অনলাইন ডেস্ক: নিত্যপণ্যের লাগামহীন দরে নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতাদের। প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছেই। চাল, ডাল, মাছ, মুরগি, ডিম বা সবজি সবকিছুই চড়া দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অনেকে আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে না পেরে প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্যপণ্যও কিনছেন।
কারওয়ান বাজারে আসা ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, সবকিছুর দামই বেশি। সাধারণ মানুষ কী খাবে? কোনো কিছুর দাম যদি ২০ টাকা বাড়ে কমে ৫ টাকা। তাও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালালে। অভিযান না চালালে কমানোর নামগন্ধও থাকে না।
তিনি বলেন, ডিমের দাম লাফ দিয়ে হালি হয়ে গেল ৬০ টাকা! কয়েক দিন আগে যেখানে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কিনতেই কষ্ট হয়ে যেত সেখানে এত টাকা দিয়ে ডিম কিনে খাওয়া কি আমাদের মতো মানুষের পক্ষে সম্ভব? আজকে বাজারে ডিমের দাম দেখলাম হালিতে পাঁচ টাকা কমে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারপরও তো বেশি। ডিমের দাম হালি ৩৫ টাকা হলে ক্রেতাদের জন্য ভালো হতো। আমাদের ব্যয় বাড়ে বেতন তো আর বাড়ে না। আমরা কী করব। সরকার যদি দাম ক্রেতাদের নাগালে না আনে আমাদের তো পুষ্টিহীনতায় ভুগতে হবে। পুষ্টিকর কোনো খাবারই তো কিনতে পারব না।
খরচের তুলনায় আয় বাড়ছে না-এটি উঠে এসেছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যেও। বিবিএসের মাসিক ভোক্তা মূল্যসূচক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে একজন শ্রমিকের গড় আয় ১০৬ টাকার বিপরীতে তার গড় ব্যয় ১১০ টাকা। অর্থাৎ আয়ের চেয়ে চার টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি হারও অনেক কম। জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বিপরীতে শ্রম মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। অর্থাৎ শ্রমিকের মজুরি ৭ টাকা ৭২ পয়সা বাড়লেও ব্যয় বেড়েছে ৯ টাকা ৭৪ পয়সা।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সময়ের আলোকে বলেন, বাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যা ন্যায্য প্রতিযোগিতার অভাব। এ কারণেই ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। জিনিসপত্রের দামও ক্রেতার নাগালের মধ্যে আসছে না। বাজারদর নিশ্চিতে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন বাজার দখলে রাখতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে প্রতিযোগিতা কমিশনকে।
অন্যদিকে দুদিনের ব্যবধানে রাজধানীতে ডিমের দাম হালিতে ৫ টাকা কমেছে, ডজনে কমেছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকায়। দুদিন আগেও যা ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। একদম পাড়া-মহল্লার দোকানে প্রতি পিস ডিম যেখানে ১৫ টাকা পর্যন্ত ছিল, সেটা গতকাল ১৪ টাকা ছিল। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও র্যাবের অভিযানের কারণে বাজারে ডিমের দাম কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি সরবরাহ বাড়ায় ডিমের দাম কমেছে।
অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি ক্ষেতে পানি ওঠায় এবং পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। এতে সবজির দাম বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা জামাল বলেন, বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম। দুদিনের ব্যবধানে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে সবজির দাম। তবে টমেটো আর কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কম। গত রোববার প্রতি কেজি পাকা টমেটো ৩০০ এবং কাঁচামরিচ ২২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার এক সপ্তাহ পর থেকে সবজির দাম কমতে পারে।
বাজারে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৯০, গোল বেগুন ৮০, লম্বা বেগুন ৫৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ এবং ধুন্দল ৭০ টাকা কেজি করে। এ ছাড়া শসা, কচুর মুখি, লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে।
গাজর প্রতি কেজি ১৩০, শিম ২০০ এবং উস্তা-করলা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। এ ছাড়া গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১শ’ টাকায়।
আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজের দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
Leave a Reply