অনলাইন ডেস্কঃ চলতি বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সুইডেনের স্টকহোমে রয়্যাল সুইডিস অ্যাকাডেমি পদার্থের নোবেল বিজয়ী হিসেবে তাদের নাম ঘোষণা করেছে। পদার্থের এই তিন নোবেলবিজয়ী হলেন, ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালাইন অ্যাসপেক্ট, মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী জন এফ ক্লজার ও অস্ট্রিয়ার পদার্থবিজ্ঞানী অ্যান্টন জেলিঙ্গার। নোবেল কমিটি বলেছে, বেল ইনেকুয়ালিটির পরীক্ষায় পাওয়া প্রমাণ ও কোয়ান্টাম অ্যান্টেঙ্গেলমেন্ট গবেষণায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
নোবেল পুরস্কারের ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার পাবেন এ তিন বিজ্ঞানী। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ছোট আকারের অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে আয়োজক কমিটির বাইরে অন্য কোনো অতিথি উপস্থিত ছিলেন না। এ বছর নোবেল ফাউন্ডেশন ২০২২ সালের বিজয়ীদের সঙ্গে গত দুই বছরের বিজয়ীদেরও ডিসেম্বরের নোবেল সপ্তাহে আমন্ত্রণ জানাবে। সেখানে ১০ ডিসেম্বর নোবেল পুরস্কারের মূল্য ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনারের (প্রায় ৯ লাখ ডলার) পাশাপাশি বিজয়ীদের হাতে একটি সনদ ও স্বর্ণপদক তুলে দেওয়া হবে।
এর আগে, সোমবার বিলুপ্ত হোমিনিনের জিন ও মানব বিবর্তনের যুগান্তকরী এক গবেষণার জন্য চলতি বছরের চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই পুরস্কার পেয়েছেন সুইডিশ জিনতাত্ত্বিক বিজ্ঞানী সোয়ান্তে প্যাবো। গত বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন জাপানি বংশোদ্ভূত মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী শুকুরো মানাবে, জার্মানির পদার্থবিজ্ঞানী ক্লাউস হ্যাসেলম্যান ও ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী জর্জিও পারিসি। বৈশ্বিক জলবায়ুর কাঠামোগত মডেল নির্মাণ, বৈশ্বিক উষ্ণতার পূর্বাভাস ও তা নির্ভুলভাবে পরিমাপের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আবিষ্কার এবং পরমাণু ও গ্রহীয় পরিসরের ভৌত কাঠামো এবং তার ওঠানামার মিথস্ক্রিয়া আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পান তারা।
নোবেল ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পদার্থ বিজ্ঞানে ১৯০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ১১৫টি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে এককভাবে এই পুরস্কার পেয়েছেন মোট ৪৭ জন। নোবেলের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানে পুরস্কার পেয়েছিলেন অস্ট্রেলীয়-ব্রিটিশ পদার্থবিদ লরেন্স ব্র্যাগ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে ১৯১৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে তার বাবার সঙ্গে নোবেল পেয়েছিলেন তিনি। এছাড়া পদার্থবিদ্যায় এখন পর্যন্ত মোট চারজন নারীকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ম্যারি কুরি ১৯০৩ সালে, মারিয়া গোয়েপার্ট-মেয়ার ১৯৬৩, ডনা স্ট্রিকল্যান্ড ২০১৮ এবং আন্দ্রিয়া ঘেজ পেয়েছিলেন ২০২০ সালে। নোবেলের ইতিহাসে পদার্থে মাত্র একজনই দুবার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি হলেন বিজ্ঞানী জন বার্ডিন। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৯৬ বছর বয়সে পদার্থের নোবেল জিতেছিলেন আর্থার আশকিন।
সোমবার চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণার মাধ্যমে এবারের নোবেল পুরস্কার মৌসুমের সূচনা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার রসায়ন এবং বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আগামী শুক্রবার (৭ অক্টোবর)। আর ১০ অক্টোবর অর্থনীতিতে বিজয়ী ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হবে এবারের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা। উনবিংশ শতাব্দীতে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন ডিনামাইট নামের ব্যাপক বিধ্বংসী বিস্ফোরক, যা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তির মালিক করে তোলে। মৃত্যুর আগে তিনি উইল করে যান— প্রতি বছর ৫টি বিষয়ে যারা বিশেষ আবদান রাখবেন তাদের যেন এই অর্থ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ওই ৫ বিষয় হলো— চিকিৎসা, পদার্থ, রসায়ন, সাহিত্য ও শান্তি। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।
অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করা হয় অনেক পরে ১৯৬৮ সালে। ব্যাংক অব সুইডেন আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে এই পুরস্কার চালু করে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে আগামী ১০ অক্টোবর।
Leave a Reply