অনলাইন ডেস্ক: নানা টানাপড়েনের পর অবশেষে মাঠ নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। আজ সায়েদাবাদের গোলাপবাগে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির ঢাকার সমাবেশ। তার আগে গত বৃহস্পতিবার ভোরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। এরপর বিএনপি জরুরি বৈঠক করে আনুষ্ঠানিকভাবে নয়াপল্টনের দাবি ছেড়ে গোলাপবাগে সমাবেশ করার কথা জানায়। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের সহযোগিতা চান তারা।
গতকাল দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। অনুমতি পাওয়ার পর গতকাল রাতেই সমাবেশস্থলে জমায়েত হন বিএনপি নেতাকর্মীরা। মাঠে গিয়ে দেখা যায়, জোরেশোরে চলছে মঞ্চ, ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরির কাজ। নেতাকর্মীরা মিছিল-স্লোগানে মাঠ সরগরম করে রাখেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরু হবে। এদিন সরকার পতনে বিএনপি ১০ দফা নতুন কর্মসূচি দেবে। আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত, ইতিমধ্যে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর শুক্রবার বেলা ১১টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি জরুরি বৈঠকে বসে, যাতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন। তারপর বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন খন্দকার মোশাররফ। এই কর্মসূচি সফল করতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে আসা নেতাকর্মীদের ‘গুলি করে হত্যা’, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম থেকে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করে বিএনপি। নয়টি সমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে।
ঢাকার সমাবেশের অনুমতি দেওয়া নিয়ে সরকার শুরু থেকেই ‘গড়িমসি’ করেছে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশের সম্মতি চেয়ে লিখিত চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তা নিয়ে সরকার গড়িমসি করে। বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে গত কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। বিএনপি নয়া পল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ওই সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ।
এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে। এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে।
অন্যদিকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আগের শর্তেই গোলাপবাগে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের হামলার শঙ্কা আছে বলে আমরা মনে করি না। পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য পোশাকে, সাদা পোশাকে কাজ করছেন। অতএব মনে করি, বিএনপির তো আর কোনো চাহিদা থাকার কথা না। তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে, কোনো বিশৃঙ্খলা করবে না।
মাঠ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, তারা রাজধানীর কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে খেলা চলার কারণে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। পুলিশ গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের মতো গতকালও রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা ছিল পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছিল ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি। দিনভর পরিস্থিতি ছিল থমথমে। বিএনপি নেতাকর্মীদের আনাগোনা একেবারে ছিল না। পুলিশ সাধারণ কাউকে নয়াপল্টন সড়ক ব্যবহার করতে দেয়নি। নাইটিঙ্গেল ও ফকিরাপুল মোড় ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ আটকে দেয়। এমনকি নয়াপল্টনের সবকটি গলিও বন্ধ করে দেয়। জনাদশেক লোক স্লোগান দিয়ে নয়াপল্টনে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জামিন মেলেনি ফখরুল-আব্বাসের : বিএনপি সমাবেশের জন্য গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পেলেও জামিন পাননি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। নয়াপল্টনে সংঘর্ষের মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করে শুক্রবার বিকালে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম। বিএনপির এ দুই নেতাকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো আবেদন ছিল না। সে কারণে তাদের এজলাসে হাজির না করে হাজতখানায় রেখেই শুনানি হয়।
ফখরুল ও আব্বাসের পক্ষের জামিন শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারসহ আরও কয়েকজন। রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু, এপিপি আজাদ রহমান ও এপিপি তাপস পাল জামিনের বিরোধিতা করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। ফখরুল ও আব্বাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের প্রতিবাদে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ দেখান। এ সময় সেখানে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।
শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে তাদের আদালতে আনা হয়। তাদের রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। পুলিশ জানায়, গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানির অভিযোগের মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
Leave a Reply