মুফতি আবুল কাসেম,অনলাইন ডেস্ক: পৃথিবীতে মানুষের প্রধান কাজ মহান আল্লাহর ইবাদত করা। এ উদ্দেশ্যেই আমাদের পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষ এবং জিনজাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা যারিয়াত : ৫৬)। তবে ইবাদত কেবল করলেই হবে না; কিছু শর্ত ও নিয়ম মেনে করা জরুরি। আল্লাহর দরবারে বান্দার ইবাদত কবুল বা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তিনটি প্রধান ও মৌলিক শর্ত রয়েছে।
ইখলাস থাকা
ইখলাস মানে একমাত্র আল্লাহকে খুশি ও সন্তুষ্ট করার জন্য ইবাদত করা। ইখলাস যাবতীয় ইবাদতের প্রাণ। প্রাণহীন দেহের যেমন মূল্য নেই, তেমনি ইখলাস ছাড়া ইবাদতেরও দাম নেই। যদি ইবাদতের সঙ্গে মনের অভিপ্রায়, খেয়াল-খুশি ইত্যাদি যুক্ত হয় তাহলে সেটা ইখলাস পরিপন্থি বলে বিবেচিত হবে। সে ইবাদত আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তাদের কেবল এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে কেবল তার দ্বীনকে তারই জন্য ইখলাসপূর্ণ করে।’ (সুরা বাইয়িনা : ৫)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসুল! আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কাজকর্ম, আমার জীবন, আমার মরণ, সবই মহাবিশ্বের পালনকর্তার জন্য।’ (সুরা আনআম : ১৬২)। হাশরের ময়দানে আল্লাহ পাক বড় বড় রিয়াকারকে (লোক-দেখানো ইবাদতকারী) প্রতিদান না দিয়ে বলবেন, তোমরা আমার সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত করোনি, বরং তোমরা তো ইবাদত করেছ মানুষ তোমাদেরকে বড় আবেদ বলার জন্য। আর দুনিয়াতে তা বলা হয়ে গেছে। তেমনি হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, নিয়তে গড়বড় থাকলেও ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায় না। যদিও নিয়তকৃত বিষয়টি অর্জিত হয়।
হজরত উমর (রা.) বলেন, আমি প্রিয়নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘আমলের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের ওপর।’ (বুখারি : ৩৮৯৮)
হালাল-হারাম রক্ষা
একজন মুমিন বান্দাকে আকিদা-বিশ্বাস ও ইবাদতের ক্ষেত্রে যেমন কিছু বিধি-বিধান ও নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়, ঠিক এমনিভাবে তার জীবনচলার যত উপকরণ তাতেও কিছু বিধি-বিধান মেনে চলতে হয়। এর ভেতরে খাবার-দাবারও রয়েছে। খাবারের বিধান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে রাসুলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত।’ (সুরা মুমিনুন : ৫১)।
অনুরূপ হাদিস শরিফে নবীজি (সা.) বলেন, ‘দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত, এলোমেলোকেশী এক লোক আকাশ পানে হাত দারাজ করে দোয়া করে ‘হে প্রভু! হে প্রতিপালক! অথচ তার পানাহার হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় কীভাবে তার দোয়া কবুল হবে?’ (তিরমিজি : ২৯৮৯)। হালাল খাবার খাওয়া এমন মৌলিক বিষয় যে, তা গ্রহণ না করলে জান্নাতেই যাওয়া যাবে না। হাদিস শরিফে এমন কঠোর বাণীও উচ্চারিত হয়েছে।
সুন্নত অনুসরণ
ইবাদত বা আমল কবুল হওয়ার জন্য প্রিয় নবী (সা.)-এর অনুসরণ ও অনুকরণ জরুরি। কোনো মনগড়া পদ্ধতিতে ইবাদত করলে তা কবুল হবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো আর যা থেকে তিনি তোমাদের নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাকো।’ (সুরা হাশর : ৭)।
হাদিস শরিফে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করল, যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত বলে গণ্য হবে।’ (মুসলিম : ৪৩৮৫)।
নবীজি (সা.) প্রতিটি আমলের শুধু তরিকাই বলে দেননি, বরং প্র্যাক্টিক্যালি শিক্ষাও দিয়ে গেছেন। রাসুল (সা.) একটা ইবাদত করতেন আর বলতেন আমি যেভাবে করি তোমরাও সেভাবে করো। যেমন নামাজ সম্পর্কে তাঁর বাণী, ‘আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখো সেভাবে নামাজ পড়ো।’ (বুখারি : ৭২৪৬)। আল্লাহ তায়ালা বিশুদ্ধভাবে আমল করার তওফিক দান করুন।
Leave a Reply