অনলাইন আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মঙ্গলবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১শ’ ৪২ মিলিমিটার (৫.৫৯ ইঞ্চি) এরও বেশি ঝড়োবৃষ্টি ৩০ লাখেরও বেশি লোকের আবাস দুবাইকে প্লাবিত করে দিয়েছে। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ১শ’ ২৭ মিলিমিটার (৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়েছে, যেখানে সাধারণত পুরো বছরে প্রায় ৭৬ মিলিমিটার (৩ ইঞ্চি) বৃষ্টি ঘটে থাকে। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটিতে এবারে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে।
ইউএই-এর সংবাদ সংস্থা এটিকে একটি ঐতিহাসিক আবহাওয়া ঘটনা বলে অভিহিত করেছে। প্রতিবেশী ওমানেও ভারী বর্ষণ ও বন্যা দেখা দিয়েছে যাতে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে আঘাত হানার আগে ঝড়টি প্রাথমিকভাবে রবিবার ওমানে আঘাত হানে। বাহরাইন, কাতার ও সৌদি আরবেও বৃষ্টি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং আরব উপদ্বীপের অন্য কোথাও বৃষ্টিপাত বিরল, যা সাধারণত শুষ্ক মরুভূমির জলবায়ুর জন্য পরিচিত। গ্রীষ্মে এই অঞ্চলটিতে বাতাসের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১শ’ ২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) উপরে উঠে থাকে। সামাজিক মাধ্যমগুলিতে, ইউএই-এর ন্যাশনাল সেন্টার ফর মেটিওরোলজির (এনসিএম) আবহাওয়াবিদদের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে যে, ইউএই ক্লাউড সিডিং বা মেঘের মধ্যে বৃষ্টির বীজ বপন করে কৃত্রিমভাবে এই ঝড়-বৃষ্টি ঘটিয়েছে।
প্রতিবেদনগুলিতে বলা হয়েছে যে, দুবাই বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে ছয় বা সাতটি ক্লাউড-সিডিং বিমান উড্ডয়ন করেছিল, যা ১৯৯০ সালে শুরু হয়েছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ইউএইতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও বন্যা সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়েছে। ইউএস ন্যাশনাল ওশনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী রায়ান মাউ বলেন, ‘যদি ক্লাউড সিডিংয়ের জন্যে এমনটা হতো, তাহলে তাদের কাছে সব সময় পানি থাকত। আপনি হালকা বাতাস থেকে বৃষ্টি তৈরি করতে এবং ৬ ইঞ্চি (১শ’ ৫২.৪ মিলিমিটার) পানি পেতে পারবেন না।›
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, মানব সৃষ্ট আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে তীব্র বৃষ্টিপাত সহ বিশ্বজুড়ে আরও চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘটছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট, এনার্জি অ্যান্ড ডিজাস্টার সলিউশনস-এর পরিচালক মার্ক হাউডেন বলেন, ‹বৈশি^ক উষ্ণায়নের ফলে দুবাইয়ের আশেপাশের সমুদ্রে অভাবনীয় উষ্ণ পানি রয়েছে, যেখানে উপরে খুব উষ্ণ বাতাস রয়েছে। এটি সম্ভাব্য বাষ্পীভবনের হার এবং সেই পানি ধরে রাখার জন্য বায়ুমণ্ডলের ক্ষমতা উভয়ই বাড়িয়ে দেয়, যা, আমরা দুবাইতে যা দেখেছি, তার মতো বৃষ্টির জন্য বড় মজুদের ক্ষমতা দেয়।
উল্লেখ্য, ক্লাউড-সিডিং বিভিন্ন দেশের পানির ঘাটতি মেটানোর প্রচেষ্টার একটি অংশ। এই প্রকিয়ার জন্য প্লেন এবং স্থল কামান ব্যবহার করে ঘনীভূত পানির কণাগুলিকে মেঘের মধ্যে ছুঁড়ে দিতে হয়, যা ইতিমধ্যেই আর্দ্রতা ধরে রাখে, যাতে এটি পড়ে যায়। পর্যাপ্ত ফোঁটাগুলি একত্রিত হয়ে গেলে, তারা ভারী হয়ে যায় এবং বৃষ্টি বা তুষার হিসাবে পৃথিবীতে পড়ে। ধূলিকণা এবং ময়লার মতো ছোট কণাগুলি প্রায়শই মেঘের গঠন এবং বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাতে আর্দ্রতা ঘনীভূত হয়।
সিলভার আয়োডাইড সম্ভাব্যভাবে একই কাজ সম্পাদন করতে পারে। অন্যান্য পদার্থ, যেমন শুষ্ক বরফ একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, ১৯৪০-এর দশকে প্রবর্তিত পদ্ধতিটি একটি পরিষ্কার আকাশে বৃষ্টি তৈরি করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, ভারত, মালয়েশিয়া, রাশিয়া এবং মেক্সিকোর মতো খরা-পীড়িত অঞ্চলের সরকারগুলি ক্লাউড সিডিং ব্যবহার করে থাকে।
Leave a Reply