
শাহজাহান বিশ্বাস: মানিকগঞ্জের শিবালয়ের পদ্মা-যমুনায় মা ইলিশ রক্ষায় একদিকে চলছে অভিযান অপরদিকে চলছে নির্বিচারে মা ইলিশ নিধন।মানিকগঞ্জ মৎস্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্টা করেও থামাতে পারছে না অসাধু জেলেদেরকে।এরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রশাসনের চোঁখ ফাকি দিয়ে দিন-রাত পদ্মা-যমুনায় জাল ফেলে ধরছে ডিমওয়ালা মা ইলিশ।এতে সরকারের মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ভেস্তে যাওয়ার আশংকা করছেন অভিজ্ঞ মহল।
জানা গেছে, জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ইলিশের প্রধান এ প্রজনন মৌসুমে গত ৪ অক্টোবর থেকে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এসময়ে সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ।এসময়ে মা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত রাখার জন্য কার্ডধারী উপকারভোগী জেলেদের মাঝে মানবিক সহায়তা হিসেবে ভিজিএফের আওতায় চাল দেওয়া হয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় শিবালয় থানা এবং পাটুরিয়া নৌ থানা পুলিশের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা না গেলেও উপজেলা প্রশাসন রয়েছে ব্যপক তৎপর।উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই পদ্মা-যামুনায় চালনো হচ্ছে অভিযান এবং জেলেদেরকে আটক করে দেয়া হচ্ছে জেলে, করা হচ্ছে জরিমানা। এরপও থামানো যাচ্ছে না শিবালয়ের অসাধু জেলেদেরকে। ফলে জাতীয় মাছ ইলিশের প্রধান প্রজনন মওসুমে সরকারীভাবে মা’ ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও তা উপেক্ষা করে মানিকগঞ্জের শিবালয়-হরিরামপুর ও দৌলতপুরে পদ্মা-যমুনা অংশে নির্বিচারে চলছে মা ইলিশ নিধন ও বিক্রি।
চরাঞ্চল ও এলাকার সৌখিন ও মৌসুমী চোরা শিকারীদের অপতৎপরতায় স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ সোচ্চার হলেও কোন ভাবেই মৎস্য শিকার রোধ করা যাচ্ছে না।এছাড়াও স্থানিয় কিছু সোর্সের কারণে মৎস্য শিকারীরা আগেই খবর পেয়ে যাচ্ছেন বিশেষ অভিযানের। এই সুযোগে মৎস্য শিকারী ও ক্রেতা-বিক্রেতারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা চোরাশিকারীদের যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যেই মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার,জেলা মৎস্য অফিসার,দৌলতদিয়া কোষ্টগার্ড,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,স্থানিয় নৌ পুলিশ মিলে ১৬ অক্টোবর একটি অতিরিক্ত অভিযান পরিচালনা করে ৮ জন জেলেকে আটক করে ১৫ কেজি ইলিশ জব্দ করেছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া উপজেলা প্রশাসন গত ৪ হতে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিনে শিবালয়,হরিরামপুর,দৌলতপুর নৌ পথের পদ্মা-যমুনায় ১৪৯ টি অভিযান পরিচালনা করে ৪৮ টি মোবাইল কোর্ট করেছেন। এতে মা ইলিশ নিধনে মামলা হয়েছে ৭৪ টি এবং বিভিন্ন মেয়াদে জেলে দেওয়া হয়েছে ৪৬ জনকে। একই সময়ে নিষিদ্ধ জাল পোড়ানো হয়েছে ৫৭.৬২০ লক্ষ মিটার। যার মূল্য ৮ লক্ষ ৮১ হাজার ১২০ টাকা। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১ লক্ষ ১৫০ টাকা। এসব অভিযানে উদ্ধারকৃত ২ দশমিক ২৮০ মেট্রিকটন ইলিশ এলাকার বিভিন্ন এতিম খানায় ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলে জেলা মৎস্য অফিসার সাইফুর রহমান জানিয়েছেন।

প্রশাসনের পক্ষে অধিকাংশ অভিযানে পরিত্যাক্ত জাল, নৌকা ও ইলিশ জব্দের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন বলে অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করেছেন। তারা আরো বলেছেন, মা ইলিশ নিধন রোধকল্পে আজ পর্যন্ত যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। এর মধ্যেই শিবালয়ের আরিচা ঘাটে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে কয়েকটি বরফ কলের। এটা নিয়েও বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শিবালয়, দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলার প্রায় ৬০ কিলোমিটার বিস্তৃত পদ্মা-যমুনা বক্ষে প্রত্যহ বিপুল সংখ্যক ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে দিনে ও রাতে অবৈধ কারেন্ট জালের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে ইলিশ শিকারের উৎসব চলছে। এই কাজে প্রকৃত জেলেরা নিরব থাকলেও মৌসুমী জেলেরা বেশী তৎপর রয়েছে। ধৃত ইলিশ ক্রয়ে আগ্রহী একশ্রেণির অতিলোভী লোকজনকে নদী পাড়ে নিয়মিত ভিড় জমাতে দেখা গেছে।
স্থানীয় নজরুল ইসলাম জানান, শিবালয়ের আলোকদিয়া চরে প্রতি কেজি ইলিশ ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে ইলিশ শিকারী ও সুবিধাভোগীদের যেন মহোৎসব চলছে। যমুনা নদী সিকস্তি শিবালয়ের তেওতার আলোকদিয়া গ্রামের সন্তোষ অভিযোগের সুরে বলেছেন, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে নদীতে একদিকে চলছে ইলিশ নিধনজজ্ঞ অপরদিকে চলছে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান।“মা ইলিশ নিধন বন্ধ ঘোষনার আগেই যদি নদী তীরবর্তী এলাকায় ও চরাঞ্চলে বিশেষভাবে তৈরী ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলো জব্দ করা যায়” তাহলে মা ইলিশ নিধন কিছুটা হলেও বন্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।
মানিকগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: সাইফুর রহমান বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান সফল করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সকলে সহযোগীতা ছাড়া শতভাগ সফল করা কঠিন। তবে আমাদের মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত পদ্মা-যমুনার শুধু শিবালয়ের অংশ থেকে ১কেজি মা ইলিশ জব্দ করেছি এবং ১৭জন জেলেকে আটক করা হয়েছে।
Leave a Reply