অনলাইন ডেস্ক: মানুষ মাত্রই দুর্বল। জীবনভর লেগে থাকে নানা প্রকার রোগব্যাধি ও অসুস্থতা। মানুষ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়, মৌসুমি জ্বর, সর্দি-কাশি ও নানা প্রকার রোগ শরীরে বাসা বাঁধে। এ মুহূর্তেও অসংখ্য মানুষ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী এবং যন্ত্রণা ও হতাশায় নিমজ্জিত। ডাক্তারের অস্ত্রোপচারের জন্য অন্তহীন অপেক্ষা কিংবা হাসপাতালের বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করে অনেকের জীবন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে আছে অনেক মানুষ। অনেকে মারাও যাচ্ছেন। আমরা যে কতটা দুর্বল হতে পারি, অসুস্থ হলে হঠাৎ করেই এই সত্যের মুখোমুখি হই এবং কখনো এ ব্যাপারে সচেতন বা অবচেতন মনে আমাদের নিরাময় করার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি। মহান আল্লাহর নাম ডেকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি।
মহান আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম ‘আশ-শাফি’, অর্থ যিনি আরোগ্য করেন, আরোগ্যকারী, নিরাময়কারী। এ নামটি পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি, তবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বর্ণনায় এই নামটি এসেছে। তাঁর নিরাময় তাঁর জ্ঞান অনুসারে নিখুঁত এবং তিনিই সেই উৎস, যেখান থেকে সব নিরাময় আসে। শাফি শব্দটি এসেছে ‘শিন-ফা-ইয়া’-এর মূল থেকে, যা দুটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম প্রধান অর্থ নিরাময় ও আরোগ্য এবং দ্বিতীয়টি সন্তুষ্ট করা। রোগব্যাধি আল্লাহর ইচ্ছা ও আদেশেই হয়। রোগ দূর করে আরোগ্যদানকারী তিনিই। অর্থাৎ ওষুধের প্রভাব-প্রতিক্রিয়ায় রোগ দূর করার ক্ষমতা তাঁরই নির্দেশে হয়। তাঁর নির্দেশ ছাড়া ওষুধে কোনো কাজ দেয় না। আলেমরা বলেন, ‘আশ-শাফি’ নামের অর্থ হলো মহান আল্লাহ মানুষের শরীরের রোগের নিরাময়কারী এবং তিনি অন্তরের রোগের নিরাময়কারী, যেমনÑরাগ, হিংসা এবং ঘৃণা।
‘শিফা’ শব্দটি রোগ বা ব্যাধির নিরাময় অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন-মধু, কালোজিরার মতো খাবার এবং কাপিং থেরাপি বা হিজামার মতো অনুশীলন শিফার কাজ করে। পবিত্র কুরআনও শিফা বা রোগ নিরাময়ে কাজ করে। একমাত্র আল্লাহই ‘আশ-শাফি’, চূড়ান্ত আরোগ্যদাতা এবং সব রোগ নিরাময়ের উৎস। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হতো তখন রাসুল (সা.) তাঁর ডান হাত রোগীর শরীরে বুলাতেন এবং বলতেন-‘আজহাবিল বা’সা রব্বান নাসি, ওয়াশফি আনতাশ শাফি, লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাআন লা ইউগাদিরু সুকমা’, অর্থ : ‘হে রব, এ রোগ দূর করুন এবং আরোগ্য দান করুন, আপনিই আরোগ্যদানকারী। আপনার আরোগ্য ব্যতীত কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য চাই, যা বাকি রাখে না কোনো রোগ।’ (সহিহ বুখারি)
তাই অসুস্থ হলে চিকিৎসা করুন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করুন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো রোগ নাজিল করেননি, যার ওষুধ সৃষ্টি করেননি’ (বুখারি : ৫৬৭৮)। অর্থাৎ আল্লাহ রোগ নাজিল করেছেন এবং প্রত্যেক রোগের জন্য নিরাময় আছে। তাই অসুস্থতার চিকিৎসা করুন, কিন্তু হারাম কিছু ব্যবহার করবেন না। একবার এক বেদুইন বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের কি রোগের চিকিৎসা করা উচিত নয়?’ তিনি বললেন, ‘রোগের চিকিৎসা করো, কারণ আল্লাহ আরোগ্য ছাড়া কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, একটি রোগ ছাড়া।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সেটা কী?’ তিনি বললেন, ‘বার্ধক্য’। (সুনান তিরমিজি)
