
অনলাইন ডেস্ক: ইতিহাস দুই ধরনের মানুষকে স্মরণে রাখে। ১. উত্তম বা শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের এবং ২. নিকৃষ্ট বা জঘন্য অপরাধীদের। উত্তম কাজের জন্য ইতিহাসে স্থান করে নেওয়া যেমন সৌভাগ্যের, তেমনি নিকৃষ্ট কোনো কাজের মাধ্যমে সমালোচিত হওয়া দুর্ভাগ্যের। তবে নবী-রাসুলরা ছিলেন শ্রেষ্ঠ ও উৎকৃষ্ট মানব। আর এক দল লোক তাঁদের বিরোধিতা করে হয়েছিল নিকৃষ্ট।
পবিত্র কোরআনে নবী-রাসুল এবং তাঁদের আনুগত্যকারী ও বিরুদ্ধাচরণকারীদের ইতিহাস উঠে এসেছে। অবমাননাকারীদের ভয়াবহ পরিণামের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। তাদের এই চিত্র কোরআনে এজন্য আনা হয়েছে, যাতে পরবর্তীরা এ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে।
নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধাচরণকারীদের প্রতি আল্লাহর শাস্তি ছিল বড় কঠোর। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে তাদের শাস্তির কথা আলোকপাত করা হলো।
প্লাবনে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি
হজরত নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায়দের মধ্যে যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি বরং তাঁর সঙ্গে বিরোধিতায় লিপ্ত ছিল, তিনি যতই তাদের ঈমানের দাওয়াত দিতেন, তারা কুফুরির ওপর অটল থাকত। নুহ (আ.)-কে অবমাননা করত এবং তাঁর সঙ্গে চরম বেয়াদবি করত। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মহাপ্লাবনের দ্বারা ধ্বংস করে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর তারা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। আমি তাঁকে এবং নৌকাস্থিত লোকদেরকে উদ্ধার করলাম এবং যারা মিথ্যারোপ করত, তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম। নিশ্চয় তারা ছিল অন্ধ। (সুরা আরাফ : ৬৪)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের অপরাধের কারণে তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছে। অতঃপর জাহান্নামে ঢোকানো হয়েছে। আর তারা নিজেদের জন্য আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোনো সাহায্যকারী পায়নি।’ (সুরা নুহ : ২৫)।
তুচ্ছ মশার দ্বারা নিপাত
হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি দাওয়াত দিতেন। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করা থেকে নিষেধ করতেন। তাদের মধ্যে একটি দল তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি। তাঁকে আল্লাহর নবী হিসেবে মেনে নেয়নি। তারা তাঁর সঙ্গে বেয়াদবি করল। এমনকি তাঁকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আগুনে পর্যন্ত নিক্ষেপ করল। কিন্তু পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করলেন এবং তাঁর অবমাননাকারীদের প্রধান নেতা নমরুদকে তুচ্ছ মশার দ্বারা ধ্বংস করে দিলেন। (তাফসিরে রুহুল মাআনি : ৫/৩২৪)।
পাথরবৃষ্টি ও জমিনে পিষ্ট
হজরত লুত (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে সত্যের দিকে আহ্বান করতেন। তাদেরকে নিকৃষ্ট কাজ থেকে বিরত থাকতে বলতেন। ডাকাতি করা এবং প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ থেকে ফিরে আসতে বলতেন। কিন্তু তারা লুত (আ.)-এর সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ ও মশকরা করে বলত, ‘তুমি সত্য নবী হয়ে থাকলে আমাদের কাছে আল্লাহর শাস্তি নিয়ে আসো!’ পরিশেষে আল্লাহ তাদেরকে জমিন চাপা দিয়ে ধ্বংস করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর যখন আমার নির্দেশ এসে পৌঁছল, তখন আমি সেই জনপদকে ওলটপালট করে দিলাম এবং তাদের ওপর ক্রমাগত বর্ষণ করলাম পোড়ামাটির শক্ত পাথর।’ (সুরা হুদ : ৮২-৮৪)
বিকট আওয়াজের আজাব
হজরত শুয়াইব, হুদ ও সালেহ (আ.) নিজ নিজ সম্প্রদায়কে দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু হতভাগারা তাঁদেরকে অবমাননা ও তাঁদের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করত এবং তাঁদের পিছে লেগে থাকত। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কঠিনভাবে পাকড়াও করলেন। বিকট আওয়াজ দ্বারা তাদের ধ্বংস করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর ওরা সেই উটনি হত্যা করে ফেলল ও সীমা লঙ্ঘন করে আপন রবের হুকুম অমান্য করল এবং বলল, ‘হে সালেহ! তুমি যার ভয় আমাদের দেখাচ্ছ, তা আমাদের কাছে নিয়ে আসো, যদি তুমি রাসুল হয়ে থাক। অতঃপর ওদের পাকড়াও করল ভূমিকম্প। ফলে ওরা নিজেদের ঘরে আধামুখে পড়ে রইল।’ (সুরা আরাফ : ৭৫-৭৮)।
সাগরে নিমজ্জিত করে ধ্বংস
হজরত মুসা (আ.) তাঁর সম্প্রদায়ের মাঝে দীর্ঘ সময় দাওয়াত দিলেন। নিজের দাওয়াতের সত্যতা বোঝানোর জন্য তাদের মোকাবিলায় নানা ধরনের অলৌকিক ঘটনা দেখালেন। কিন্তু তাদের শত্রুতা ও অবাধ্যতা বাড়তেই থাকল। আল্লাহ তায়ালা অহঙ্কারীদের উচিত শিক্ষা দিলেন। নিজ প্রেরিত নবীর সঙ্গে বিরুদ্ধাচরণ ও বেয়াদবির কারণে তাদেরকে সাগরে নিমজ্জিত করে ধ্বংস করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আমি বনি ইসরাইলকে সাগর পার করিয়ে দিলাম এবং ফেরাউন ও তার সৈন্যদলগুলো জুলুম ও সীমা লঙ্ঘন করে তাদের পিছু নিল। পরিশেষে যখন সে (ফেরাউন) ডুবে যাওয়ার সম্মুখীন হলো, তখন বলল, ‘আমি বিশ^াস করলাম যে, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নাই, যাঁর প্রতি বনি ইসরাইল ঈমান এনেছে এবং আমি অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত।’ এখন তুমি এ কথা বলছ অথচ তুমি এর আগে ছিলে নাফরমানিতে লিপ্ত এবং ছিলে ফ্যাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত! (সুরা ইউনুস : ৯০-৯১)। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের লাশটাও রক্ষা করেছেন, যাতে পরবর্তীরা এ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। কোরআনের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা, ‘আর আমি তোমার দেহটা রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকো। আর বহু মানুষ আমার কুদরতের নিদর্শনাবলি সম্পর্কে বেখবর।’ (সুরা ইউনুস : ৯২)।
এমনিভাবে যারা মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননা করেছে, বিরুদ্ধাচরণ ও বেয়াদবি করেছে, তাকে সর্বদা কষ্ট দিয়েছে, তাদের করুণ পরিণতির কথা কে না জানে? আবু জাহেল, উতবা, শায়বাদের পরিণতির কথা ইতিহাস ধরে রেখেছে। তাদের নাম এলে মানুষ ঘৃণাভরে উচ্চারণ করে। অভিশাপের পাহাড় তুলে দেয় তাদের ওপর। আর সৃষ্টিকর্তার অসন্তুষ্টি ও পরকালীন চিরস্থায়ী জাহান্নামের তিক্ত উপহার তো আছেই। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত পৃথিবীতে এমন কিছু করা, যাতে সৃষ্টিকর্তা সন্তুষ্ট হন এবং মানুষ তাঁকে যুগ যুগ ধরে স্মরণ করতে থাকে। মহানবী (সা.)-কে অবমাননা নয়; তাঁর প্রতি প্রেম-ভালোবাসা প্রদর্শনই হোক প্রতিটি মানুষের মূল কাজ। আর যারা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ ও অবমাননা করে বেড়াচ্ছ- তোমরা পরাক্রমশীল মহান প্রভুর শাস্তির অপেক্ষা করো। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে নবীপ্রেমিক হওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply