1. shahjahanbiswas74@gmail.com : Shahjahan Biswas : Shahjahan Biswas
  2. ssexpressit@gmail.com : sonarbanglanews :
শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:২৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
দেশের উন্নয়ন শেখ হাসিনার আমলেই হয়েছে:মমতাজ প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে হরিরামপুরে গাছের চারা রোপন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ক্ষেতমজুর সমিতির সভা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আব্দুল লতিফ প্রধান শ্রেষ্ঠ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হরিরামপুরে মৃত গ্রাহকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র আর মির্জা ফখরুল ভয় দেখায় গোবিন্দগঞ্জে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে কাঠমিস্ত্রির মৃত্যু   গাইবান্ধা জেলা আ’লীগ সভাপতির সহধর্মিনীর ইন্তেকাল হরিরামপুরে উদ্যোক্তাদের কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ  খালেদাকে বিদেশ নিতে আইনগত জটিলতা আছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে আফগান শিশুদের দেওয়া হয় ‘ঘুমের’ ওষুধ

  • সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২
  • ১১৮ বার পড়েছেন

অনলাইন আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানদের অনেকে তাদের ক্ষুধার্ত সন্তানদের শান্ত রাখতে ওষুধ ব্যবহার করছে। জীবনধারণের জন্য আবার কিছু লোক তাদের মেয়ে সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে।

অনেকে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও বিক্রি করে দেন। দেশটিতে তালেবানের ক্ষমতা দখল ও বিদেশি অনুদান বন্ধের পর দ্বিতীয় শীতেই লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে রয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আবদুল ওয়াহাব নামে এক আফগান বিবিসিকে বলেন, আমাদের সন্তানরা কাঁদতেই থাকে, তারা ঘুমায় না। আমাদের কোনো খাবার নেই। তাই আমরা ফার্মেসিতে গিয়ে ট্যাবলেট নিয়ে আসি ও তাদের দিই, যাতে তারা তন্দ্রাচ্ছন্ন বোধ করে।

আব্দুল ওয়াহাব দেশটির তৃতীয় বৃহত্তর শহর হেরাতে বাস করেন। শহরটিতে রয়েছে কাদামাটির হাজারো ছোট ছোট ঘর। গত এক দশকে এই সংখ্যা বেড়েছে। যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বাস্তুচ্যুত ও ক্ষত বয়ে বেড়ানো লোকজনে শহরটি পূর্ণ।

আবদুলের কাছে বিবিসি জানতে চায়, কত সংখ্যক মানুষ ক্ষুধার্ত সন্তানদের ওষুধ দিয়ে শান্ত রাখছে। জবাবে তিনি বলেন, আমাদের অনেকেই, আমরা সবাই।

গুলাম হজরত নামে এক ব্যক্তি তার পকেট থেকে কতগুলো ট্যাবলেট বের করলেন। এগুলো ছিল আলপ্রাজোলাম- ট্রানকুইলিজার্স গোত্রীয়। এসব ট্যাবলেট সাধারণত দুশ্চিন্তাজনিত রোগের চিকিৎসায় দেওয়া হয়ে থাকে।

গুলামের ছয় সন্তান। ছোটটির বয়স এক বছর। আমি তাকেও এটি (ওষুধ) দিই, বলেন তিনি।

আরও কয়েকজন দেখালেন, তাদের কাছে রয়েছে অ্যাসসিটালোপ্রাম ও সারট্রালাইন গোত্রীয় ট্যাবলেট। তারা বলছিলেন, এসব ওষুধও সন্তানদের দেন। এসব ওষুধ মূলত বিষণ্ণতা ও উদ্বেগজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

চিকিৎসকরা বলছেন, অপুষ্টিতে থাকা শিশুদের ক্ষেত্রে এসব ওষুধ ব্যবহার করলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, ঘুম ও আচরণের সমস্যাসহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে।

হেরাতে স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে বিবিসি দেখতে পায়, ১০ আফগানিস (১০ মার্কিন সেন্ট) বা একটি রুটির দামে পাঁচটি ট্যাবলেট পাওয়া যায়। সংবাদ মাধ্যমটি যেসব পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিল, তাদের অধিকাংশই প্রতিদিন এক টুকরো রুটি ভাগাভাগি করে খায়। এক নারী বলছিলেন, সকালে তারা শুকনো রুটি খেয়েছিলেন। আর রাতে রুটি পানিতে ভিজিয়ে রেখেছেন, যাতে কিছুটা নরম হয়।

