শাহজাহান বিশ্বাস:
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আজ দশ দিন অতিবাহিত হলেও ঢাকা-আরিচা ও পাটুরিয়া মহাসড়কে চলাচলরত বাস শ্রমিকদের এখন কাটেনি ঈদের রেস। বিশেষ করে সেলফি, নীলাচল ও পদ্মা লাইনের বাস শ্রমিকরা সাভার ও নবীনগর ও মানিকগঞ্জগামী যাত্রীদের নিকট থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়সহ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিগত কয়েকদিন ধরে ঈদের ছুটি শেষে মানুষ ফিরছে কর্মস্থলে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের লোকজন আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট ব্যাবহার করে থাকে। এরা লঞ্চ, ফেরি ও স্পিডবোট নৌকাসহ নানা ধরনের নৌযানে নদী পার হয়ে আরিচা-পাটুরিয়া ঘাট ও উথুলী মোড় থেকে উক্ত বাসসহ বিভিন্ন ধরনের বাসে ফিরছেন কর্মস্থলে।
রবিবার ( ২১ এপ্রিল ) আরিচা-পাটুরিয়া ঘাট ও উথলী মোড় ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই সেলফি, নীলাচল ও পদ্মা লাইনের বাসগুলো রাস্তার মাঝে এলোমেলোভাবে দাড় করিয়ে যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে। এভাবে যাত্রী উঠানো অনেকটা ঝুকিপূর্ণ বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আজকেও যাত্রীর কিছুটা চাপ দেখা গেছে। এ সুযোগে ওই সকল পরিবহণ শ্রমিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। সেলফি, নীলাচল ও পদ্মা লাইন এসব বাস লোকাল সার্ভিস হলেও যাত্রীদের ভীড়ের কারণে মানিকগঞ্জগামী যাত্রীদেরকে উঠাতে চাচ্ছে না। আবার কেউ জোর করে উঠলেও তাদের কাছ থেকে ৫০টাকার ভাড়া আদায় করছে ৮০ টাকা করে। এ নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অনেক বাক-বিতন্ডা হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তি এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে স্থানীয় যাত্রীদের মাঝে। ঢাকার গাবতলীর ভাড়া ঠিক থাকলেও সাভার ও নবীনগরের ভাড়া অন্যান্য সময় ১শ’ ২০ টাকার ভাড়া ১শ’ টাকা করে নেয়া হলেও আজকে রবিবার নিচ্ছে ১৫০টাকা করে। বাড়তি ভাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাস শ্রমিকরা বলেন ঈদ উপলক্ষে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে,পাদ্মা লাইন, নীলাচল ও সেলফি পরিবহণের শ্রমিকরা মানিকগঞ্জসহ লোকাল যাত্রী নিচ্ছে না। ফলে, অনেক যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আজকে তার পরিক্ষা ছিল। উথুলী মোড়ে সেলফি ও নীলাচল গাড়িতে উঠতে গেলে তাকে উঠতে দেয়া হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে বিকল্প অন্য বাসে তাকে মানিকগঞ্জ যেতে হয়েছে। এভাবে স্থানীয় অনেক যাত্রীকেই উঠতে দেওয়া হচ্ছে না এবং ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে দেখা গেছে। দু’একজন জোর করে উঠলেও তাদের নিকট থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সেলফি পরিবহনের যাত্রী হাসেম আলী বলেন, পাবনার কাজিরহাট থেকে লঞ্চ পার হয়ে আরিচা থেকে সিএনজি যোগে উথুলী মোড়ে আসি। এখান থেকে বেশীরভাগ পরিবহণগুলো সাভার নবীনগর যাচ্ছে আর যাত্রী প্রতি ভাড়া নিচ্ছে ১শ’৫০শ’ টাকা করে। সেলফি ও নীলাচল ও পদ্মালাইন পরিবহণ ঢাকার গাবতলী পযর্ন্ত যাচ্ছে। গাবতলীর ভাড়া ঠিক থাকলেও সাভার নবীনগরের ভাড়া বেশী নিচ্ছে। অন্যান্য সময় এসব বাসে যাত্রী প্রতি ১শ’ ২০টাকার ভাড়া ১শ’ টাকা করে নিলেও আজকে নিচ্ছে ১শ’ ৫০টাকা করে।
পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা যাত্রী হামেদ আলীর সাথে কথা হয় আরিচা ঘাটে। নদীর এপার-ওপার একই অবস্থা। ঈশ্বরদী থেকে পাবনার কাজিরহাট পর্যন্ত আসতে বাড়তি ভাড়া দিতে হয়েছে তাকে। তাও আবার বলা যাবে না। বললে তাকে আনা হবে না বলে শর্ত জুড়ে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। কি আর করা উপায় নেই। যেতে হবে কর্মস্থলে। বাধ্য হয়েই অন্য দশজনের মতো শর্ত সাপেক্ষে বাড়তি ভাড়া দিয়ে কাজিরহাট আসা। এরপর লঞ্চযোগে আরিচা ঘাট। এখানে এসে দেখি একই অবস্থা। নবীনগর ১শ’ ২০টাকার ভাড়া হাকা হচ্ছে ১শ’ ৫০ টাকা তাও আবার প্রশাসনের লোক জিজ্ঞেস করলে বলতে হবে ১শ’ টাকা দেড়’শ টাকা বলা যাবে না। এই শর্ত দিয়ে যাত্রী তুলছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। এমনিতেই ঈদে বাড়িতে গিয়ে বেতন-বোনাস সব শেষ। এরপর বাড়তি ভাড়া এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। এ যেন মড়ার পর খড়ার ঘা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে সেলফি গাড়ির এক সুপারভাইজার বলেন, গাড়িগুলো যাওয়ার সময় ভর্তি করে গেলেও আসার সময় আবার খালি আসতে হয়। তাই যেটা বাড়তি নিচ্ছে এটা আসলে বাড়তি না। সেলফি গাড়িগুলো তেলের হওয়ায় আপ-ডাউনে অনেক টাকার তেল লাগে। তাই ঈদের বাজার যাত্রীদের নিকট থেকে একটু ধরে নেওয়া ছাড়া উপায় নাই।
এ ব্যাপারে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো বেলাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
Leave a Reply