কেন মানুষ অসুস্থ হয় এবং কেন মানুষ দ্রুত সুস্থতা লাভ করেন না? গুনাহ মুছে ফেলার জন্য আল্লাহ মানুষকে অসুস্থ করে দিতে পারেন। হতে পারে একজন ব্যক্তি জান্নাতের উঁচু স্থানে যাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করে, যা শুধু তার কর্ম দ্বারা অর্জন করা সম্ভব নয়। অথবা অসুস্থতা শাস্তিও হতে পারে। দায়িত্বজ্ঞানহীন জীবনধারার জন্যও মানুষ অসুস্থ হতে পারে। মানুষের যে কোনো ক্ষমতা নেই, সেটা উপলব্ধি করার জন্যও মানুষকে অসুস্থ করা হয়, যাতে মানুষ অহংকারী ও উদ্ধত না হয়। আল্লাহ আপনাকে অসুস্থ করে তোলেন যাতে আপনি তাঁর কাছে ফিরে যান। আপনার ধৈর্য ও সন্তুষ্টি পরীক্ষা করার জন্য তিনি আপনাকে অসুস্থ করে তোলেন।
কীভাবে আল্লাহর ‘আশ-শাফি’ নাম থেকে উপকৃত হতে পারি? মনেপ্রাণে বিশ্বাস করুন যে, আল্লাহই একমাত্র আরোগ্যকারী। জেনে রাখুন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আরোগ্য করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা অসুস্থতা ও মৃত্যু নির্ধারণ করেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর যদি আল্লাহ তোমাকে কষ্ট দেন, তবে তিনি ছাড়া কেউ তা দূর করতে পারে না এবং যদি তিনি তোমাকে কল্যাণ স্পর্শ করেন, তবে তিনি সবকিছু করতে সক্ষম’(সুরা আনআম, আয়াত : ১৭)। যেমন-হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেছেন, ‘যখন আমি অসুস্থ হই, তিনিই আমাকে সুস্থ করেন’ (সুরা শুয়ারা : ৮০)। একমাত্র আল্লাহ আপনার শরীর, মন এবং হৃদয়ের প্রতিটি রোগ নিরাময় করতে পারেন, যে উপায়ে তিনি উপযুক্ত মনে করেন, এই সত্যটি জানা এবং জীবনযাপন করা আপনার বিশ্বাস বা ঈমানের অংশ। তাই প্রথমে এবং সবার আগে তাঁর ওপর আস্থা রাখুন এবং তারপরে বৈধ উপায়ে চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করুন। কখনোই ওষুধ বা অন্যান্য উপায়ে নিরাময়কে দায়ী করবেন না, কারণ আশ-শাফির হুকুম ছাড়া কিছু ঘটে না। যেকোনো ওষুধ সেবনের সময় বিসমিল্লাহ বলতে ভুলবেন না। মনে রাখতে হবে যে, ‘আশ-শাফি’ ওষুধ দিয়ে বা ওষুধ ছাড়াই আরোগ্য করতে পারেন। এমনকি সবচেয়ে জটিল ক্ষেত্রেও নিরাময় করতে পারেন।
কুরআন দ্বারা জীবনযাপন করুন। সব ধরনের রোগ এবং সমস্যার নিরাময় পাওয়া যায় কুরআনে। ‘আশ-শাফি’ আমাদেরকে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, কুরআনের বাণীগুলো একটি শিফা। তিনি বলেন, ‘আমি অবতীর্ণ করি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য আরোগ্য ও রহমত’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮২)। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অসুস্থদের দেখতে যান। এর জন্য প্রচুর পুরস্কার রয়েছে। শিশুদেরকেও এটা শেখান। অসুস্থ হলে আল্লাহকে ‘আশ-শাফি’ নামে ডাকুন। জেনে রাখবেন, তিনি আইয়ুব (আ.)-এর স্বাস্থ্য ও শরীরকে যেভাবে পুনরুদ্ধার করেছেন সেভাবে তিনি আপনাকে বা আপনার প্রিয়জনের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিতে পারেন। ডাক্তার দেখানোর মতো তাঁকে ডাকার জন্য কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয় না। সুস্থ ও অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে ডাকুন। গুনাহমুক্ত জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন। মহান আল্লাহ তওফিক দিন।
Leave a Reply