জাতিসংঘ বলছে, একটি মানবিক ‘বিপর্যয়’ আফগানিস্তানে উন্মোচিত হচ্ছে। হেরাতের বাইরের অঞ্চলের অধিকাংশ লোক দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে। এক বছর ধরে তারা কষ্টে জীবনযাপন করছে।

গত বছর আগস্টে যখন আন্তর্জাতিক কোনো স্বীকৃতি ছাড়াই তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে, তখন থেকে দেশটিতে বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় অর্থনৈতিক ভাঙন। পুরুষদের অধিকাংশ দিনই কাজ ছাড়া থাকতে হয়। খুব কম দিনই লোকেরা কাজ খুঁজে পায়। পেলেও সর্বসাকুল্যে দৈনিক আয় ১০০ আফগানিস বা এক ডলারের কিছু বেশি।

বিবিসি দেখেছে, লোকজন তাদের পরিবারকে ক্ষুধা থেকে বাঁচাতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। আম্মার (ছদ্মনাম) নামে এক তরুণ বলেন, তিন মাস আগে তিনি অস্ত্রোপচার করে কিডনি সরিয়ে ফেলেছেন। তার পেট থেকে পেছনে ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের সেলাইয়ের দাগ, এখনও শুকায়নি। তার বয়স কেবল ২০ এর ঘরে।

তিনি বলেন, কোনো উপায় ছিল না। আমি জানতে পেরেছিলাম স্থানীয় হাসপাতালে কিডনি বিক্রি করা যায়। সেখানে গিয়ে বললাম আমিও তা করতে চাই। কয়েক সপ্তাহ পর আমি হাসপাতাল থেকে একটি ফোন কল পাই। সেখানে আমার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপর তারা ইনজেকশন দিয়ে আমাকে অজ্ঞান করে। আমি ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু কোনো উপায় ছিল না।

কিডনি বিক্রি করে আম্মার ২ লাখ ৭০ হাজার আফগানিস (৩১00 ডলার) পেয়েছিলেন। পরিবারের খাবার কেনার জন্য ধার করা টাকা তিনি কিডনি বিক্রির টাকা থেকে শোধ করেন। তিনি বলেন, এক রাতে খেলে আমরা পরের রাতে খেতে পারি না। কিডনি বিক্রির পর নিজেকে মনে হয় অর্ধেক মানুষ। নিজেকে আশাহীন মনে হয়। জীবন যদি এভাবে চলে, আমার মনে হয়, মরে যাব।

টাকার জন্য অঙ্গ বিক্রির কথা প্রায়শই আফগানিস্তানে শোনা যায়। তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার আগে এমনটি হতো। কিন্তু এখন লোকজন উপায় না পেয়ে করছে। টিকে থাকার জন্যে তারা কিছুই পাচ্ছে না বলেই করছে।

বিবিসি কম বয়সী এক মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে, যিনি সাত মাস আগে কিডনি বিক্রি করেছেন। তারও ঋণ পরিশোধের তাগিদ ছিল। ঋণ করে তিনি ভেড়ার পাল কিনেছিলেন। তবে বছর খানেক আগে বন্যায় তার ভেড়াগুলো মারা যায়। এরপর থেকে তার পরিবারের আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়।

কিডনি বিক্রি করে ওই নারী পেয়েছিলেন দুই লাখ ৪০ হাজার আফগানিস (২৭০০ ডলার)। তবে এই অর্থ তার জন্য পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, এখন আমরা আমাদের দুই বছরের কন্যাকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি। যারা আমাদের অর্থ ধার দিয়েছিল, তারা প্রতিদিন আমাদের হয়রানি করে ও বলে যদি পরিশোধ করতে না পারো, তবে তোমাদের মেয়েকে দিয়ে দাও।

তার স্বামী বলেন, আমাদের এই পরিস্থিতিতে আমি খুব লজ্জিত। মাঝে মাঝে মনে হয়, এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।

