অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তার দলের নির্বাচনি প্রতীক ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই নৌকা জনগণকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ দেবে। তিনি গতকাল বিকালে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক বিশাল নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, ‘এই নৌকা স্বাধীনতা এনেছে, অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে, এই নৌকা আমাদের একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ দেবে।’ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণের কাছে নৌকায় ভোট প্রদানের দাবি রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকায় ভোট দরকার।’ নূহ নবীর নৌকা মানবজাতিকে মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা করেছিল বলেও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, এই নৌকা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে এবং এই নৌকাই দেবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। কাজেই আপনাদের কাছে আমার এটাই আবেদন-আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ ‘কি বাহে একখান ভোট মুই পামু না, একখান ভোট হামাক দেবেন না’-রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় এভাবেই ভোট চান প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং পীরগঞ্জ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নিজের কন্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে আমার মেয়েকে আপনাদের দিয়ে গেলাম, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে জয়যুক্ত করা মানে আমাকে ভোট দেওয়া, জয়কে ভোট দেওয়া। সে জয়ের বোন, পুতুলের বোন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সবার ওয়াদা চাইলে উপস্থিত জনতা সমস্বরে চিৎকার করে দুই হাত তুলে ভোট প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইনশাল্লাহ নৌকা জিতলে তিনি আবারও আসবেন, এখানে জনসভা করবেন এবং বাদবাকি উন্নয়ন কাজগুলোও সম্পন্ন হবে। গত ২০ ডিসেম্বর সিলেট থেকে শুরু হওয়া আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার সমাবেশের মতোই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে ও শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা।
আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দেবে বলে যে কথা দিয়েছিল, সে কথা রেখেছে-সেটাই সবচেয়ে বড় কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে সেবা করতে।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা এসেছিল লুটপাট করতে। লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক-এগুলো ছিল তাদের কাজ। তারা জনমানুষের কল্যাণে কোনো কাজ করেনি। নিজেদের আখের গুছিয়েছে। আর ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু মানুষকে সম্পদশালী করেছে। অন্যদিকে আমার মজুর, কৃষক, শ্রমিক, সবাই মানবতার জীবনযাপন করেছেন। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। শিক্ষা-দীক্ষা সবদিক থেকে মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। সব থেকে বেশি মঙ্গাপীড়িত এলাকা ছিল এই রংপুর। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কোনো দিন এখানে আর মঙ্গা হয়নি, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সামনে নির্বাচন, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছি এবং বাংলাদেশে এই প্রথম ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। একটা স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এই স্থিতিশীলতা অনেকেই চায় না। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে যে সব দল উঠে এসেছে তারা মানুষের শান্তি দেখতে পারে না। যে কারণে আপনাদের মনে আছে, অগ্নিসন্ত্রাস থেকে রংপুরও বাদ যায়নি। ২০১৩-১৪ সাল এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস ও তা-বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস থেকে এ রংপুরও বাদ যায়নি। বাসে আগুন, গাড়িতে আগুন ও ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন কয়েক দিন আগে রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলে দিয়েছে ওই বিএনপি-জামায়াত চক্রের সন্ত্রাসীরা। কারণ রেলের বগি পড়ে যাবে মানুষ মারা যাবে। মানুষ মারার ফাঁদ তারা তৈরি করেছে। এর থেকে ঘৃণার আর কিইবা থাকতে পারে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু তাই নয়, ট্রেনে আগুন দিয়েছে। মা তো তার শিশুপুত্রকে ছাড়তে পারে না, জড়িয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছে, দুজনেই সেখানেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ দৃশ্য দেখা যায় না, এটা সহ্য করা যায় না। তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতি মানুষের জন্য কিন্তু মানুষকে মেরে মানুষকে হত্যা করে সেটা কীসের আন্দোলন? কীসের রাজনীতি? সেটাই আমার প্রশ্ন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আনন্দিত এজন্য যে, গত ১৫ বছরে রংপুরে কোনো মঙ্গা দেখা দেয়নি। এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করতে পেরেছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমরা তৈরি করেছি। স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসার আমরা উন্নয়ন করেছি। সারা বাংলাদেশে আমরা মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করছি। সেটা আমরা এখানেও করেছি। যাতে করে আমাদের দেশের সব স্তরের মানুষ ভালো থাকে, তাদের জীবন উন্নত হয়। তাছাড়া সমাজে অনগ্রসর যারা এমনকি দলিত-হরিজন-তাদের জন্যও বিনামূল্যে আমরা ঘর করে দিচ্ছি। জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের কল্যাণ করা। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে, আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।
এদিন বিকালে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের এই বিশাল নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দেওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তারাগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলায় দুটি জনসভায় ভাষণ দেন। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন রাজার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী তার দিনব্যাপী রংপুর সফরে পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেহপুরে অবস্থিত তার বাসভবনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলা ১১টার দিকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এবং তারপর সড়কপথে তারাগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে জনসভা
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে সকাল থেকেই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের (ভোটারদের) সবার কাছে আমার অনুরোধ এই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সব ভোটার দয়া করে সকালে উঠে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে যাবেন।’ রংপুর সফরকালে তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এ আহ্বান জানান। সমাবেশে তিনি রংপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মোহাম্মদ আহসানুল হক চৌধুরীর (ডিউক) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাকে ভোট দেওয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আতিয়া রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আহসানুল হক চৌধুরী।
মিঠাপুকুরে সমাবেশ
পরে প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে মিঠাপুকুর উপজেলায় আরেকটি নির্বাচনি জনসভায় যোগ দেন। তিনি সবার সঙ্গে রংপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাশেক রহমানের পরিচয় করিয়ে দেন এবং তাকে ভোট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করতে আওয়ামী লীগের হাতকে শক্তিশালী করতে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ছাত্র ও যুবকরা স্মার্ট ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠবে। আমরা ভবিষ্যতের জন্য তাদের গড়ে তুলব আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ ও ‘স্মার্ট সোনার বাংলা।’ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলটি নির্বাচনি পথ উন্মুক্ত করায় যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আওয়ামী লীগের প্রতিটি প্রার্থীকে সতর্ক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সুত্র:সময়ের আলো
Leave a Reply