কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের হ্যাকারদের মধ্যে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটছে। ধর্মীয় মতবাদ বা ভাবধারা থেকেই মূলত হামলার সূত্রপাত বলে জানিয়েছে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করা একটি টিম। দুই দেশের ধর্মীয় ভাবধারা থেকে গত কয়েক মাসে দুই দেশের হ্যাকাররা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক হামলা চালিয়েছে।
সাইবার হামলা নিয়ে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। আর এ বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো র্যাবও কাজ করছে। ভারতীয় একদল হ্যাকার সাইবার হামলার হুমকি দিয়েছে-এ বিষয়ে র্যাবের কোনো তৎপরতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, সাইবার হামলার হুমকি কিংবা সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমরাও কিন্তু বেশ কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমাদের যারা আইটি এক্সপার্ট আছেন, তারা এটি নিয়ে কাজ করছেন। আর যাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত না হই সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের (আইসিটি) সচিব মো. সামসুল আরেফিন সময়ের আলোকে বলেন, আমি কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমের (সার্ট) সঙ্গে কথা বলেছি, তারা (সার্ট) বলেছে, বড় ধরনের কিছু হয়নি ছোটখাটো কিছু আছে। তারা যে দাবি করছে সেগুলো ওরকম কিছু না। অনেক সময় নাকি ভুয়া দাবিও করে থাকে। সার্ট এটি যাছাই করছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে ভেরিফাই করলে আর ক্লিয়ার হওয়া যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ভেরিফাই করে দেখতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (আইসিটিডি) দেবদুলাল রায় সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট নেই। শুধু সরকারের অ্যাকাউন্ট আছে। আমার নিজেরও অ্যাকাউন্ট নেই। কোনো অ্যাকাউন্ট যদি থেকে থাকে তা হলে সেটি অন্য ব্যাংকের। বিষয়টি সকালে আমি দেখেছি। তারা বাংলাদেশের একটি ব্যাংক লিখতে গিয়ে ভুলে হয়তো বাংলাদেশ ব্যাংক লিখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক না। যে ডেটা তারা দিয়েছে দেখে মনে হচ্ছে এটি অনেক পুরোনো যা বিশ্বাসযোগ্য না। ডাটাগুলো বুয়েটের পেছনে অথবা চকবাজারের আশপাশের কোনো ব্রাঞ্চের ডাটা। মনে হচ্ছে এটা ভুল ডাটা। এই ডাটার কোনো ভ্যালিডিটি আছে বলে মনে হয় না। শুধু নিজেদের পাবলিসিটির ও নিজেদের ক্ষমতা দেখানোর জন্য বলছে ডাটা হ্যাক। আমাদের এখনও কোনো সমস্যা হয়নি।
Leave a Reply