আফগানিস্তানে বারবারই শোনা যায়, লোকজন তাদের কন্যাসন্তানদের বিক্রি করে দিচ্ছে। নিজামুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি আমার পাঁচ বছর বয়সী কন্যাকে এক লাখ আফগানিসে বিক্রি করে দিয়েছি। এ অর্থ একটি কিডনি বিক্রি করে পাওয়া অর্থের প্রায় অর্ধেক। বলতে গিয়ে নিজাম তার নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলেন এবং তার চোখ ভিজে এলো।

যে মর্যাদা নিয়ে হেরাতে লোকজন বাস করত, ক্ষুধায় তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। স্থানীয় একটি গোষ্ঠীর এক প্রধান আব্দুল গাফফার বলেন, আমরা জানি এটি ইসলামি আইনের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। আমরা আমাদের সন্তানদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছি। কিন্তু অন্য কোনো উপায় নেই।

বিবিসি একটি বাড়িতে চার বছর বয়সী নাজিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ছোট্ট মেয়েটির মুখে হাসির ছাপ। সে তার ১৮ মাস বয়সী ভাই শামশুল্লাহর সঙ্গে খেলছিল। তার বাবা হজরতুল্লাহ বলেন, খাবার কেনার জন্য আমাদের কোনো টাকা নেই। তাই স্থানীয় মসজিদে ঘোষণা দিই যে, আমি আমার কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দিতে চাই।

নাজিয়াকে বিক্রি করা হয়েছে বিয়ের জন্য। ছেলের পরিবার থাকে দক্ষিণের কান্দাহার প্রদেশে। যখন নাজিয়ার ১৪ বছর হবে, তখন তাকে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। মেয়েকে বিক্রি করে হজরতুল্লাহ কিছু অর্থ পেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, এই অর্থের বেশিরভাগই আমি খাবার কেনার জন্য ব্যয় করেছিলাম। ছোট ছেলেটার জন্য ওষুধও কিনতে হয়েছিল। তার দিকে তাকিয়ে দেখুন, পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।

আফগানিস্তানে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ওপর ক্ষুধার কারণে যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, অপুষ্টির হার বিস্ময়করভাবে বেড়ে যাওয়া সেটিই প্রমাণ করে। মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) দেখেছে, দেশজুড়ে তাদের কাছে অপুষ্টির চিকিৎসা নিতে আসার পরিমাণ গত বছরের চেয়ে এই বছর ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। সংস্থাটি বলছে শুধুমাত্র হেরাতেই অপুষ্টি বাড়েনি, বেড়েছে পাশের প্রদেশ ঘর ও বাদঘিসে। দুই প্রদেশে অপুষ্টি বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত।

গত বছর থেকে অসুস্থ শিশুরা বেশি সংখ্যায় এফএমএসে আসছে। শিশুরা একাধিক রোগ নিয়ে এসে ভর্তি হচ্ছে। অমিদ অপুষ্টিতে ভুগছে। সে হার্নিয়া ও সেপসিসে আক্রান্ত। ১৪ মাস বয়সে তার ওজন মাত্র ৪ কেজি। চিকিৎসকরা বলছেন, স্বাভাবিক শিশুর এই বয়সে ৬ দশমিক ৬ কেজি ওজন থাকে। শিশুটি বমি করতে থাকলে তার মা আমনা টাকা ধার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

বিবিসি তালেবানের প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র হামিদুল্লাহ মোতাওয়াকিলের কাছে জানতে চায়, ক্ষুধা পরিস্থিতি ঠেকাতে তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন। হামিদুল্লাহ বলেন, আফগানিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় এমনটি হচ্ছে। আফগান সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে। আমাদের সরকার চেষ্টা করছে চাহিদা কত সেই হিসাব করতে। অনেকে নিজেদের অবস্থা নিয়ে মিথ্যা বলছে। তারা ভাবছে তারা সাহায্য পাবে।

তালিবান কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমরা লোহার খনি ও একটি গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প চালু করতে চাচ্ছি। তবে এটি শিগগিরই শুরু হবে কি না তা নিশ্চিত নয়।

বিবিসিকে লোকজন বলছে, তারা তালিবান সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষুধা ধীর ও নীরব ঘাতক। এর প্রভাব খুব তাড়াতাড়ি দেখা যায় না। পৃথিবীর মনোযোগ থেকে দূরে থাকা আফগানিস্তানের সংকট হয়তো কখনো সামনে আসবে না, কারণ কেউ দেখছেই না।

খবরটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন :