অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের তরুণ প্রজন্মই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের মূল শক্তি।
শনিবার (২৯ জুলাই) শেখ হাসিনা রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্মই হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে দক্ষ জনশক্তি।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘ভারত-বাংলাদেশ স্টার্টআপ ব্রিজ’ নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্টার্টআপ ফান্ড’-এর পাশাপাশি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ এক্সিলারেটর’ উদ্বোধন করেন।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি স্মার্ট দেশ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্ম মেধাবী এবং তাদের নতুন উদ্ভাবন বাস্তবায়নের ক্ষমতা রয়েছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা প্রতিটি উপজেলায় বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করছে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে।
তিনি উল্লেখ করেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লক চেইন, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা, মেডিকেল স্ক্রাইব, সাইবার নিরাপত্তার মতো উন্নত প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। তার সরকারের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচটি ইউনিকর্ন (কমপক্ষে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি স্টার্টআপ কোম্পানিকে ইউনিকর্ন বলা হয়) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০টি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ তৈরি করতে সহায়তা করা যেখানে প্রতিটি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সরকার প্রধান বলেন, আমি দেশী এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের স্টার্টআপগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই। আমরা আপনার বিনিয়োগ রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করেছি।
তার সরকার বিভিন্ন মহলের সমালোচনা, অপমানজনক ও হাস্যকর মন্তব্য সহ্য করে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমরা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছি। কিন্তু, শুরুতে কড়া সমালোচনা, অপমান ও হাস্যকর মন্তব্যের সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি, যখনই কোনো কারিগরি সমস্যা বা ত্রুটি ছিল, তখনই একটি মহল আমাদের উপহাস করে বলেছিল, ‘এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের ফল।’ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করার সময় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে। সে সময় আমাদের অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হযেছিল। এখন, আমি গর্বের সাথে বলতে পারি যে, আমরা দেশকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, মেধাবী এবং জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে উন্নত প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর জোর দিয়েছে। সরকারের সহায়তায় স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এ পর্যন্ত ৩০টি বিনিয়োগ সম্পন্ন করেছে এবং ‘শতবর্ষে শত আশা’ ক্যাম্পেইনের আওতায় ১০০টি স্টার্টআপ বিনিয়োগের পথে রয়েছে। এই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে ১৫ লাখেরও বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ৯২ লাখ লোক সেবা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে ৫৫ শতাংশ নারী।
তার সরকার জাতীয় স্টার্টআপ নীতিমালা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ স্টার্টআপ তহবিল প্রণয়ন করেছে যার মাধ্যমে দেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকো-সিস্টেম গড়ে উঠবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে এ পর্যন্ত ৯২ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে স্টার্টআপ নিয়ে সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো অনেক দূর এগিয়েছে, যেখানে স্টার্টআপদের মধ্যে অনুদান প্রদানের জন্য ২০১৬ সালে ‘আইডিয়া প্রকল্প’ চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্প থেকে তার সরকার স্টার্ট আপ সত্তাকে উৎসাহিত করতে ৩৮৫টি স্টার্ট-আপকে ৪০ কোটি টাকা দিয়েছে। এছাড়া এটুআই ইনোভেশন ফান্ড থেকে ২৬৩টি উদ্ভাবনের জন্য ৪৫ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।
‘ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে ১৮ কোটিরও বেশি মোবাইল সিম এবং ১৩ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। কারণ দেশের কিছু এলাকায় পর্যাপ্ত ৪জি এবং ৫জি ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া যায়। ই-কমার্স ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তিতে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ফ্রিল্যান্সাররা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় করছে।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ফ্ল্যাগশিপ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড দুই দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বক্তব্য রাখেন আইসিটি বিভাগের সচিব শামসুল আরেফিন ও স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট, বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ট এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিষয়ক তিনটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এছাড়াও, আটটি স্টার্টআপকে তাদের অসামান্য পারফরম্যান্সের জন্য আটটি বিভিন্ন বিভাগে স্টার্টআপ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো হল শপআপ, পাঠাও, বিকাশ, ১০ মিনিট স্কুল, ইউএনডিপি ইয়ুথকো ল্যাব, নগদ, এসবিকে টেক ভেঞ্চার এবং পরবর্তী অর্থায়ন।
পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক এবং এসবিকে টেক ভেঞ্চারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির তাদের নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
এছাড়াও দুই উদ্যোক্তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন অনুদান থেকেও অনুদান দেওয়া হয়।
দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট-২০২৩ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন দেশের স্টার্টআপ, উদ্যোক্তা, পুঁজিপতি, অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর, নিয়ন্ত্রক, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং বিশেষজ্ঞদের একত্রিত করা।
Leave a Reply