শাহজাহান বিশ্বাস: ঘণকুয়াশার কারণে আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে স্বাভাবিকভাবে বিগত কয়েকদিন যাবত ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দফা দফায় বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল। ফলে ঘাটগুলোতে আটকে পড়ছে যাত্রী এবং যানবাহন। আটকে পড়া এসব যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকদেরকে ঘন্টার পর ঘন্টার অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরি পার হতে। যাত্রীদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই ফেরি ঘাটগুলোতে। খাবার, পয়:নিস্কাশনসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এসব যানবাহন শ্রমিক এবং যাত্রীদেরকে। বিশেষ করে এই শীতে মধ্যে বেশী অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে শিশু এবং নারী যাত্রীদেরকে।
দেশের দক্ষিণ ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের সহজ ও আরাম দায়ক যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুট। কোন উৎসব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নাব্যতা সংকটসহ সারা বছরই সাধারণ যাত্রী ও চালকদের এ রুটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কোনভাবেই যেন এ ভোগান্তির শেষ হচ্ছে না। যাত্রী বোঝাই যানবাহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জরুরি পারাপারের করার পরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রী ও ট্রাক শ্রমিকদেরকে।
বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ঘণকুয়াশার কারণে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টা থেকে রবিবার সকাল ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসময় দুর্ঘটনা এড়াতে কাজিরহাট থেকে ছেড়ে আসা বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামাল ও কুঞ্জুলতা নামের তিনটি ফেরি যমুনার মাঝ নদীতে এবং ২টি ফেরি আরিচা ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে শনিবার সকাল ১০:৪০ পর্যন্ত সাড়ে ১১ ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।
এদিকে পাটুরিয়া-দৌতদিয়া নৌরুটে শনিবার দিবাগত রাত ২টা ৩০ থেকে রবিবার সকাল ৭টা ৩০ পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ৫ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে।এসময় যমুনার মাঝ নদীতে শাহপড়ান নামের একটি ফেরি নোঙর করে থাকে।এছাড়া পাটুরিয়া ঘাটে ৫টি এবং দৌলতদিয়া ঘাটে ৬টি ফেরি নোঙর করে থাকতে বাধ্য হয়। দুর্ঘটনা এড়াতেই এসব ফেরি নোঙর করে রাখা হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
ফলে দীর্ঘ এ সময়ে ঘাট পারের অপেক্ষায় থেকেছে শত শত যানবাহন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কুয়াশার ঘনত্ব কেটে গেলে এ রুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ দুই পারে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে শতাধিক যানবাহন।
রাজবাড়িগামী প্রাইভেটকার চালক মোকছেদ আলী বলেন, সাড়ে ৩ঘণ্টা হয়েছে ঘাট এলাকায় এসেছি। এখনও ফেরিতে উঠতে পারেনি। ঘন কুয়াশায় ঘাট বন্ধ থাকায় এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
রাজবাড়ি পরিবহনের যাত্রী আব্বাস আলী বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ফেরির অপেক্ষা করা বড় ভোগান্তি। এ নৌ রুটে ব্রীজ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ ভোগান্তি থেকেই যাবে।
ট্রাকচালক হাসেম মিয়া বলেন, শনিবার দিবাগত রাত পোনে ৩টায় পাটুরিয়া ঘাট এসেও ফেরিতে উঠতে পারেনি। রাতে ঘাট বন্ধ থাকায় আরো ভোগান্তি বেড়েছে। সকাল ঘাট চালু হলেও বাস ও ছোট গাড়ি পারাপার করায় ট্রাকগুলো আটকে আছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম শাহ মুহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ঘন কুয়াশায় দীর্ঘ সময় নৌ-রুটগুলো বন্ধ থাকায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। জরুরি যানবাহন, পরিবহন বাস ও ছোট গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করায় সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাকগুলো টার্মিনালে পারের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে আমাদের ফেরির কোন সংকট নেই খুব দ্রুতই অপেক্ষামান যানবাহন পারাপার করে দিব। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ৭টি বড় ফেরি ও ৫টি ছোট ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ৫টি ফেরি চলাচল করছে।
Leave a Reply