অনলাইন ডেস্ক: মুসলমান বিশ্বাস করে ইহকাল ও পরকাল দুটোই মানুষের জগৎ। ইসলাম দুই জগৎকেই সমৃদ্ধ ও সজ্জিত করতে বলে। দুনিয়া ভুলে আখেরাত বা আখেরাত ভুলে দুনিয়া- এমন ভারসাম্যহীনতা ইসলামের শিক্ষা নয়। পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২০১ নম্বর আয়াতে আলাদাভাবে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য দোয়া শেখানো হয়েছে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বেশিরভাগ সময় এ দোয়া করতেন। (বুখারি : ৬৩৮৯)।
নাস্তিকরা পরকালে বিশ্বাসী নয়, তাই তারা দুনিয়াকে দুনিয়ার বিনিময়ে উপার্জন করে। কিন্তু মুসলমান যেহেতু পরকালের জান্নাত ও জাহান্নামকে বিশ্বাস করে, তাই তারা দুনিয়ার জীবন অতিবাহিত করবে পরকালে সুখ-শান্তি পাওয়ার প্রত্যাশায়। কোনো মুসলমান দুনিয়ার মোহে পড়ে আখেরাত ধ্বংস করতে পারে না। যারা দুনিয়ার লোভে পড়ে আখেরাতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়, তাদের পরকালে ভয়ঙ্কর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আর তাদের দুনিয়াবি শাস্তি হলো দুনিয়াকে অন্বেষণ করবে; কিন্তু দুনিয়া তাদেরকে ধরা দেবে না। এভাবে দুনিয়ামুখী মানুদুনিয়ার কাছে ঘৃণিত হয়।
দুনিয়াদারের দুনিয়া
আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা অলি-বুজুর্গরা দুনিয়াবিমুখ হন। তাদের কাছে সবসময় দুনিয়া নগণ্য হিসেবে উপস্থাপিত হয়। বুজুর্গদের কাছে দুনিয়া পদচুম্বন খেয়ে ধরা দেয়; কিন্তু তারা দুনিয়াকে গ্রহণ করে না। পক্ষান্তরে দুনিয়াদাররা দুনিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে; কিন্তু দুনিয়া তাদেরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। দুনিয়ালোভীরা দুনিয়ার নির্ধারিত অংশ ছাড়া বেশি কিছু অর্জন করতে পারে না। তাদের পার্থিব জীবনে আখেরাতের কোনো ইঙ্গিতই পাওয়া যায় না। এসব দুনিয়াদারকে আল্লাহ তায়ালা অভাবে রাখেন। পার্থিব জীবনে তারা সফলকাম হবে না। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার চিন্তা শুধু আখেরাতই হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার অন্তরে অমুখাপেক্ষিতা সৃষ্টি করে দেবেন, তার বিক্ষিপ্ত বিষয়াদি একত্রিত করে দেবেন এবং দুনিয়া লাঞ্ছিত হয়ে তার কাছে আসবে। আর যার চিন্তা শুধু দুনিয়া হবে আল্লাহ তায়ালা দারিদ্র্যকে তার সামনে রেখে দেবেন। আর তার একত্রিত বিষয়াদিকে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন এবং যা নির্ধারিত তা ছাড়া একটুও বেশি দুনিয়া অর্জন হবে না।’ (তিরমিজি : ২৬৫৩)
দুনিয়ার মোহ দারিদ্র্য বাড়ায়
দুনিয়াদার ধনীরা সম্পদে শান্তির সুঘ্রাণ পায়। তারা বিশাল বিশাল অট্টালিকার স্বপ্ন প্রতিনিয়ত দেখতে পায়। কিন্তু এরপরও দুশ্চিন্তা ও মানসিক যন্ত্রণা তাদের পিছু ছাড়ে না। আকস্মিকগুলো বিপদগ্রস্ত হয়ে তাদের সমুদয় সম্পদ এক নিমেষেই ক্ষয়ে যায়। দুনিয়ার কোনো শক্তি তাদের ক্ষতি পূরণ করতে পারে না। একসময়ের সম্পদশালী পরিবারে হঠাৎ করে অভাবের লাল বাতি জ্বলতে থাকে। দারিদ্র্য তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। এ ছাড়া দুনিয়ামুখীরা সম্পদহারা হয়ে স্বীয় স্ত্রী-সন্তানসহ সব আত্মীয়-স্বজনের কাছে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়।
এই পরিণামের কারণ হলো একমাত্র আখেরাতবিহীন দুনিয়ার মোহ। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য অন্তরকে খালি করে নাও। আমি তোমার অন্তরকে অভাব মুক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমাদের দারিদ্র্যের পথ বন্ধ করে দেব। আর যদি তা না করো, তবে আমি তোমার হাতকে দুনিয়ার ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ (ইবনে মাজাহ : ৪২৪৬)
Leave a Reply