অনলাইন ডেস্ক: দেশে অধিকাংশ প্যাকেটজাত প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিমাত্রায় নলণের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যে কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী দৈনিক ৫ গ্রাম লবন গ্রহণের পরামর্শ থাকলেও বাংলাদেশে একজন প্রাপ্তবয়স্ক গড়ে ৯ গ্রাম লবন গ্রহণ করেন, যা প্রায় দ্বিগুণ। ফলে প্রতি বছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ ২০১৫’ উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতি বছর ১২ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ব লবণ সচেতনরা সপ্তাহ পালন করা হয় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘অতিরিক্ত লবন বর্জন করি, সুস্থ জীবন গড়ি’।
সভায় সভাপতিত্ব করেন হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের লবণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা.আহমাদ খাইরুল আবরার।
মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, বালাদেশে একজন প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন পড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করেন। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ করেছে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ গ্রাম লবণ গ্রহণ করার জন্য। এই অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, চিপস, বিস্কুট, এমনকি নোনতা মনে না হওয়া খাবারগুলোতেও লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এ লবণ সরাসরি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর শুধু অতিরিক্ত লবণজনিত অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।
ডা. আহমাদ খাইরুল আবরার বলেন, খাবারের মোড়কে সহজ ভাষায় লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেখ থাকা দরকার। একে বলা হয় ‘ফ্রন্ট-অব-প্যাক লেবেলিং (এফওপিএল)’ যা অনেক দেশেই বাধ্যতামূলক। এ ব্যবস্থা চালু হলে সাধারণ মানুষ দ্রুত ও সহজে বুঝতে পারবেন কোন খাদ্য উপাদান কতটা স্বাস্থ্যকর।
তিনি আরও বলেন, স্বাদে নোনতা না হলেও অনেক প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে লবণের মাত্রা ভয়াবহ রকমভাবে বেশি, যা ভোক্তারা বুঝে উঠতে পারেনা।
সভায় অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, লবণ শুধু স্বাদের উপাদান নয়, এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। জাতীয় পাঠ্যক্রমে লবণের ক্ষতিকর দিক অন্তর্ভুক্ত করার এখনই সময়, যাতে শিশুদের মধ্যে শুরু থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মো. ইফতেখার বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক হলেও বেশিরভাগ কোম্পানি তা মানে না, বা এমনভাবে লেখে যাতে সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারে না। তিনি এ বিষয়ে নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং ‘ফ্রন্ট-অব-প্যাক লেবেলিং’ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আমরা একটি সমন্বিত জাতী লবণ হ্রাস কৌশল তৈরির কাজ শুরু করেছি। এটি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব জানান, সংশ্লিষ্ট আইনে মোড়কে লবণ চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেখ বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে সহজবোধ্য লেবেলিং পদ্ধতি চালু করা যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী।
তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। সরকারের একার পক্ষে এটি সম্ভব নয়, আমাদের সবাইকে সচেতন ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পিএম-১ ডা. নুরুল ইসলাম, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, জাতীয় পুষ্টিসেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আজমেরী শারমিনসহ আজমের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা। সুত্র: সময়ের আলো
Leave a Reply