অনলাইন ডেস্ক: ভারী বর্ষণ আর উজান ঢলে গাইবান্ধার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি ওঠায় গাইবান্ধার নদীর তীরবর্তী ৪টি উপজেলার ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
উপজেলাগুলো হচ্ছে, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা। পাঠদান বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা।
বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) দুপুরে সময়ের আলোকে বন্ধ ঘোষণার তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকসানা বেগম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম।
শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, সপ্তাহজুড়ে জেলায় ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত দুইদিনে গাইবান্ধার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার চার উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত চার উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারদিকেই থৈ থৈ পানি। এরমধ্যে কিছু স্কুলের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে এবং কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফলে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউই স্কুলে যেতে পারছেন না। যার কারণে বন্যা কবলিত চার উপজেলার ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
এছাড়া ভাঙন ও বিলিনের হাত থেকে রক্ষায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থানান্তর করা হয়েছে। ওই দুটি বিদ্যালয় নিকটবর্তী নিরাপদ স্থানে নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকার যে বিদ্যালয়গুলোতে এখনো পানি উঠেনি সেগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সকালে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠে ও চারদিকে হাঁটুপানি। পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার (৩ জুলাই) গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৫১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন কাউনিয়া পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত বুধবার বিকেল ৩টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত এই পরিমাণ পানি বৃদ্ধি পায়। এই সময় জেলায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
পানি বৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর, গিদারি, ঘাগোয়া ও ফুলছড়ি উপজেলার এরান্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি ও ফজলুপুর এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, হরিপুর ইউনিয়ন ও সাঘাটা উপজেলা ভরতখালী ও হলদিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথেই নতুন করে সদরের মোল্লার চর ও ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদ-নদীবেষ্টিত জেলার চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। প্লাবিত এলাকায় পাট ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি পটোল এবং মরিচসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে আরও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজনের ঢলে গাইবান্ধায় সবগুলো নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুতি নিয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল মিয়া বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যাগ মোকাবেলায় জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী এবং শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে।
Leave a Reply