1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ অন্তত দু-তিন বছর চান সম্পাদকরা

  • সর্বশেষ আপডেট : বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৯০ বার পড়েছেন

অনলাইন ডেস্ক: বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্তত দু-তিন বছর দায়িত্ব পালনের পক্ষে মত দিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর সম্পাদকরা। সম্পাদকদের বেশিরভাগই বলেছেন, যেসব এজেন্ডার বাস্তবায়ন বা যে কাজ অন্তর্বর্তী সরকার করবে, সেই কাজই নির্ধারণ করবে এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজীয় অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে সম্পাদকরা এসব পরামর্শ দিয়েছেন। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের জন্য জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্র মেরামত করার জন্য মস্ত বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। বাংলাদেশকে নতুন শিখরে নেওয়ার জন্য এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তবে এর জন্য জাতীয় ঐক্যের খুব প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকার যেন যৌক্তিক সময় পর্যন্ত থাকেন।

এ যৌক্তিক সময় আসলে কতটা সময় সে বিষয়ে ড. ইউনূস সম্পাদকদের কাছে জানতে চান। এ সময়টাতে কী কী মৌলিক কাজ সরকারের করা উচিত এ বিষয়েও পরামর্শ চান তিনি।

সম্পাদকদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, বিভিন্ন রকম কথা এসেছে যেমন-অন্তত ২ বছর মেয়াদ দেওয়া যেতে পারে। অনেকে আবার ৩ বছরের কথা বলেছেন। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করতে যতটা সময় লাগে তা দেওয়ার পক্ষে প্রস্তাব দেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে বেশিরভাগই বলেছেন, যেসব সংস্কার কাজ বা যে কর্মপরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে, সেটিই আসলে নির্ধারণ করবে এ সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে।

বৈঠকে সম্পাদকদের পক্ষ থেকে আসা পরামর্শ তুলে ধরে প্রেস সচিব আরও বলেন, সংবিধান সংশোধন, সংবিধান পুনর্লিখন, আইন কমিশন, সংবিধান কমিশন, মিডিয়া কমিশন ও পুলিশ কমিশন গঠনের কথা এসেছে। পুলিশকে কীভাবে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগানো যায় এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা এসেছে। এ ছাড়া সম্পাদকরা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ভুলত্রুটি নিয়ে লেখার অনুরোধ জানিয়ে ড. ইউনূস সম্পাদকদের বলেন, আপনারা লেখেন। আমাদের দোষ-ত্রুটি হলে তা নিয়ে লেখেন। আমরা আপনাদের কথা শুনতে চাই। মতামত জানতে চাই। ড. ইউনূস বারবার বলেছেন, তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ^াস করেন এবং মুক্ত, প্রাণবন্ত ও গতিশীল গণমাধ্যম দেখতে চান। সরকার দেশে একটা গতিশীল গণমাধ্যম দেখতে চায়। এর জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবটুকু করা হবে। একই সঙ্গে সরকার দেশে মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শফিকুল আলম বলেন, সম্পাদকরা মিডিয়ায় যেসব কালাকানুন আছে সেগুলো যাতে বাদ দেওয়া হয় তার পরামর্শ দিয়েছেন। এ কালাকানুন সংশোধন করার কথাও বলা হয়।

মিডিয়া কমিশন করার প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ব্রিফিংয়ে বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যাতে কোনো সাংবাদিক কোনো অসুবিধায় না পড়েন, সে বিষয়ে একটা মিডিয়া কমিশন করার প্রস্তাব এসেছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের বিবেচনাধীন। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কেউ যেন বিপত্তির মুখে না পড়েন, বাধার সম্মুখীন না হন তা নিশ্চিতে এ কমিশন গঠনের প্রস্তাব এসেছে। সরকার এ কমিশন গঠনের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে অংশ নেওয়া সম্পাদকরা সরকারের মধুচন্দ্রিমা সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম বা কার্যপদ্ধতি ঠিক করে ফেলার পরামর্শ দেন। এ বৈঠকে মোট ২২ জন সম্পাদককে মতবিনিময়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবির, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, আমাদের সময় সম্পাদক আবুল মোমেন, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, দেশ রূপান্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুন, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন, দৈনিক করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। দুজন বিদেশে থাকায় আসতে পারেননি। প্রধান উপদেষ্টার আরেক উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা মতবিনিময় শেষে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।

তিনি বলেন, বিটিভি, বিএসএস এবং রেডিওর মতো যেসব সংবাদমাধ্যম সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার দাবি মতবিনিময়ে জানিয়েছেন তিনি। আমরা যেন পেশাগতভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সারাবিশ^ বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা উৎসুক বাংলাদেশকে সহায়তা করতে।

মাহফুজ আনাম বলেন, আমরা কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আশা করছি। সেই সংস্কারের মধ্যে সংবিধান পরিবর্তন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো, এন্টি করাপশন কমিশন, হিউম্যান রাইটস কমিশন, নির্বাচন কমিশন-এগুলোকে সংস্কার করা। সত্যিকার অর্থে গণমুখী সংস্থা আমরা চাই। নির্বাচন কমিশন যাতে ভবিষ্যতে ভোটারদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটায়, এরকম একটা সংস্থা চাই। আমরা এমন দুর্নীতি দমন কমিশন চাই, যেন তারা স্বাধীনভাবে দেশের দুর্নীতি দমন করতে পারে।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবি করা হয়েছে জানিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, সাইবার সিকিউরিটি আইনের মধ্যে সাংবাদিক নিপীড়নের যে অধ্যায়গুলো আছে, সেগুলো কার্যকর হবে না, এমনটা যাতে ঘোষণা করা হয়। এটা সংস্কারের জন্য ওনারা সময় নিয়ে করতে পারেন।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেখানে সেখানে খুনের মামলা বন্ধ করতে বলেছেন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সূত্র ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, তিনি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ^াস করেন। আমাদের কাছে তিনি বিশেষ আবেদন করেছেন, আমরা যেন আমাদের লেখার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করি। এ সরকারের ভুলত্রুটি সোচ্চারভাবে, নির্দ্বিধায় সেটা যেন কাগজে ছাপি। এ সরকারকে সাহায্য করি। প্রধান উপদেষ্টা সত্যিকার অর্থে মিডিয়ার স্বাধীনতায় বিশ^াস করেন। মিডিয়াবান্ধব যদি কোনো সরকারপ্রধান আমরা পেয়ে থাকি, তাহলে আমরা এখন পেয়েছি। আমরা এর জন্য অত্যন্ত আনন্দিত।

ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা যদি মনে করেন, একটা গ্রুপ করে দেওয়া বা একটা বিশেষ কমিটি করে দিয়ে সব ধরনের আইনের যে পরিবর্তন, সেটা করা। আমরাও সংবিধান সংস্কার চাই। আমরা গণতান্ত্রিক রিফর্ম চাই।

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, মেয়াদ কতদিন থাকবে সেটা সম্পাদকদের কাছে জিজ্ঞেস করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে বিষয়ে অনেকে মতামত দিয়েছেন। তবে এ সরকারের মূল এজেন্ডা কী? সেটার অনুপাতে সময়। ২, ৩, ৫ বছর ওনার নিজস্ব কোনো চিন্তা নেই। জাতি কী চায়? জনতা কী চিন্তা করছে? সেটা তিনি জানতে চান। তিনি মিডিয়াকে আহ্বান করেছেন। আমরা যেন জনগণের কথা লিখি।

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :