অনলাইন ডেস্ক: দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সরু চালের দাম। একই সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১৫-২০ টাকা। শীতের সবজির দামও এখন ঊর্ধ্বমুখী। সব সবজিই এখন গত দুই সপ্তাহের তুলনায় ১০-১২ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বাজারে আজ সরু চাল বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার টাকা বাড়তি দামে। আমন মৌসুমেও বাজারে চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। শুধু মোটা চালের দাম সামান্য কমেছিল। তবে কয়েক দিনের ব্যবধানে সরু চালের দাম কেজিতে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে মোটা চালের দাম রয়েছে আগের মতই।
মালিবাগ বাজারের চাল ব্যবসায়ী কামাল বলেন, আমন মৌসুমের চাল বেশিভাগই মোটা হয়। এজন্য এ সময়ে মোটা চালের দাম না বাড়লেও সরু চালের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। যদিও বাজার স্থিতিশীল রাখতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর পরও বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়েড়নি। বাজার ও মান ভেদে সরু মিনিকেট চাল ৬৮-৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের নাজিরশাইল চালের কেজি ৭৫-৮৫ টাকা।
অন্যদিকে শীত মৌসুম শেষ না হলেও মৌসুমি সবজির দাম বাড়তির দিকে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ঘাটতির কথা বললেও কোথাও সেরকম লক্ষ্য করা যায়নি। বরং বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। তবে দাম কেজিতে বেড়েছে ১০-১২ টাকা পর্যন্ত। শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. জসিম বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। বেশি দামে কেনা বলে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। যদিও শেষ কয়েক সপ্তাহ সবজির দাম অনেক কম ছিল।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫-২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৩০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। সেখানে ডিম বিক্রেতা নাজমুল বলেন, পাইকারি বাজারে ডিম নেই। সে কারণে এখন প্রতি ডজনে ১৫ টাকা বাড়তি বিক্রি করতে হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ডিমের দাম ১১৫-১২০ টাকা ডজন ছিল। তিনি জানান, তাগিদ দিয়েও চাহিদামতো ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। শীতের কারণে ডিমের চাহিদা বাড়ায় এ পরিস্থিতি বলে জানিয়েছে পাইকাররা। তবে কিছু এলাকার বাজারে ১২০-১২৫ টাকায়ও প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে। হালি নেওয়া হচ্ছে ৪২-৪৪ টাকা।
অন্যদিকে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিমেও। প্রতি হালি হাঁসের ডিম এখন ৭২-৭৫ টাকা। যা পাঁচ টাকা বেশি। একইভাবে দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে আদা-রসুনের দাম। বাজারে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকায়। যা ১২০-১৪০ টাকার মধ্যে ছিল। এছাড়া ৮০-১০০ টাকার মধ্যে থাকা রসুনের দাম এখন ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম ৩০ শতাংশ এবং আদার দাম ৪০-৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আদা-রসুনের দাম বাড়ার বিষয়ে শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতারা পণ্যের সরবরাহ কম থাকাকে দায়ী করছেন। তাদের দাবি, চীনে আদা-রসুনের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি সংকট রয়েছে দেশি আদা-রসুনের।
সবজির বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মুলা ও প্রতি পিস ফুলকপিতে ১ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সিমের কেজি এখন ৩০ টাকা, কাঁচা মরিচের কেজি ১২০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, উচ্ছের কেজি ৭০ টাকা, তাল বেগুনের কেজি ৬০ টাকা। এছাড়া লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি, বরবটির কেজি ৮০ টাকা, ভালো মানের প্রতি পিস লাউ ১০০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতি পিস লাউ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁপের কেজি ২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। এছাড়া নতুন আলুর কেজি ৩০ টাকা, আমদানি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে।
শান্তিবাগ মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছের দাম আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকায়, রুই মাছ আকার বেধে বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। প্রতিকেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। প্রতিকেজি পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। প্রতিকেজি কই মাছ বিকিার হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা দরে। প্রতিকেজি বোয়াল মাছ বিক্রি হচ্ছে, আকার বেধে ৩৫০-৬০০ টাকায়। অপরদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৭০০ টাকায়, খাসিঁর মাংস প্রতিকেজি ৯৫০-১০০০ টাকায়।
জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পণ্য পরিবহনে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঁচাবাজারে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, বিশেষ করে শাকসবজির দাম বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রতিটি সবজির দাম প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। তেল, ডাল, চাল, চিনি, ডিমসহ সব পণ্যের দাম বাড়ায় ব্যয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোতে পারছে না নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষ।
Leave a Reply